দু:খবিলাস নয়, মিরাজ এক সুখের ভেলা

দলগতভাবে বাংলাদেশের ভরাডুবি অব্যাহত রয়েছে বলেই, তার অবদানগুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সকলে মিলে সাকিবের বিদায়ের দুঃখবিলাসে মেতে উঠেছে। 

তিন রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯৭ রানের ইনিংসটিতে ভর করে বাংলাদেশ বাঁচিয়েছে মান। অবশ্য দলের এই মান বাঁচানোর কাজটা মিরাজ ধারাবাহিকভাবেই করে যাচ্ছেন চলতি বছর জুড়ে। সাকিব আল হাসানের ঘাটতি পূরণের জন্য তিনি প্রস্তুত, সেটাই যেন প্রমাণ করছেন ব্যাটে-বলে।

মিরাজের অভিষেক ম্যাচের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। সদ্যই যুব দল থেকে উঠে আসা একজন খেলোয়াড়, প্রথম ইনিংসেই তুলে নেন ৬ উইকেট। ইংল্যান্ডের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং লাইনআপের জন্য যমদূত হয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে সবাই ভেবে নিল, মিরাজ কেবলই বোলার। তবে তার মধ্যে একজন দায়িত্ববান ব্যাটারের অপার সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিল।

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনি বেশ কয়েকবার ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ব্যাটিংয়ের জোরে। সেই মিরাজের ব্যাটার সত্ত্বা যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। অবশ্য নিজের সেই সত্ত্বাকে হারিয়ে যেতে দেননি মিরাজ। ২০২৪ সালে এসে নিজের সক্ষমতার পরিচয়টা দিয়েছেন তিনি। ৭-৮ নম্বরে ব্যাট করা ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৯৭ রান সহ তার মোট রান ৪৪৫। দশ ইনিংসের মধ্যের চারটিতে হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে তার। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, নেই কোন সেঞ্চুরি। অবশ্য চারটি অর্ধ-শতকের মধ্যে চারটিই ছাড়িয়েছে ৭০ রানের গণ্ডি। তিন অংকের দিকে ছুটেছেন তিনি। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই সঠিক সঙ্গের অভাবে শেষ হয়েছে তার ইনিংস।

যেহেতু টেলএন্ডার ব্যাটারদের সাথে নিয়ে খেলতে হয়, সেহেতু একটা বাড়তি মানসিক পীড়া কাজ করে। সেই পীড়াতেই ভুল করেছেন বহুবার। ব্যাটিং অর্ডারে খানিক উন্নতি পেলে হয়ত আরেকটু ভাল করতে পারতেন হয়ত। সে অবশ্য ভিন্ন এক আলাপ। তবে ব্যাটার সত্ত্বার পুনর্জাগরণে তিনি নিজের বোলার সত্ত্বাকে একেবারেই হারিয়ে ফেলেননি।

এমনকি বলা যেতে পারে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলার। অন্তত উইকেট প্রাপ্তির দিক থেকে। এখন অবধি ২৬টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। আর কোন বাংলাদেশী বোলার এতগুলো উইকেট নিতে পারেনি ২০২৪ সালে। এটাই অন্তত প্রমাণ করে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন মিরাজ। দলগত ব্যর্থতার কারণেই আড়ালে থেকে যাচ্ছে মিরাজের অবদান।

এমনকি ২০২৩ সাল থেকে এখন অবধি টেস্ট অলরাউন্ডারদের মধ্যে তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। ৬০০ বা তার বেশি রান করা ও ৩০ এর বেশি উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। উইকেট বিবেচনায় তার উপরে রয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা।

এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসংখ্যানগুলোই বলে দেয়, মিরাজ প্রকৃত অলরাউন্ডার হয়েই বিচরণ করছেন আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে। কিন্তু দলগতভাবে বাংলাদেশের ভরাডুবি অব্যাহত রয়েছে বলেই, তার অবদানগুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সকলে মিলে সাকিবের বিদায়ের দুঃখবিলাসে মেতে উঠেছে।

Share via
Copy link