দশারথ স্টেডিয়ামের প্রায় ২০ হাজার দর্শককে চুপ করিয়ে দিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা। গোটা স্টেডিয়ামে মুহূর্তের মধ্যেই পিনপতন নিরবতা নেমে এল। অসাধারণ এক দুরপাল্লার শটে লক্ষ্যভেদ ঋতুর। তাতে করে আবারও সাফের শিরোপায় লেখা হয়ে গেল বাংলাদেশের নাম। মনিকা ও ঋতুপর্ণার গোলে স্বপ্ন আবারও ধূলিসাৎ হয়েছে নেপালের।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে তহুরা খাতুনরা ৭-১ গোলে হারিয়েছিল ভুটানকে। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল আগের আসরের ফাইনালিস্ট নেপাল।
যেন ২০২২ সালের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি ঘটে নেপালের দশারথ স্টেডিয়ামে। সেবারও এভারেস্টের মেয়েদের কাঁদিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলার বাঘিনীরা। এবারও সেই একই স্বাদ পেল নেপাল। বাংলাদেশের মেয়েরা ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে নেপালের নারী ফুটবল দলকে।
ম্যাচের শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলতে শুরু করে তহুরা খাতুনরা। অন্যদিকে, নেপাল কাউন্টার অ্যাটাকের পরিকল্পনার ছক কষে নেমেছিল মাঠে। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে।
নেপালের ডিফেন্ডারের ভুলে বল চলে গিয়েছিল তহুরার পায়ে। কিন্তু বেরসিক ক্রসবার, আটকে দেয় তহুরার শট। এরপর যেন আরও জেদ নিয়ে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। বাংলার মেয়েদের আক্রমণ প্রতিহত করতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল নেপাল। তবুও ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে ভেসে আসছিল, নেপালের মেয়েরা হার মেনে নেয় না।
প্রথমার্ধে অবশ্য গোলশূন্য ড্র থেকেছে। বাংলাদেশের জন্যে অবশ্য হুমকি হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন সাবিত্রা ভান্ডারি সাম্বা। যদিও সফল হতে পারেননি তিনি। গোলরক্ষক রুপনা চাকমার দৃঢ়তায় থমকে গেছেন তিনি বারংবার। দ্বিতীয়ার্ধেও সুইপার কিপার হিসেবে দারুণ সাবলীল ছিলেন রুপনা। যদিও খুব বেশি আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়নি।
সাবিনা খাতুনরা একের পর এক আক্রমণ নিয়ে আছড়ে পড়েছেন নেপালের রক্ষণের উপর। এমন এক আক্রমণে জটলার সৃষ্টি হয় নেপালের ডি-বক্সে। সাবিনার বাড়ানো বল নেপালের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে চলে যায় মনিকা চাকমার কাছে।
মনিকা, ভুল করেননি। বল জালে জড়িয়ে আনন্দে ভাসিয়েছেন বাংলাদেশ শিবিরকে। এরপরও শামসুন্নাহারদের গোলের ক্ষুধা কমেনি। আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে তারা। মাঝে কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ পেয়ে যায় নেপাল। ৫৫ মিনিটের মাথায় ম্যাচে সমতায় ফেরে নেপাল। দারুণ এক থ্রু বল থেকে গোল করেন আমিশা।
উল্লাসে প্রায় ফেটে পড়ার অবস্থা দশারথ স্টেডিয়ামের। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে ভেসে এল ‘নেপালি ফুটবল এট ইটস বেস্ট’। তবে বাংলাদেশের বাঘিনিরা দমে যাওয়ার পাত্র নয়। তারা ম্যাচে আর নেপালকে পাত্তাই দেননি। নিজেদের অর্ধে বল যেতেই দেয়নি বাংলাদেশের মিডফিল্ড। দু’একটি বল পৌঁছালেও রক্ষণ দূর্গ ছিল অক্ষত।
তবে ম্যাচে তো জয় চাই। আর সেই জয়টা এসেছে ঋতুপর্ণার পা থেকে। ডি বক্সের বাম পাশ থেকে দূরপাল্লার শট চালান ঋতু। প্রতিহত করবার আপ্রাণ চেষ্টা চালান নেপালের গোলরক্ষণ। কিন্তু শটের গতিতে পরাস্ত হতে হয় অঞ্জিলাকে। তখনই মাঠ ভর্তি দর্শকদের উচ্ছ্বাসের লাগাম টেনে দেন ঋতু। ইশারায় জানিয়ে দেন চুপ হতে। চ্যাম্পিয়ন হতেই যে নেপালে গিয়েছিল মেয়েরা।
পরপর দুইবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল সাবিনা খাতুনের দল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের জয় পাওয়ার গল্পটা তো এমনই হয়। পাহাড় ডিঙিয়ে, গ্রামের কাঁদামাটি মাড়িয়া যারা এভারেস্টের পাদদেশে পৌঁছেছে, তারা নিশ্চয়ই শিরোপা না নিয়ে ফেরার কথা নয়।