স্বপ্নের মতন একটা মৌসুম কাটাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাটেড। মৌসুমের শুরু থেকেই ফর্মের চুড়ান্তে ওলে গুনার সুলশ্যারের শিষ্যরা। ওল গুনারকে নিয়ে থাকা ইউনাইটেড সমর্থকদের শংকাও কেটে গিয়েছে অনেকখানি। যাবে নাই বা কেন? ওলে আসার পর থেকে শিরোপার দেখা পাচ্ছিল না ইউনাইটেড, রি-বিল্ডিং করতে করতেই সময়টা কেটে গিয়েছে তার। কিন্তু এই মৌসুমেই ফলাফল দিতে শুরু করেছেন।
ইউরোপা লিগের ফাইনালে, লিগে দ্বিতীয়। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন কামব্যাকের গল্প লিখে। স্যার অ্যালেক্সের সময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কামব্যাকের গল্প ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। তবে এই মৌসুমে তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগেই মোট ৩১ পয়েন্ট পেয়েছেন কামব্যাক করে। প্রথমে পিছিয়ে গিয়েও নার্ভ শক্ত রেখে জয় ছিনিয়ে এনেছেন ১০ ম্যাচে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মৌসুমের সেরা কামব্যাকের গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন
- প্রতিপক্ষ লিভারপুল: ৩-২
রাইভালদের বিপক্ষে জয় সসবসময়ই আনন্দের। আর সেটা যদি হয় কামব্যাক দিয়ে, তবে তো কথাই নেই। গত কয়েক মৌসুমে ইউনাইটেডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে লিভারপুল। তাই তাদেরকে দেখিয়ে দোয়ার জন্যও এই জয়টা বেশ প্রয়োজনীয় ছিল ইউনাইটেডের। এফএ কাপের পঞ্চম রাউন্ডে সেটাই করে দেখিয়েছেন তারা।
১৮ মিনিটের মাথায় লিভারপুলকে এগিয়ে নিয়ে যান মোহাম্মদ সালাহ, ভিক্টর লিন্ডেলফকে হতভম্ব করে ডিন হ্যান্ডারসনের পাশ কাটিয়ে লিভারপুলকে এগিয়ে নেন সালাহ। যদিও ৮ মিনিটের মাথাতেই গোল পরিশোধ করে দেন ম্যাসন গ্রিনউড। মার্কাস রাশফোর্ডের ৬০ মিটার পাসকে গোলে পরিণত করে। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইউনাইটেডকে এবার এগিয়ে নেন ম্যাসন গ্রিনউড। কিন্তু ১০ মিনিটের মাথাতেই সমতায় ফিরে আসে লিভারপুল। মোহাম্মদ সালাহ আবারও হয়ে আসেন ত্রাতা। ফলে বেঞ্চ থেকে ট্রাম্পকার্ড নামান ওলে গুনার সুলশ্যার, ব্রুনো ফার্নান্দেসকে মাঠে নামান ৬ মিনিটে, ম্যাচ শেষ করে আনয়ার গুরু দায়িত্ব দিয়ে।
আর সেটাই করে দেখান ৭৮ মিনিটে। পেনাল্টি বক্সের কোনা থেকে নেওয়া শট একেবারে বারের কোনায়। ফলাফল গোল! ৩-২ গোলের জয় নিয়ে এফএ কাপ থেকে লিভারপুলকে বিদায় করে বাড়ি ফেরে ওলে গুনারের শিষ্যরা।
- প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট হ্যাম: ১-৩
এই তালিকার মধ্যে সবচেয়ে অবাক করা জয় এসেছে ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে। যদিও স্কোরলাইন দেখে তা কোনোভাবেই মনে হবে না। ইউনাইটেডের সামনে ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, আরবি লাইপজিগ আর পিএসজির সাথে ম্যাচের আগে আগে ইউনাইটেডকে আতিথ্য গ্রহণ করতে হয়েছিল ওয়েস্ট হ্যামের। ওয়েস্ট হ্যামের কোচই ইউনাইটেডের খুবই পরিচিত, ডেভিড ময়েস, ফার্গির পর ইউনাইটেডের ভবিষ্যৎ ভাবা হয়েছিল যাতে। যে কারণে
প্রথমার্ধে ইউনাইটেডকে বিধ্বস্ত করে ফেলে হ্যামার্সরা। স্কোরশীটে গোল শুধু একটাই হয়েছে, কিন্তু ম্যাচে বিন্দুমাত্র কন্ট্রোল ছিল না ইউনাইটেডের। টমাস সউকের গোলে ১-০ লিড নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইউনাইটড।
এরপরে সুলশ্যার মাঠে নামান তার ট্রাম্পকার্ড। যে ব্রুনো-রাশফোর্ডকে বসিয়ে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য তাদেরকেই ডেকে পাঠান মাঠে নামার জন্য। আর নামতে না নামতেই যেন চিত্র বদলে যায় ম্যাচের। ১৩ মিনিটেই ধ্বংসযজ্ঞে পরিণিত হয় ওয়েস্ট হ্যাম। ৬৫ মিনিটে পগবা, ৬৮ মিনিটে ম্যাসন গ্রিনউড আর কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দেন মার্কাস রাশফোর্ড ৭৮ মিনিটে। চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রা শুরুর আগে একটা মোর্যাল বুস্ট ছিল এই কামব্যাক।
- প্রতিপক্ষ সাউদাম্পটন: ২-৩
ওয়েস্ট হ্যামের মতনই ছিল ম্যাচের শুরুটা। প্রথমার্ধেই সাউদাম্পটনের মাঠে খেই হারিয়ে ফেলেছিল ইউনাইটেড। ১০ মিনিটের ঝড়ে ২-০ গোলে পিছিয়ে পরে ইউনাইটেড। বিরতির পরেই শুরু হয় সুলশ্যারের খেল দেখানো। গ্রিনউডকে সরিয়ে নামান কাভানিকে। আর তাতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় খেলা। ইউনাইটেডকে প্রথমে এগিয়ে নেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। ৬০ মিনিতে কাভানির পাস থেকে গোল করে আশার সঞ্চার করে ন্রেড ডেভিলদের মনে। আর বাকিটুকু ছিল ‘কাভানি শো’।
৭৪ মিনিটে কাভনির পা থেকে দ্বিতীয় গোল আর অতিরিক্ত সময়ে কিংবা রেড ডেভিলদের ভাষায় ‘ফার্গি টাইম’-এ এলো শেষ চমক। রাশফোর্ডের ক্রস উড়ে এসে জুড়ে বসে মাথা ছুঁয়ে দিলেন কাভানি। ৯২ মিনিটের গোলে সাউদাম্পটন থেকে কামব্যাক করে ফিরল ইউনাইটেড।
- প্রতিপক্ষ টটেনহ্যাম হটস্পার্স: ১-৩
এই ম্যাচটা ছিল ইউনাইটেড ও ওলে গুনারের জন্য প্রিশোধের ম্যাচ। জোসে মরিনহো ইউনাইটেদ থেকে বরখাস্ত হয়ে ভিড়েছেন টটেনহ্যামে, ভিড়েই সময় নেননি। মৌসুমের প্রথম দেখাতেই ইউনাইটেডের মাটিতে ইউনাইটেডকে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিলেন মোরিনহো। ফলে হোয়াইট হার্ট লেনে একটা প্রতিশোধ নেওয়াই লাগতো ইউনাইটেডের। আর সেটাই করে দেখিয়েছেন তারা।
৪০ মিনিটের মাথাতেই প্রথম গোল করেন হিউয়েন-মিন সং। তার একমাত্র গোলেই শেষ হয় প্রথমার্ধ। যদিও হাফ টাইমের আগে আগে কাভানির গোল ভিএআর দিয়ে বাতিল করে দেন রেয়াফ্রি। এ নিয়ে কিছুটা ক্ষিপ্তও ছিল ইউনাইটেড। আর সেটার প্রতিশোধ নিতেই যেন দ্বিতীয় হাফে নামে তারা। ৫৭ মিনিটে ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরান ফ্রেড। আর সেখানেই যেন মনোবল ভেঙ্গে যান টটেনহ্যামের।
৭৯ মিনিটে এসে লিডে নিয়ে যান এডিনসন কাভানি। আর কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দেন ম্যাসন গ্রিনউড, ৯৬ মিনিটে! ইউনাইটেডের জয়ের সাথে সাথে মোরিনহোর চাকরিটাও অনিশ্চিত হয়ে যায় সেদিন। বলতে গেলে প্রাক্তন কোচের বিপক্ষে সেরা প্রতিশোধটাই নিয়েছিল সেদিন ইউনাইটেড।
- প্রতিপক্ষ ব্রাইটন ও হোভ অ্যালবিয়ন: ২-৩
কখনও শুনেছেন শেষ বাঁশি বেজে যাওয়ার পরও আবার খেলা শুরু হয়েছে? ভুল সিদ্ধান্ত ঠিক করার জন্য? এমনটাই ঘটেছিল সেদিন। কথায় বলে যদি ভাগ্য পাশে থাকে তবে বিধাতা নিজেই পথ ঠিক করে দেয়। সেদিন তেমনই ঘটনা ঘটেছিল।
নিল ম্যাপায়ের গোলে ৪০ মিনিটে এগিয়ে যায় ব্রাইটন, ৪৩ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে আবার আগের জায়গাতেই ফেরত আসে নিজেরাই। ৫৫ মিনিটে ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে এগিয়ে নেন মার্কাস রাশফোর্ড। আর শেষ মিনিটে ব্রাইটনকে সমতায় আনেন সলি মারচ।
ঘটনার শুরু সেখান থেকেই। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিট, ডি-বক্সের ভেতর থেকে ম্যাপাই করে ফেলেন হ্যান্ডবল। রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলে শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি। কিন্তু এরপরে ভিএআর চেক করে শেষ বাঁশির পরেও পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ করে দেন ইউনাইটেডকে। অতিরিক্ত সময়ের দশ মিনিটের পর সেখান থেকে গোল করে দলকে জেতান ব্রুনো ফার্নান্দেস।