ভারতীয় ক্রিকেটই শুধু নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেই একটা বর্ণাঢ্য যুগের অবসান ঘটলো। সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ধোনি অধিনায়ক হিসেবে কেবল ভারতেরই নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও ছিলেন অন্যতম সেরা। অধিনায়ক হিসেবে তিনি সবগুলো আইসিসি ট্রফিই জিতেছেন। বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি – কোনোটাই বাদ ছিল না। তিনি টেস্ট র্যাংকিংয়েও ভারতকে তুলেছিলেন এক নম্বরে।
তবে, সব কিছুর এবার ইতি ঘটলো। গেল ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দলে তিনি ছিলেন। সেবারে খেলা সেমিফাইনালটাই তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে রইলো। সেমিফাইনালের সেই লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতকে জেতাতে না পারলেও আউট হওয়ার আগে করেন ৫০ রান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে দেওয়া সংক্ষিপ্ত এক পোস্টে তিনি নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে ভালবাসা ও সমর্থন যোগানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাকে (আজ) ভারতীয় সময় সাতটা বেজে ২৯ মিনিট থেকে অবসর প্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।’
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই ধোনির ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক রকমের জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এমনকি বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও তিনি জায়গা হারান। সেটাই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষের শুরু।
এবার আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হল। ক্যারিয়ারে ৯০ টি টেস্ট, ৩৫০ টি ওয়ানডে আর ৯৮ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১৭ হাজারের ওপর আন্তর্জাতিক রান করেছেন, সেঞ্চুরি আছে ১৬ টি, ডিসমিসাল ৮০০’র ওপরে। মানে যেকোনো বিবেচনাতেই তিনি কিংবদন্তি। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে ক্যারিয়ার শুরু তাঁর। শেষ হল ১৬ বছর পর, যখন ধোনির বয়স ৩৯।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও ধোনি চালিয়ে যাবেন ঘরোয়া ক্রিকেট। আসছে সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আসর। সেখানে ধোনি খেলবেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে।
তিনি ভিন্ন রকমের একজন ক্রিকেটার ছিলেন। তাঁর ধরণটা ঠিক ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কৃতির সাথে যায় না। যখন ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, দেখতে ছিলেন বখাটেদের মত। লম্বা লাল রঙা চুল, বাইক পাগল। মাঠেই বাইক নিয়ে নেমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছেন।
এমন একজন ‘আউটসাইডার’কে হজম করতে বেগ পোহাতে হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। যখন অধিনায়ক হলেন বিরোধীর সংখ্যা নেহায়েৎ কম ছিল না। নির্বাচকদের সবাইও একমত ছিলেন না।
এরপর শুরু হল আসল ‘খেলা’। একের পর এক ট্রফি জয় যেমন শুরু করলেন, তেমনি মাঠের বাইরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বাউন্সারের জবাবে পুল করে ছক্কা হাঁকাতে লাগলেন। ভোল পাল্টে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের। ভারত, এখন যে অজেয় এক দলে পরিণত হয়েছে, তাঁর মূল কারিগর তো এই ধোনিই!