শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এমন কি ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেললেও টেস্ট সিরিজে উপেক্ষিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। তাই টেস্ট দলে নিজের জায়গা ফিরে পেতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি। সেই প্রস্তুতির জন্যই অনুশীলনে আবারো নিয়মিত বল হাতে দেখা যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে।
বোলার হিসাবেই নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই আট উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত কয়েক সিরিজে তাকে বল হাতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ব্যাট হাতে বিবর্ণ ছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
তাই গত বছর পাকিস্তানের সাথে সিরিজ শেষে টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে যেন ভাবেন তিনি। এমনকি টেস্টের চুক্তি থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সাকিব আল হাসান চোট পেলে বিকল্প হিসাবে তাকে ভাবা হয়েছিল।
এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন সাকিবের পরিবর্তে মাহমুদউল্লাহ খেলুক। কারণ বোলিং করতে হবে। কিন্তু ইনজুরির কারণে তখন মাহমুদউল্লাহ বোলিং করার অবস্থায় ছিলো না। তাই তাকে আর স্কোয়াডে ফেরানো হয়নি।
এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেললেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাকে বিবেচনা করা হয়নি। কারণ সে বল করতে পারবে কিনা এটা নিশ্চিত ছিলো না। তাই সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসাবে শুভাগত হোমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
তবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের ২১ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণার আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু তার মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে শ্রীলঙ্কায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা যাবে না দেখে শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি ক্রিকবাজকে নিশ্চিত করেছে বিসিবির এক সূত্র।
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য ২১ সদস্যের স্কোয়াড চূড়ান্ত করার আগে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছিল, তবে সমস্যা হলো আপনি সিনিয়র একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে গিয়ে একাদশের বাইরে রাখতে পারবেন না।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেহেতু চোটে ছিলেন, তাই তার বোলিং করা নিয়ে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী তখন বলেছিলেন সে বল করবে কিনা এটা সম্পূর্ন তার বিষয়। সে ব্যথা অনুভব না করলে বল করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘দেখুন নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগেই সে পুনর্বাসন কর্মসূচি শেষ করেছিল। তবে তিনি সেখানে বোলিং করেননি। আমরা মনে করি যে তিনি বল করতে পারবেন কিনা সেটা বিচার করার সেরা ব্যক্ত সেই। সে যদি কোন ব্যথা অনুভব না করে তবে তিনি সব সময় বল করতে পারেন।
গত সিরিজে রাসেল ডোমিঙ্গোর অনুপস্তিতিতে টেস্ট স্কোয়াডের ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করা কোচ মিজানুর রহমান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে জানিয়েছেন অস্বস্তিতে নেই তিনি। এই কোচ বিশ্বাস করেন মাহমুদউল্লাহকে বোলার হিসাবে সবাই যে ভাবে মূল্যায়ন করে সে তার চেয়েও ভাল বোলার।
তিনি বলেন, ‘নিজের বোলিং নিয়ে মোটেই অস্বস্তিতে নেই মাহমুদউল্লাহ এবং সে এটা উপভোগ করছে। সে ভাল লাইনে বোলিং করছিলো এবং সব ঠিক ছিল। আমরা সবাই জানি সময়ের সাথে সাথে সে ব্যাটসম্যান হিসাবে পরিণত হয়েছিল, সে অফ স্পিন বোলিং করতে পারে। তবে সত্যি বলতে আমি মনে করি আমরা তাকে যে ভাবে মূল্যায়ন করি সে তার চেয়ে ভাল বোলার।’
আর জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন যেন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মাহমুদউল্লাহ বোলিং শুরু করাতে। বাশার মনে করেন মাহমুদউল্লাহ পার্ট টাইম বোলারের থেকেও বেশি বল করতে পারেন। তাই দলের ভালো বিকল্প হতে পারেন তিনি।
বাশার বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহর কিছুটা ইনজুরি ছিল তবে এখন সে সুস্থ হয়ে বোলিং শুরু করেছে এবং এটি খুব সুসংবাদ যে আমাদের অলরাউন্ডারের আরো একটি বিকল্প বের হলো। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট বের করার অস্বাভাবি দক্ষতা সে অর্জন করেছে। আমার কাছে মনে হয় সে এমন একজন বোলার যে পার্ট টাইম বোলারের থেকে বেশি ওভারের বেশি বোলিং করতে পারেন।’
– ক্রিকবাজ অবলম্বনে