বয়স ৩০ পার হয়ে যাওয়ার পর দলে অভিষেক হওয়া, পারফর্ম করা, বাদ পড়ে আবার ফেরা ও পারফর্ম করা পাকিস্তান ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়।
কিছু ক্রিকেটার এখন প্রায় ৪০ বয়স হয়ে যাওয়ার পরও পারফরম করছেন পাকিস্তান ক্রিকেটে। কিন্তু তাঁদের সবাই নিয়মিত পারফর্ম করে দলে থাকতে পারেননা। তার মধ্যে আবিদ আলী ব্যাতিক্রম। ৩১ বছর বয়সে অভিষেক ম্যাচেই ওয়ানডে ও টেস্টে শতক করার পর নিয়মিতই দলে পারফর্ম করছেন, আবার রেকর্ডও করছেন।
তিনি প্রথম শিরোনামে আসেন ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করার পর। সেই বছরেই আরো বড় শিরোনামের কারণ হন ২০১৯ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে সুযোগ পেয়ে। পরে অবশ্য আসিফ আলী শেষ সময়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দল থেকে বাদ পড়েন।
সেই বছর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেও সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেক সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ড গড়েন। আবার চলমান জিম্বাবুয়ে টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন। কিছু কিছু ফুল আছে অনেক দেরিতে ফুটলেও তার সুবাস অনেকদিন থাকে। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য তেমনই এক ফুল হলেন আবিদ আলী।
চলমান পাকিস্তান জিম্বাবুয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে হারারেতে মন্থর উইকেট প্রায় পাঁচ সেশন ব্যাটিং করে ৪০৭ বল খেলে ২১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন আবিদ আলী। ক্যারিয়ার সেরা খেলার পথে ২৯ টি চার মারেন এই ডানহাতি ওপেনার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের হয়ে কোন ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ রান এটি। এর আগে অবশ্য আরো দুইজন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেন।
এই টেস্টে তাবিশ খানের ৩৬ বছর বয়সে এসে অভিষেক, নোমান আলীর ঝড়ো ৯৭ রানের ইনিংস খেলে শতক করার ৩ রানের আক্ষেপ এসব শিরোনামে থাকলেও পাকিস্তানের ইনিংস বড় করার ক্ষেত্রে মূল কাজ কিন্তু আবিদ আলীই করেছেন। তার এই ধরে খেলার সামর্থ্য, টিকে থাকা এসবই অন্যান্য ক্রিকেটার থেকে তাকে আলাদা করে। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের সময় থেকেই তিনি ধারাবাহিক পারফর্মার।
তার খেলার ধরণ, মানসিকতা, ব্যাটিং স্টাইল এই সব কিছু বিবেচনায় তাকে রেড বল স্পেশালিষ্টই মনে করা হতো। তার ব্যাটিং ধরনটা কিছুটা ‘ওল্ড স্কুল’ টাইপ, অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকফুটে ব্যাটিং করে অফ সাইডে খেলতে পছন্দ করে। তবে তার ব্যাটিং এ একটা সলিডিটি আছে যার কারণে লম্বা সময় ব্যাট করে ইনিংসের হাল ধরতে পারেন। একজন ওপেনার হিসেবে বেশি স্ট্রোক না খেলে তিনি অন্য ব্যাটসম্যানদের রান করার সুযোগ দেওয়ার জন্য নিজে অ্যানকর রোল প্লে করে ব্যাটিং করেন আবিদ আলী।
শুরুতে ইমাম উল হক, শান মাসুদ, মোহাম্মদ সামি টেস্ট দলে নিয়মিত থাকায় তার জায়গা নিয়ে সংশয় ছিলো। তবে ইমাম উল হকের ওয়ানডে ফর্ম টেস্ট ক্রিকেটে আনতে ব্যার্থ হওয়ায় আবিদ আলীর সুযোগ হয় ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে।
সেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে অভিষেকেই ১৭৪ রানের ইনিংসসহ দুই টেস্টের সিরিজে তিন ইনিংসে ৩২১ রান করে আবিদ আলী। সেই টেস্ট সিরিজে অভিষেকে টানা দুই টেস্টে ১০০ করেও রেকর্ডবুকে নিজের নাম লেখান।
আবার গত বছর ইংল্যান্ড পাকিস্তান – ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের ২য় টেস্টে শেষ দিনে প্রায় ৫০ ওভার ব্যাটিং করে পাকিস্তানের নিশ্চিত হার থেকে উদ্ধার করেন।
লাহোরে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটারের অভিষেক ২০০৭ সালে কোয়াদে আজম ট্রফিতে। অনেক ভালো ক্রিকেটারদের প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজ শহরের দলে সুযোগ না পেয়ে বেশিরভাগ সময়ে খেলেছেন ইসলামাবাদ ও বালুচিস্তানের হয়ে। ১ যুগ ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ১০ হাজার রান করার পর ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ৫ ম্যাচের ওয়ানডে দলে সুযোগ হয়।
অভিষেকে সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপে হঠাৎ সুযোগ, আবার বাদ পড়া, আবার দলে ডাক পেয়ে পারফর্ম করা এসব মিলিয়ে ৩৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি ওপেনার তার ফুলের সুবাস এখনো ছড়াচ্ছেই। ওয়ানডে দলে স্কোয়াডে থেকে নিয়মিত একাদশে না সুযোগ পেলেও এখন পর্যন্ত ১২ টেস্টে ৪৯.৬৫ গড়ে রান করা আবিদ আলী টেস্ট দলের অটোমাটিক চয়েজ। এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১৯ ম্যাচ খেলে ৩৮ গড়ে ৭৬৭৭ রান আর ১১২ ম্যাচ লিস্ট এ তে খেলে ৩৯ গড়ে ৩৭০৬ রান।
বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা – সুযোগ পেলেই কথাটা প্রমাণ করেন আবিদ আলী। ক্রিকেটে এমন দৃষ্টান্ত রোজ রোজ দেখা যায় না। তাই আবিদ আলীর জীবনটাকে চাইলে অনুপ্রেরণা হিসেবেও দেখা যায়।