ওভার স্পিনের বদৌলতে বরুণের কাব্যিক প্রত্যাবর্তন

বরুনের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনকে পুণর্জন্ম বললে মন্দ হয় না। নিজের সত্ত্বার বিপরীতে যেয়ে নতুন কৌশল শেখা মোটেই সহজ নয়। আদতেই বরুনের ফিরে আসাটা ক্রিকেট পটের সুন্দরতম নৈবেদ্য।

কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন ভারতীয় ঘূর্ণি-বাজ বরুণ চক্রবর্তী। করে বসেন ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্স। তেত্রিশ বছর বয়সী রহস্যে ঘেরা এই লেগির অস্ত্রাগারে রয়েছে এখন ওভার স্পিনের মতো সাংঘাতিক এক কৌশল।

পাঠকের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি, ওভার স্পিনে বলের রোটেশনটা থাকে সামনের দিকে। ফলে বল বাতাসে থাকাকালে নিচের দিকে কিছুটা ফোর্স অনুভব করে। যা বলকে শার্প টার্নের আগে আচানক বাউন্স করতে সাহায্য করে।

বরুনের ওভার স্পিন যাত্রার শুরুটা হয় দুই মৌসুম আগের আইপিএল থেকে। যেখানে শার্প বাউন্সিং লেগ ব্রেকে সাজ ঘরে ফেরায় জিতেশ শর্মাকে। ওভার স্পিনের বদৌলতে উইকেট পাওয়াতেই সেই শিকারটা তাঁর হৃদয়ে গেঁথে যায়।

তবে অন্যসব বৈচিত্র‍্যের মাঝে ওভার স্পিনকে স্থান দেয়া তার জন্য এতটা সহজ ছিল না। ২০২৩ থেকে চর্চা শুরু করেন বরুন। বাজিমাত করেন ২৪-এ গোয়ালিওরে।

ম্যাচ শেষে বরুন বলেন, ‘আমি মূলত সাইড স্পিন বোলার ছিলাম। তবে এখন একেবারেই ওভার স্পিন বোলিংয়ে শিফট করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পিন টেকনিকটা রপ্ত করতে মিনিট খানেক লাগে, তবে আমার দু’বছর লেগেছিল।’ বরুণ আরও জানিয়েছেন যে, তিনি নিজেকে পরীক্ষা করেন মূলত আইপিএল ও তামিল নাডু প্রিমিয়ার লিগের (টিএনপিএল) মঞ্চে।

এছাড়া দীর্ঘ তিন বছর ৮৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পর দলে ফেরা বরুণের জন্যও ছিল বেশ আবেগঘন। নীল জার্সিতে ফেরাটাকে বরুন ‘পুনর্জন্ম’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

নাটকীয়ভাবে দলে ফেরার পেছনে বরুণ সর্বোচ্চ কৃতিত্ব দেয় নিজের ব্যর্থতা গুলোকে। দলে না সুযোগ পাবার সেই অনুভূতিই তার দলে ফেরার পিছে মূল অনুপ্রেরণা। যার তাড়নায় বেশি বেশি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে নিজেকে ভেঙে গড়ে তোলেন বরুন।

এদিকে এই ম্যাচেও মূল একাদশে তার উপস্থিতি টের পান ভেন্যুতে পৌঁছানোর পরে। ফলে স্বল্প মানসিক প্রস্তুতিতে খেলা প্রথম ওভারেই দিয়ে বসেন ১৫ রান।

তবে তার ওপর আস্থা ছিল অধিনায়ক সুরিয়াকুমার যাদবের। পরের ওভারে এসেই এতদিনের প্রচেষ্টার কাব্যিক প্রতিফলন পেলেন বরুণ।

ওভারে চার নম্বর বলে করে বসলেন সেই আগের মতো শার্প বাউন্স ওভারস্পিনে করা লেগি। যা তওহীদ হৃদয়ও আচ করতে পারেননি। লং অনে তালু-বন্দি হন হার্দিক পান্ডিয়ার কাছে।

পরের দুই উইকেট পান তিনি গুগলি আর লেগ ব্রেকে। যার প্রতিটিই ছিল নব্য কায়দায় বোলিংয়ের প্রতিফলন। নিজের সত্ত্বার বিপরীতে গিয়ে নতুন কৌশল শেখা মোটেই সহজ নয়। আদতেই বরুনের ফিরে আসাটা ক্রিকেট পটের সুন্দরতম নৈবেদ্য।

Share via
Copy link