ক্রিকেট মাঠে এসিএলের আঘাত

এ সি এল ইনজুরি হল এক বিপর্যয়কর প্রলয়, যা একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। এটি স্বপ্নের মৃত্যু, যেখানে প্রত্যাশা আর অর্জন একে অপরের বিপরীত মেরুতে চলে যায়।

ফুটবল ময়দানে বহুল প্রচলিত এসিএল ইনজুরি। হর-হামেশাই শোনা যায় কোন না কোন খেলোয়াড় হাঁটুর এই মারাত্মক ইনজুরিতে ধুঁকছেন। ফুটবলে খুব পরিচিত ইনজুরি ক্রিকেট মাঠেও দেখা যায়, তবে তা কালেভদ্রে। যদিও এই ইনজুরি বদলে দিয়েছে বহু ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার।

দ্রুত গতিতে দৌড়ানো, হঠাৎ দিক পরিবর্তন, জাম্প দেওয়া এবং ল্যান্ডিংয়ের সময় শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা, প্রতিপক্ষের ট্যাকল সামলানো ইত্যাদি কারণে খেলোয়াড়দের হাঁটুতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যার ফলে লিগামেন্ট ছিড়ে ক্যারিয়ার শেষের ও উপক্রম হয়। অনেক কিংবদন্তি ফুটবলার ও এই ইনজুরি শিকার হয়েছেন, যেমন – রোনালদো নাজারিও, নেইমার জুনিয়র, জালাতন ইব্রাহিমোভিচ, ভ্যান ডাইক।

ক্রিকেটে এই ইনজুরিটা তুলনামূলক কম হয়। যদিও, পেসার ও ফিল্ডিং করতে গিয়ে অনেক সময় এই জাতীয় চোট ক্রিকেটাররাও পেয়ে থাকেন, অনেক সময় তা হয়ে দাঁড়ায় অনেক মারাত্মক।

  •  মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ)

এক সময়ের সর্বোচ্চ গতির ফাস্ট বোলারদের একজন ছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে তার বোলিংয়ের গতির ঝড় এবং সঠিক লাইন-লেন্থ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে প্রাণ সঞ্চার করেছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকেই মাশরাফির হাঁটুতে এ সি এল চোট লাগতে থাকে, এবং পরবর্তী সময়ে তিনি প্রায় সাতটি বড় সার্জারি করিয়েছেন। এসিএল ইনজুরির কারণে কমেছে তার গতি, ধার, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নও হয়ত।

  • কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন  ২০২৩ সালের শুরুতে হাঁটুতে চোট পান। পরে তিনি অস্ত্রোপচার করান এবং সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য দীর্ঘ সময় রিহ্যাব নিতে হয়েছে। উইলিয়ামসন তার দলের জন্য অপরিহার্য খেলোয়াড় হওয়ায় এই ইনজুরি তার এবং নিউজিল্যান্ড দলের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে তিনি মাঠে ফিরেছেন, তবে চোট থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া এখনো তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

  •  কাইরন পোলার্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দাপুটে অলরাউন্ডার কিরন পোলার্ডও এই ইনজুরির শিকার হন। পোলার্ডের ক্যারিয়ারে অনেক ওঠানামা ছিল, তবে তার হাঁটুর গুরুতর এসিএল ইনজুরির পর তাকে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়। ইনজুরির কারণে পোলার্ডকে তার ব্যাটিং এবং বোলিং দক্ষতাও পুনরায় গঠন করতে হয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে তার অনুপস্থিতি ছিল বড় ধাক্কা।

  •  সাইমন জোন্স (ইংল্যান্ড)

২০০৫ সালের অ্যাশেজ সিরিজে তার দারুণ পারফর্মেন্সের মাধ্যমে তিনি এক নতুন প্রতিভা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কিন্তু সেই বছরই গুরুতর এসিএল ইনজুরিতে পড়ে তার ক্যারিয়ার স্থবির হয়ে যায়। হাঁটুর সমস্যার কারণে একাধিক সার্জারি করতে হলেও জোন্স তার আগের ফর্মে ফিরে আসতে পারেননি, ফলে তার ক্যারিয়ার মাত্র ১৮টি টেস্টেই শেষ হয়ে যায়।

  •  নাথান ব্র্যাকেন (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার নাথান ব্র্যাকেনও হাঁটুর ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাঠের বাইরে চলে যান। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ পেস বোলার, যার ইনজুরি অস্ট্রেলিয়া দলের পরিকল্পনায় বিশাল প্রভাব ফেলেছিল। ইনজুরির কারণে তাকে ২০০৯ সালের পর থেকে বিভিন্ন সিরিজে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছিল। যদিও তিনি কিছু সময় পরে ফিরে আসেন, কিন্তু এ সি এল ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়গুলো হারিয়ে যায়। ব্র্যাকেনের ইনজুরি তাকে দীর্ঘসময় ক্রিকেট থেকে দূরে রাখে এবং তার প্রতিভাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

  •  এবাদত হোসেন (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের তরুণ পেস বোলার এবাদত হোসেন ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে হাঁটুর গুরুতর এসিএল ইনজুরির শিকার হন। ইনজুরির কারণে তাকে ১৬ মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হয়, এবং তার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও বিঘ্নিত হয়। নিউজিল্যান্ড, ইন্ডিয়ার মত দলের বিপক্ষে লাল বলে আগুন ধরানো ইবাদত কি আগের রূপে ফিরতে পারবে কি না সেটিও এখন বড় প্রশ্ন!

Share via
Copy link