পাকিস্তানের পেস সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। একটু ধাক্কা খেয়েছেন নিশ্চয়ই। তবে এর পেছনে অবশ্যই রয়েছে যুক্তি। খোদ পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড সেই রাস্তা তৈরি করছে। তারাই পেসারদের খনিকে ধুলার সাথে মিশিয়ে দেওয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চলেছে।
পাকিস্তানে পৃথিবীর সেরা ব্যাটিং ট্র্যাকগুলো তৈরি হয়। সেসব উইকেটে বোলিং করে উইকেট পান বলেই পাক পেসারদের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যরকম। যুগে যুগে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার কিংবা হালের শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের মত পেসার উৎপাদন করেছে পাকিস্তান।
অথচ সেই পাকিস্তানেই সেই সোনার ডিম পাড়া হাঁসের পেট কাটার মঞ্চ প্রস্তুত হচ্ছে। জোর করে স্পিন বান্ধব উইকেট বানিয়ে ম্যাচ জেতার মোহে, নিজেদের সোনার ডিম দেওয়া রাজহাঁসের পেট চিড়ে ফেলছে না তো পাকিস্তান?
উপমহাদেশীয় ক্রিকেট সবসময় স্পিনারদের স্বর্গ। পাকিস্তান-ই একমাত্র এই ধারার বাইরে গিয়ে, ‘সেনা’ দেশের মত বিশ্বমানের পেসার দিয়ে বোলিং লাইন আপ সাজিয়ে এসেছে এতদিন। পাকিস্তানের ব্যাটিং সহায়ক ‘পাটা’ পিচেও যেসব পেসার ভালো করেন, তারা নিশ্চয়ই বিশ্বের যেকোনো পিচেই ভালো করবে। এমনটাই হয়ে এসেছিল এতদিন।
তবে, ২০২১ সালের পর থেকেই ঘরের মাঠে টেস্ট জিততে পারছিল না পাকিস্তান। ২০২৪ এর শেষের দিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টে আবারো নাস্তানাবুদ হয়েছিল পাকিস্তান। এমনকি বাংলাদেশ এই ব্যাটিং উইকেট থেকে জিতে ফিরে পেস ব্যাটারি কাজে লাগিয়েই।
এরপরেই যেন সম্বিত ফিরে পায় পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন ফর্মূলায় জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় তিন দিনেই। শেষ তিন টেস্টে প্রতিপক্ষের ৬০ উইকেটই নিয়েছেন পাকিস্তানি স্পিনাররা।
এমন ঘটনার সাক্ষীও বিশ্ব ক্রিকেট হবে এমন কথা কেই বা ভেবেছিল কবে? স্পিনারদের ভালো পারফর্ম করাটা অবাস্তব কিছু না। দৃষ্টিকটু ব্যাপারটা হচ্ছে উইকেট পাওয়ার পদ্ধতিটা। ম্যাচ জিততে জোর করে স্পিন বান্ধব পিচ বানাচ্ছে পাকিস্তান। পেস বান্ধব উইকেটকে স্পিনারদের অনুকূলে আনতে যা যা করা সম্ভব তার কোনটি করতেই কমতি রাখেনি পাকিস্তান।
স্পিন বান্ধব উইকেটে সমস্যা নেই, সমস্যা হল মাস্টারিং করে যখন এরকম উইকেট বানানো হবে জোর করে, তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেসার হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। জোর করে তো আর ভালবাসা হয় না। ব্যাপারটা এমন যে ইমরান খান কিংবা শাহীন শাহদের জোর করে স্পিনার বানানো হচ্ছে এখন।
কি করছে পাকিস্তান? স্ট্যান্ড ফ্যান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যান, কাচ দিয়ে ঘিরে গ্রিন হাউস ইফেক্ট ব্যবহার সবই তারা করেছে। যে করেই হোক ফাঁটল ধরাতে হবে উইকেটে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সাময়িক সফলতার জন্য এত বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে কি ঠিক করছে পাকিস্তান? অথচ পাকিস্তানের কোয়ালিটি স্পিনার নেই, আর এরকম উইকেটের জন্য কোয়ালিটি পেসার তৈরির রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে বছর দুয়েক চললে তো বিশ্বমানের দূর একাদশে খেলানোর যোগ্য পেসারের সংকটে ভুগবে পাকিস্তান। অবশ্য এই জোর করে স্পিনের ঘাটি হবার প্রচেষ্টাকে যে সাধুবাদ জানাচ্ছেন খোদ ওয়াসিম আকরামও, ‘হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে জয় পাওয়া দেখে ভালো লাগছে। এভাবে যদি ফর্মুলায় জয় আসে, তাহলে এটাই চলুক না!’
কিন্তু, হোম কন্ডিশনে পাকিস্তান আগেও জিতেছে। কখনওই এই ফর্মূলাতে নয়। খোদ ওয়াসিম আকরামই কত ম্যাচ জিতিয়েছেন পাকিস্তান, তিনি নিজেই কি ভুলে গেছেন?