অর্জন নাগওয়াসওয়ালা – নামটি শুনে আপনি কি কাউকে মনে করতে পারছেন? না, নেহায়েৎ যদি না আপনি ভারতের রাজ্য পর্যায়ের ক্রিকেট কিংবা রঞ্জি ট্রফির খোঁজ খবর ভালভাবে না রাখেন তাহলে এই নামটি আপনার জন্য একদম অচেনাই। হ্যাঁ, এই অচেনা অর্জনই আসন্ন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের স্কোয়াডে স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
ভারতীয় জাতীয় দল! এ যেনো অবাস্তব স্বপ্ন! বছরের পর বছর ক্রিকেট ধ্যানে মগ্ন থাকলেও অনেকের কাছেই এই স্বপ্ন ধরা দেয় না। সেই স্বপ্নকেই বাস্তবে রুপ দিয়ে ৪৫ বছরের ইতিহাসকে ভেঙ্গে দিয়েছেন পেসার অর্জন নাগওয়াসওয়ালা। যিনি একজন পার্সি ক্রিকেটার।
সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে পার্সি ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। এরপর ৪৫ বছর কেটে গেলেও আর কোনো পার্সি ক্রিকেটার ভারতীয় দলে আসেনি। যেই ইতিহাসে দাগ কেটে স্ট্যন্ডবাই হিসেবে ভারতের স্কোয়াডে জায়গা পেলেন অর্জন।
অর্জনের দুইজন আইডল আছেন। একজন ব্ল্যাক ক্যাপ পেসার ট্রেন্ট বোল্ট এবং আরেকজন স্বদেশি জহির খান। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কোনো দলে জায়গা না পেলেও নেট বোলার হিসেবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে সুযোগ পায় অর্জন, আর সেখানেই কপাল খুলে যায় তার!
দেখা হয়ে যায় দুই আইডল ট্রেন্ট বোল্ট ও জহির খানের সাথে। যেগুলো তিনি কিছুদিন আগেই স্বপ্নে ভাবতে শুরু করেছিলেন সবকিছুই একে একে পূরণ হতে লাগলো। নেটে টানা গড়ে ১৩৫ কি.মি. গতিতে তিনি অনায়াসে বল করতে পারতেন! সেখানে আইডল বোল্টের কাছে শিখেছেন ইনস্যুইং এবং ইয়োর্কারও। এমনকি তিনি নাকি নেটে মুম্বাইর অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং ক্যারিবিয়ান জায়ান্ট কায়রন পোলার্ডকেও আউট করেছেন বেশ কয়েকবার।
অর্জন যে খুব বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কিংবা লিস্ট এ ক্রিকেট খেলে ফেলেছেন তা কিন্ত নয়৷ তার চেয়ে বেশ অভিজ্ঞ আর বছরের পর বছর রঞ্জি ট্রফি কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে এমন অনেকেই আছেন। তবে ভাগ্য যার সহায় হয়!
মুম্বাইয়ের নেট বোলার থেকে সোজা ইংল্যান্ডের ফ্লাইট – ঠিক এক মাসের মধ্যেই জীবনের একটা ফ্রেমের দুটো চিত্র। বয়স এখনো মাত্র ২৩! ২০১৮ সালে প্রথম সুযোগ পান রঞ্জি ট্রফিতে! প্রথম শ্রেণির ম্যাচ সহ টেনেটুনে হয়তো গোটা পঞ্চাশেক ম্যাচ খেলেছেন বা তার কাছাকাছি৷
তবে সবশেষ ২০১৯-২০ রঞ্জি ট্রফিতে ৮ ম্যাচে ৪১ উইকেট নিয়েই এই তরুন পার্সি মূলত নজরে আসেন সবার। তবে নজর টা খুব বেশি প্রখরও ছিলো না, তা নাহলে হয়তো শাহরুখ খানের মতো তিনি দল পেয়ে যেতেন আইপিএলে। তবে ঈশ্বর কার জন্য কি লিখে রেখেছেন সেটা কি আর কেউ জানে! প্রথমে মুম্বাইর নেট বোলার সেখান থেকে ভারতের স্কোয়াডে। এভাবে হয়তো ভাগ্যের চাকা ঘুরে একদিন খেলতে দেখা যাবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে।
তার জন্ম ১৯৯৭ সালের ১৭ই অক্টোবর গুজরাতের সুরতে। গ্রাম থেকে তার ক্রিকেট কোচিং ছিলো প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে! সেখান থেকে ট্রেনে পাড়ি দিয়ে এসে অনুশীলন করতেন এই তরুন বাঁ-হাতি পেসার।
তার এই ক্রিকেট জার্নি টা শুরু হয় ভালসাডের এক কোচিং ক্যাম্প থেকে। সেখানে বয়সভিত্তিক দলে খেলা শুরু করেন। বলে গতি থাকায় অল্প বয়সেই নিজের প্রতিভা দেখিয়ে দ্রুতই জায়গা করে নেন গুজরাত অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। এরপর উন্নতির সিঁড়ির ধাপের মতো এক পা দু পা করে অনূর্ধ্ব-১৮, ২৩ খেলতে না খেলতেই ডাক পান রঞ্জি ট্রফিতে। আর এর পরের গল্পটা তো পাঠকদের জানাই আছে।
তার জন্ম ১৯৯৭ সালের ১৭ অক্টোবর গুজরাটের সুরতে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। গ্রাম থেকে তাঁর ক্রিকেট কোচিং স্কুল ছিলো প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে! সেখান থেকে ট্রেনে পাড়ি দিয়ে এসে অনুশীলন করতেন এই তরুণ বাঁ-হাতি পেসার। এত পরিশ্রম যিনি করতে পারেন – ভাগ্য তো একদিন না একদিন তাঁর পক্ষে কথা বলবেই।