ভারতের ক্রিকেট তখন একটি গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একেবারে নতুন একজন অধিনায়কের নেতৃত্বে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যায় দলটি। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সেই দল গঠিত হয়েছিল একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারের মিশেলে। তরুণ ক্রিকেটারদের সেই উত্তাপ অনুভব করেছিল বাকি দলগুলো। বিশ্বকাপ জয় করা সেই দলের উত্তাপ সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গিয়েছিল বোধহয় অস্ট্রেলিয়া দলকে।
মাঠে ক্রিকেটীয় ভাষা তো বটেই, মুখের ভাষায়ও বেশ গরম হয়ে উঠেছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সেই ম্যাচগুলো। ক্রিকেটের অভিধান অনুযায়ী আমরা যাকে বলি স্লেজিং। ক্রিকেটের এই স্লেজিং শিল্পের মাস্টার বলা যায় অস্ট্রেলিয়াকেই। তবে ২০০৭ সালের সেই ভারত দলকে ভড়কে দিয়েছিল স্লেজিং এর মাস্টারমশাইরাও। সম্প্রতি সেই সময়ের ম্যাচ গুলো এবং সেই সময়কার স্লেজিংয়ের গল্প বলেছেন সেই দলের ব্যাটসম্যান রবিন উত্থাপা।
২০০৭ সালে দুই দফায় মাঠে নেমেছিল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং পরে দুই দলের মধ্যকার একটি সিরিজে। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনাল খেলেছিল ভারত দল।
সেই সেমিফাইনালের স্লেজিং নিয়ে বলতে গিয়ে রবিন উথাপ্পা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ওই ম্যাচে স্লেজিং এর পরিমান ছিল অকল্পনীয়। সবাই আমাদের দিকে তেড়ে আসছিল। তবে আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলাম না। কেবল দেখলাম জ্যাক ভাই (জহির খান) ব্যতিক্রম ছিলেন। আর ছিলেন কয়েকজন ফাস্ট বোলার। তবে বাকিরা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের খুব একটা বিরক্ত করেনি।’
সেই সময়ের বর্ণনা করে উথাপ্পা আরও বলেন, ‘তবে ব্যাট করার সময় সেই ম্যাচে গৌতম গম্ভীর স্লেজিং এর উত্তর দিয়েছিলেন। আমিও কয়েকজন বোলারকে উত্তর দিয়েছিলাম। তবে আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল ম্যাথু হেইডেনকে কিছু বলা। সে আমাকে একজন মানুষ ও ব্যাটসম্যান হিসেবে ভীষণ অনুপ্রাণিত করতো। আমি তাঁর থেকে দেখে কিছু শট খেলাও শিখেছিলাম। তবে আমি ব্যাট করার সময় সে যখন আমার দিকে তেড়ে আসছিল তখন আমিও ঠিক করি ওদের ব্যাটিং এর সময় আমিও ফিরিয়ে দিব। হেইডেন যখন ব্যাট করতে নামে তখন আমিও পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অনেক কিছু বলছিলাম তাঁকে।’
তবে সেই ম্যাচে এই দুইজনের কথা ছোঁড়াছুঁড়ি আঘাত করেছিল তাঁদের মাঠের বাইরের জীবনেও। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ওপেনার এরপর কয়েক বছর উত্থাপার সাথে আর কথাও বলেননি। উথাপ্পা বলেন, ‘সে আমাকে এমন কিছু বলেছিল যা আমি এখানে বলতে চাই না। তারপর আমিও তাঁকে কিছু বলি। এরপর ২-৩ বছর সে আমার সাথে আর কথা বলেনি। আমি সেই সময় ম্যাচ জিততে চাইছিলাম। তাই যতটা সম্ভব তাঁকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে চাইছিলাম। আমরা ম্যাচ জিতেছিলামও তবে আমি এরপর তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ হারাই যে আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল।’
তবে দুই দলের এই স্লেজিং সেখানেই শেষ হয়না। সেবছরই আবার একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় ভারত। তারপর তাঁরা সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও খেলে। সেই সিরিজে অবশ্য জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচগুলোতেও বিশ্বকাপে শুরু হওয়া সেই স্লেজিং জারি ছিল।
সেই ম্যাচ গুলো নিয়ে উত্থাপা বলেন, ‘বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসে। তখনও ধোনি ও অন্যান্য সিনিয়ররা আমাকে পয়েন্টে ফিল্ডিং করাতো ওদের ব্যাটসম্যানদের বিরক্ত করার জন্য। দারুণ সময় ছিল সেসব দিন।’