করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত পুরো ভারত। গতকাল ভারতে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৩১ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৮০৬ জন। একদিনে আক্রান্তের দিক থেকে আগের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে ভারত৷ বর্তমানে দেশটির অবস্থা বেহাল দশা।
মৃত মানুষের সৎকারের জন্যও দিতে হচ্ছে লম্বা সিরিয়াল। ইতোমধ্যেই প্রতিবেশি দেশগুলো বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নিয়ে আইপিএল কর্তৃপক্ষ কোনো রকমের সিদ্ধান্ত নেয়নি। করোনার এই ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে দিয়েই চলমান রয়েছে এবারের আসরের আইপিএল।
ভারতের এমন ভয়াবহ অবস্থায় ইতিমধ্যেই আইপিএল ছাড়তে শুরু করেছেন বেশ কিছু দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়েরা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রাজস্থান রয়্যালসের অজি পেসার অ্যান্ড্রু টাই দেশে ফিরে যাবার পর আজ ২৬ এপ্রিল (সোমবার) সকালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর দুই অজি খেলোয়াড় অ্যাডাম জাম্পা ও কেন রিচার্ডসন আইপিএলের মাঝ পথেই ফিরে যাচ্ছেন দেশে। তারা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও মূলত ভারতের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কারণেই তারা দেশে ফেরত যাচ্ছেন।
গতকাল রাতেই দিল্লী ক্যাপিটালসের ম্যাচ শেষে অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এক টুইট বার্তায় বলেন যে, করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরিবারের পাশে থাকতেই তিনি মাঝ পথে আইপিএল ছেড়ে দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মোট চার ক্রিকেটারের আইপিএল ছাড়ার খবর এলেও গুঞ্জন রয়েছে বিদেশি আরো বেশ কিছু ক্রিকেটার মাঝ পথেই দেশে ফেরত যেতে পারেন।
যারা এর মধ্যেই আইপিএল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাদের সিদ্ধান্তকে পূর্ন সমর্থন দিয়ে তাদের পাশে থেকেছে। এমতাবস্থায় আইপিএলের এবারের আসরের বাকি ম্যাচ গুলো চলবে কিনা বা কর্তৃপক্ষ কি ভাবছে এ ব্যাপারে সেদিকে তাকিয়ে আছে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
ইতিমধ্যেই সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ভারতে করোনার এমন পরিস্থিতিতে আইপিএল চলা উচিৎ কি না সেই প্রশ্ন ছুড়েছেন টুইটারে। তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভীতিকর। তাঁদের জন্য শুভকামনা। আইপিএল চলছে। বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ? নাকি প্রতি রাতে একটু মন ঘুরানোর উপায়? যাই হোক, খেলোয়াড়দের প্রতিও আমার শুভেচ্ছা রইলো।’
সাবেক পাকিস্তানি স্পিডস্টার শোয়েব আখতার অবশ্য মনে করেন আইপিএল-পিএসএল সহ সব ধরণের ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরই এখন বন্ধ থাকা দরকার। তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে এখন একটা মহামারী চলছে। এই সময় জুনে আবার পিএসএল শুরু করা উচিৎ নয়। আইপিএল চালিয়ে নেওয়ার জন্যও এটা সঠিক সময় নয়। মানুষের জীবন এর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে আইপিএল কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বেশ বড় অংশের ক্রিকেট সমর্থকরা। বেশিরভাগই চাচ্ছেন যে ভারতের এমন পরিস্থিতিতে আইপিএল স্থগিত করতে৷
তবে, এখন পর্যন্ত বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) আইপিএল স্থগিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। সংস্থাটির সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন, সূচী অনুযায়ী চলবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। দ্য হিন্দুকে বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘টুর্নামেন্ট স্থগিত করার ব্যাপারে কোনো আলাপ হয়নি। আমরা খেলোয়াড়দের সুরক্ষার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। কেউ যদি নিজেদের পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়ায় তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা সম্মান রাখছি ও প্রয়োজনমত তাঁকে সাহায্য করছি।’
ভারতের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কেন হচ্ছে আইপিএল? মানুষের কি এখন আনন্দ বিনোদন নিয়ে ভাববার আদৌ সময় আছে? – এমন প্রশ্ন তাই প্রকাশ্যেই উঠছে। আইপিএল পড়েছে বেশ সমালোচনার মুখে। এর মধ্যেই ভারতের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সহ বেশ কিছু গণমাধ্যম আইপিএলের খবর ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে।
গত তিন দিনে ভারতের সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের বেশি! প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। তবুও চলছে আইপিএল! সব সমালোচনা ছাপিয়ে গভর্নিং কমিটি জানিয়েছে স্থগিত হচ্ছে না আইপিএল। কারণ কঠোর ভাবেই নাকি বায়োবাবল মানা হচ্ছে। কারণ অনেকের মতেই নাকি এই অবস্থায় মানুষকে কিছুটা বিনোদন দিতে পারছে আইপিএল।
এমন মত দিয়েছেন রিকি পন্টিং। দিল্লী ক্যাপিটালসের এই কোচ বলেন, ‘বাইরের অবস্থা খুবই সঙিন। তবে, এই দেশে আমরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরাপদে আছি। সকালের নাস্তার টেবিলে রোজই আমার দলের সবার সাথে এই ব্যাপারে কথা হচ্ছে। এই দেশটা এখন যে অবস্থায় আছে – তাতে ক্রিকেট অনেক আনন্দ এনে দিতে পারে।’
সত্যিই, আইপিএল কি পারবে কোভিডের শোক কমাতে?