দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দুই দিন পালেকেল্লের উইকেট ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কথা বললেও তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই বাউন্সের সাথে টার্ন পেয়েছেন দুই দলের স্পিনাররাই। তৃতীয় দিনে রান হয়েছে ২৯২ এবং উইকেট পড়েছে ১৩ টি। এর মধ্যে ১০ টিই নিয়েছেন স্পিনাররা। তবে স্পিনারদের রাজত্বের দিনে এখনো এই টেস্টে চালকের আসনে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে ১৫ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। শেষ অবধি সংগ্রহ করে ১৭ রান। তবে শেষ বিকালটা নিরাপদে কাটিয়ে দিয়ে তৃতীয় দিন শেষে ৮ উইকেটে হাতে রেখে ২৫৯ রানের লিড নিয়েছে স্বাগতিকরা।
এর আগে দিনের শুরুতে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস ঘোষণা করার পর ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দিনের প্রথম সেশন থেকেই দারুণ টার্ন পেতে থাকেন শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা। তাই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেকটা কঠিনই ছিলো। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসের মতো একটা আত্ববিশ্বাসী শুরুর প্রয়োজন ছিল খুব। দুর্দান্ত সব শটের পসরা সাজিয়ে কাঙ্খিত সেই শুরুই এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
তামিমের সহজাত ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৯৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম সেশনের পুরোটা সময় দাপট দেখালেও স্বস্তি নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম শেসনের শেষ দুই ওভারে ওপেনার সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায় বাংলাদেশ।
সাইফ হাসানের ব্যাট থেকে আসে ক্যারিয়ার সেরা ২৫ রান এবং নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। পর পর দুই উইকেট হারিয়ে ৯৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় শেসনের শুরুতেও আধিপত্য ধরে রাখে বাংলাদেশ।
অধিনায়ক মুমিনুল হককে সাথে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করে সাবলীল ভাবে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু আগের ম্যাচের মতোই নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হয়ে সেঞ্চুরি মিস করেন এই ওপেনার। তামিম ফিরে যান ৯২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে।
তামিমের বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের দেখে শুনে খেলে চতুর্থ উইকেটে মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম ৬৩ রান যোগ করলেও এর পরই ধস নামে বাংলাদেশের ইনিংসে। একে একে ফিরে যান মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস। মুমিনুল হক করেন ৪৯ রান, আর মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান।
এরপর দ্রুত বাকি উইকেট হারিয়ে ২৫১ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা লিড পায় ২৪২ রানের। শ্রীলঙ্কার বোলারদের পক্ষে ছয়টি উইকেট শিকার করেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা। এছাড়া মেন্ডিস ও লাকমল নেন ২ টি করে উইকেট।
এর আগে দিনের শুরুতে ৪৬৯ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা আর মাত্র ২৪ রান যোগ করে ৭ উইকেটে ৪৯৩ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। তৃতীয় দিনের শুরুতে শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে একটি উইকেট। ৩৩ রান করে রমেশ মেন্ডিস ফিরে যান তাসকিন আহমেদের চতুর্থ শিকার হয়ে। ডিকওয়েলা অপরাজিত থাকেন ৭৭ রান করে।
বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ১২৭ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন এই পেসার। শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা না করলে হয়তো ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেতেন এই পেসার। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয় দিন শেষে)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৪৯৩/৭(ডি.) (ওভার: ১৫৫.৫; করুনারত্নে- ১১৪, থিরিমান্নে- ১৪০*, ফার্নান্দো- ৮১, ম্যাথুস- ৫, সিলভা- ২, নাশাঙ্কা- ৩০, ডিকওয়েলা- ৭৭*, মেন্ডিস- ৩৩; শরিফুল- ২৯-৬-৯১-১, তাসকিন- ৩৪.২-৭-১২৭-৪, তাইজুল- ৩৮-৭-৮৩-১, মেহেদি- ৩৬-৭-১১৮-১)
ও দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭/২ (ওভার: ৭; থিরিমান্নে- ২, করুনারত্নে- ১৩*, ম্যাথুস- ১; মিরাজ- ৪-২-৭-১, তাইজুল- ২-১-২-১)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৫১/১০ (ওভার: ৮৩; তামিম- ৯২, সাইফ- ২৫, শান্ত- ০, মুমিনুল- ৪৯, মুশফিক- ৪০, লিটন-৮, মিরাজ- ১৬, তাইজুল- ৯; জয়াবিক্রমা- ৩২-৭-৯২-৬, মেন্ডিস- ৩১-৭-৮৬-২, লাকমল- ১০-০-৩০-২)