অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ভারত ততক্ষণে নয় উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল, শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হারভানশ সিং তখন ৪৫ রানে অপরাজিত। হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হবে কি না সেট নিয়েই তাই সংশয় দেখা গিয়েছিল, তবে আনমলজিৎ সিংকে সাথে নিয়ে তিনি যা করলেন সেটা নিশ্চিতভাবেই ক্যারিয়ারের বাকি দিনগুলোতে অনুপ্রেরণা দিবে তাঁকে।
শেষ উইকেটে এই তরুণ গড়েছেন ৯০ রানের জুটি, যেখানে তিনি একাই করেছেন ৫৭ বলে ৭২ রান! এর মধ্য দিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন তিনি, আর সেই আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটা উৎসর্গ করেছেন গ্যালারিতে থাকা বাবাকে।
করবেনই না বা কেন, ছেলের খেলা দেখার জন্যই তো সুদূর কানাডা থেকে উড়ে এসেছেন বাবা ধামানদীপ সিং। তাই তো সেঞ্চুরি উদযাপন তাঁকে উদ্দেশ্য করেই করেছেন হারভানশ, কুর্নিশ করে জানিয়েছেন সম্মান। তিনি বলেন, ‘এই ইনিংস বাবার জন্য ছিল, তিনি কানাডা থেকে আমার খেলা দেখতে এসেছেন এবং আমি তাঁর জন্যই বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলাম।’
২০১৭ সালে ধামানদীপ পরিবার নিয়ে কানাডা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, সেখানে তাঁর বড় ভাই এবং বোন থাকে। কিন্তু বাদ সাধেন হারভানশ; স্পষ্ট জানিয়ে দেন ক্রিকেটার হবেন আর সেটা কেবলই ভারতের হয়ে।
ধামানদীপ বলেন, ‘আমি জোর করলে হয়তো সে চলে আসত, কিন্তু এটা তাঁর প্রথম স্বপ্ন ছিল। বাবা হিসেবে আমি সেটা নষ্ট হতে দিতে পারি না। এখন আমাকে প্রতিবার আসর শুরু হলে মাঠে আসতে হয়, আমি থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আসা যাওয়ার কারণে অনেক টাকা লাগে, এজন্য কানাডায় থাকার সময় আমি ছুটি নিই না তেমন। আবার প্রতিদিন ১৫/১৬ ঘন্টা কাজ করি।’
হারভানশের বড় চাচাও ভাতিজার স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়েছেন। বোলিং মেশিন কিনে দিয়েছেন যেন নেট বোলার না থাকলেও অনুশীলনে সমস্যা না হয়। তাঁদের এলাকায় বলতে গেলে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটার নেই বললেই চলে, এমনকি ২০০ কিমি রেডিয়াসেও বড় টুর্নামেন্ট খেলে এমন কেউ নেই।
তবে এই প্রতিভাবান ব্যাটার একাই পাড়ি দিয়েছেন সব প্রতিকূলতা। স্থানীয় কোচ নকুলের সাহায্যে নিজেকে প্রস্তুত করছেন বারো বছর বয়স থেকেই। তবে তাঁর আসল কাজ শুরু হবে এখন; টুকটক সাফল্য পাওয়ার পর সেটা স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে, আরো উপরের স্তরে যেতে হলে প্রশংসা, ক্যামেরার ফোকাস সামলাতে হবে।
হারভানশের ব্যাটের সুইং অনেকটাই যুবরাজ সিংয়ের মত। তিনি অবশ্য সেটা মানতে নারাজ, তাঁর মতে যুবরাজ কেবলই একজন। তবে তাঁকে যুবরাজ হতে হবে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়, বরং উন্নতির পথে হাঁটতে হাঁটতে হারভানশ হয়েই সফলতার শিখরে জায়গা করে নিবেন তিনি – সেটাই প্রত্যাশা।