যেখানে বাংলাদেশ দুইশোর উপর রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল মাত্র এক ম্যাচে। সেখানে শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ৪৩৭ রানের লক্ষ্যটা তো ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছয় সেশন বা ১৫০ ওভার ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করাটাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ পঞ্চম দিনে নিয়ে গিয়ে অন্তত লড়াইটা করা।
আলোকস্বল্পতায় চতুর্থ দিনের খেলা ১২ ওভার বাকি থাকতেই বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ম্যাচের ফলাফল পঞ্চম দিনে নির্ধারণ হলেও সেখানে পরাজয় চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে। পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬০ রান এবং শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন পাঁচ উইকেট। বিরাট কোনো জুটি না গড়লে পরজায় এখন কেবলই বাংলাদেশের জন্য সময়ের ব্যাপার।
৪৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছে ১৭৭ রান। লিটন দাস ১৪ রান করে ও মেহেদি হাসান মিরাজ ৪ রান করে অপরাজিত রয়েছেন।
তবে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। আগের তিন ইনিংসের মত আজও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তামিম ইকবাল। তবে আজ আর ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ওপেনার। রমেশ মেন্ডিসের বলে ২৬ বলে ২৪ রান করে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তামিম। এরপর ভালো শুরু করেও সেটা ধরে রাখতে পারেননি আরেক ওপেনার সাইফ হাসান।
তামিমের মতই আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ৪৬ বলে ৩৪ রান করে জয়াবিক্রমার প্রথম শিকারে পরিণত হন সাইফ হাসান। দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকও হাটেন একই পথে। ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান এবং মুমিনুল হক ফিরে যান ৩২ রান করে।
১৩৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রান যোগ করার পর আগের ব্যাটসম্যানদের মতই উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। ৪০ রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে।
এর আগে দিনের শুরুতে ২ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা শুরু থেকেই দ্রুত রান তুলতে থাকে। তবে ছয় দিয়ে দিন শুরু করা ম্যাথুস বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। তাইজুল ইসলামের দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি ফিরে যান ১২ রান করে। তাইজুলের বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে শর্ট লেগে ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি চৌধুরি রাব্বি।
তবে তাতেও থামানো যায়নি শ্রীলঙ্কার রানের চাকা। চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৭৫ বলে ৭৩ রান যোগ করেন দ্বিমুথ করুনারত্নে ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। এই জুটি থামাতে অনিয়মিত বোলার সাইফ হাসানকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। করুনারত্নেকে ফিরিয়ে দিয়ে আস্থার প্রতিদান দেন এই স্পিনার। আগের দুই ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করার পর এবার শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক থামেন হাফসেঞ্চুরি করার পরই।
৭৮ বলে ৬৬ রান করে দ্বিমুথ করুনারত্নে বিদায় নেওয়ার পর ফিরে যান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও। সিলভার ব্যাট থেকে আসে ৫২ বলে ৪১ রান। এরপর ২৪ রান করা পাথুম নিশাঙ্কা তাইজুলের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে গেলে ৬ উইকেটে ১৭২ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনে ৫ উইকেট হারালেও ৩২ ওভারে ১৫৫ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে আক্রমণাত্মক ব্যাট করতে গিয়ে দ্রুত তিন উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ১৯৪ রানে নমব উইকেট হারানোর পরই ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। এই সেশনে মেন্ডিস ও লাকমলের উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিয়ারে অষ্টম বারের মত পাঁচ উইকেট পান তাইজুল ইসলাম।
এছাড়া দুটি উইকেট শিকার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আর প্রথম ইনিংসে চার উইকেট পাওয়া তাসকিন আহমেদ ও সাইফ হাসান পান একটি করে উইকেট।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর: (চতুর্থ দিন শেষে)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৪৯৩/৭ (ডি.) (ওভার: ১৫৫.৫; করুনারত্নে- ১১৪, থিরিমান্নে- ১৪০*, ফার্নান্দো- ৮১, ম্যাথুস- ৫, সিলভা- ২, নাশাঙ্কা- ৩০, ডিকওয়েলা- ৭৭*, মেন্ডিস- ৩৩) (শরিফুল- ২৯-৬-৯১-১, তাসকিন- ৩৪.২-৭-১২৭-৪, তাইজুল- ৩৮-৭-৮৩-১, মেহেদি- ৩৬-৭-১১৮-১)
ও দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯৪/৯ (ডি.) (ওভার: ৪২.২; থিরিমান্নে- ২, করুনারত্নে- ৬৬, ম্যাথুস- ১২, ফার্নান্দো- ১, সিলভা- ৪১, নিশাঙ্কা- ২৪, ডিকওয়েলা- ২৪, মেন্ডিস- ৮, লাকমল- ১২, জয়াবিক্রমা- ৩) (মিরাজ- ১৪-৩-৬৬-২, তাইজুল- ১৯.২-২-৭২-৫, তাসকিন- ৪-০-২৬-১, সাইফ- ৪-০-২২-১)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৫১/১০ (ওভার: ৮৩; তামিম- ৯২, সাইফ- ২৫, শান্ত- ০, মুমিনুল- ৪৯, মুশফিক- ৪০, লিটন-৮, মিরাজ- ১৬, তাইজুল- ৯) (জয়াবিক্রমা- ৩২-৭-৯২-৬, মেন্ডিস- ৩১-৭-৮৬-২, লাকমল- ১০-০-৩০-২)
ও দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭৭/৫ (ওভার: ৪৮; তামিম- ২৪, সাইফ- ৩৪, নাজমুল- ২৬, মুমিনুল- ৩২, মুশফিকুর- ৪০, লিটন- ১৪, মিরাজ- ৪) (মেন্ডিস- ২০-০-৮৬-৩, জয়াবিক্রমা- ২০-৫-৫৮-২০)