বেশ কয়েকটি প্রথমের আরো একটি হতে পারে আজকে। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ দল। স্বর্ণ জিততে পারলে প্রথমবারের মতো সোনালী সাফল্যে ভাসবে রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। দুই বছর আগে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার ব্রোঞ্জপদক জিতেছিলেন রোমান।
সেখানে প্রথম কোন আর্চার সরাসরি অলিম্পিক গেমসে খেলার টিকেট লাভ করেন। কাকতালীয়ভাবে এই সবগুলো প্রথমের সাথেই একটি নাম যুক্ত রয়েছে, সেটি রোমান সানার। বাংলাদেশের আর্চারির সবচেয়ে বড় এই তারকায় চোঁখ থাকবে সারা বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের। জুটি হিসেবে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন দিয়া সিদ্দিকী।
সুইজারল্যান্ডের লুজানে আজ বিকাল তিনটা পচিশ মিনিটে ফাইনালের মঞ্চে মাঠে নামবে মার্টি ফ্রেডরিখের শীষ্যরা। রিকার্ভ মিক্সড ইভেন্টে প্রতিপক্ষ হিসেবে শেষ বাধাঁ হিসেবে রয়েছে নেদারল্যান্ডের দুই সিনিয়র তীরন্দাজ গ্যাব্রিয়েলা সুলশার ও সেফ ফন ডেন বার্গ। এই দুজনকে পরাজিত করতে পারলে মাথার উপরে রোমান-দিয়া জুটির উপরে উড়তে থাকবে লাল সবুজ পতাকা। পাশাাপাশি বাজতে থাকবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। একটা স্বপ্নময় দিনের জন্য বছরে পর বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের আর্চাররা।
আন্তর্জাতিক আর্চারীতে বাংলাদেশের পোস্টার বয় বয়ের নাম রোমান সানা। এর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পদক জিতেছেন। এছাড়া তার ঝুলিতে রয়েছে এশিয়া কাপ, দক্ষিণ এশিয়ান গেমস ও দক্ষিণ এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের স্বর্ণ। আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারীতে জিতেছেন রৌপ্য পদক।
রোমানের চেয়ে সে হিসেবে অনেকটাই নবীন দিয়া। মূলত ট্রায়ালে সেরা স্কোর করে দলে সুযোগ পান তিনি। অথচ নিয়মিত আন্তর্জাতিক সাফল্য পাওয়া ইতি খাতুনের এই জায়গায় থাকার কথা ছিল। নীলফামারী জেলার পাইকপাড়ার মধ্য হারওয়া গ্রামের বাসিন্দা জেলার আনন্দ নিকেতন স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতিও ঝোক বাড়তে থাকে। নিয়মিত পরিশ্রমের সুফল পেয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান-বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন।
বর্তমানে একাদশ শ্রেণীর এ শিক্ষার্থী ২০১৯ সালে ইসলামিক সলিডারিটি আর্চারী আন্তর্জাতিক আসরে দিয়া অভিষেকেই প্রথম স্বর্ণ জয় করেন। ঢাকা ছাড়ার আগে মাত্র দেড় মাস অনুশীলন করার সুযোগ পান। আর জুটি হয়ে এখন তো বাজিমাতই করে ফেলেছেন।
তার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখও রীতিমতো অবাক। ফাইনালের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডকে হালকাভাবে নিতে নারাজ তিনি। দুই বছর আগে নিজেদের মাটিতে রিকার্ভ মিক্সড ইভেন্টে রৌপ্য পদক জিতেছিল ইউরোপের দেশটি। ডাচরা বিশ্বমানের দল হলেও বর্তমানে দারুণ ফর্মে রয়েছেন রোমান।
স্কোরের টাইমিংটা ভাল হচ্ছে খুলনার ছেলের। এখন ফাইনালে ভাল সময় থাকলেই সেরা পেতে পারে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। কিলোমিটারের হিসেবে ঢাকা থেকে লুজান শহরের দুরত্ব ৭৬৪৯। সেখানেই নতুন ইতিহাসের অপেক্ষা রয়েছে এখন। দৃষ্টিনন্দন এ শহরটিতে এমনিতে আলাদা টান অনুভব করেন ভ্রমন পিপাসুরা। আর্চারীর বিশ্বকাসে সেরা সাফল্যের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বাংলাদেশ। এমনিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা মুখোমুখি হবে। ক্রীড়াপ্রেমীদের এই ম্যাচেও মনযোগ থাকবে।
এরই মধ্যে ফাইনালে ওঠে রানার্সআপ হওয়াটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। এখন নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেললেই সোনার পদক গলায় উঠবে রোমান-দিয়া জুটির। আগেই অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা রোমান যদি দিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন সেটা বাংলাদেশের খেলাধুলায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবেয়।
ফাইনালে মাঠে নামার আগের বিকেলে রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকী ও কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ লুজান থেকে এক ভিডিও বার্তায় দেশের মানুষের কাছে দোয়া কামনা বলেছেন। তীরের সঠিক নিশানা ভেদ করেই সাফল্য পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাই থাকবে বাংলাদেশের। রোমানের জন্য এই সাফল্য প্রায় দেড় বছর পর পাওয়া।
এর আগে সাউথ এশিয়ান গেমসে সর্বশেষ সাফল্য পেয়েছিলেন। এরপরই খারাপ সময়ের সঙ্গে পথচলা শুরু তার। কোচ ফ্রেডরিখ হতাশ না হলেও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নৈতিবাচক কথা বলা শুরু হয়। আস্থা রাখা কোচ রোমানকে নিয়ে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। সেই অপেক্ষার প্রহরটা আপাতত শেষ হলো বলেই মনে হয়। অথচ নেপালের সেই আসরেই ত্রিমুকুট জিতেছিলেন ইতি থাকুন। এবার খারাপ স্কোরের কারণে তাঁর দলে জায়গা হয়নি।
ইতির পাশাপাশি বাকিদের বিশ্বমঞ্চের জন্য তৈরি করতে দারুণ ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে। করোনার এই সময়ে নিজ দেশে যাননি, শিষ্যদের নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার ষ্টেডিয়ামে দিনের পর দিন নিবিঢ় প্রশিক্ষন নিতে হয়েছে। ইতির খারাপ করার সুযোগ রোমানের মতো সতীর্থ আর ফ্রেডরিখের মতো বিশ্বমানের কোচকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে দিয়া নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেন। বছস মাত্র ১৭ হলেও বিশ্বকাপের মতো আসরে সেরাটা মেলে ধরতে প্রাণপন চেষ্টার ফলই পেয়েছেন।
সবমিলিয়ে দুই বছরের ব্যবধানে বিশ্বকাপে আরো একটি বড় সাফল্য দিয়ে দারুণ অর্জন হতে পারে। পুরো বাংলাদেশের দায়িত্ব যে একা হাতে নিয়েছেন রোমান সানা-দিয়া সিদ্দিকী জুটি।