ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন। এই ক্রিকেট ঈশ্বর যে প্রতিভা নিয়ে ক্রিকেটে এসেছিলেন তার সবটুকুই তিনি ২২ গজে দেখিয়েছেন আর নিজের নামের পাশে জুড়েছেন অজস্র রান আর রেকর্ড।
শচীনের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অবদান কার? নিশ্চয়ই তাঁর কোচ রমাকান্ত আচরেকারের। কিংবা তাঁর বাবা-মা কিংবা স্ত্রীর অবদানও কম নয়। তবে, ভারতের শত কোটি ভক্তের অবদানও নিশ্চয়ই কম না।
শচীনের এমনই এক ভক্ত ছিলেন এক পাঁচ তারকা হোটেলের ওয়েটার। আর ভারতীয় এই ক্রিকেট দেবতার ব্যাটিংয়ে উন্নতির পেছনে এই ওয়েটারেরও অবদান আছে! শচীন নিজেই জানিয়েছেন, এই ভদ্রলোকের পরামর্শে পাল্টে যায় তাঁর ব্যাটিং।
একবার ম্যাচ খেলতে শচীন চেন্নাইয়ে ছিলেন। টেস্ট সিরিজ ছিল। হোটেল রুম থেকে কফি অর্ডার করেন শচীন। এক ওয়েটার খাবার নিয়ে আসেন। এই শচীনের সাথে একটু কথা বলার আবদার করেন। আর সেই সুযোগে শচীনকে এক অভিনব পরামর্শ দেন সেই ওয়েটার।
শচীন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি আপনি ওপেন মাইন্ডের হন তাহলে আপনি অনেক কিছুতেই উন্নতি করতে পারবেন। চেন্নাইয়ে সেখানেই একজন ওয়েটার আমার কাছে আসলো এবং বললো যদি আপনি কিছু মনে না করেন এবং বিরক্ত না হন আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। আমি বললাম বলো। সে আমাকে বললো আমার এলবো গার্ড ব্যাট স্যুইং করতে বাঁধা দেয়। এটা নিয়ে আমি কারো সাথে কথা বলার কথা চিন্তাও করিনি। তবে, শতভাগ ঠিক ছিল। আর সে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। আমাকে বলেছিল, আমার প্রতিটা বল সে পাঁচ-সাতবার দেখে।’
ওয়েটারের পরামর্শে এলবো গার্ডের ডিজাইন পাল্টানো হয়। শচীন বলেন, ‘আমি জানি আমি আরাম বোধ করছিলাম না। তবে ব্যাপারটা নিয়ে আমি নিজে কখনো ভেবে দেখিনি। কয়েক বছর পর টানা কয়েকবার আমি এলবোতে ব্যাথা পাই এবং ঠিক এমন এক সময়ই আমি ওয়েটারের সেই কথাটি আবিষ্কার করতে পারি। তখনই আমি বুঝতে পারি আমার এলবো গার্ডটা ঠিক ছিল না। এরপর আমি দ্রুতই সেটা পুনরায় নতুনভাবে ডিজাইন করাই।’
যুগে যুগে ভারতের যে সকল সেরা খেলোয়াড়েরা এসেছে এর মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার ছিলেন নিজেকে নিয়ে বেশ প্রোটেকটিভ। স্পিন বোলাররা বোলিংয়ে আসলে অনেকেই হেলমেট রেখে ক্যাপ নিলেও শচীন বরাবরই হেলমেট পড়েই ব্যাট করতেন সেই সাথে এলবো গার্ডও রাখতেন। যদিও ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি এলবো গার্ড পড়েননি তবে পরবর্তীতে তিনি এটা নিয়মিত পড়তেন বিশেষ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যেখানে বেশ বাউন্স উইকেট থাকে।
শচীনের পুরো ক্যারিয়ারেই তাঁর এলবোতে সমস্যা ছিল। টেনিস এলবো বেশ কিছু সার্জারিও করা হয় তাঁর। এর জন্য বেশ কিছু দিন তিনি মাঠের বাইরেও ছিলেন। তবে ব্যাট হাতে শচীন যখনই নেমেছেন সব সমস্যা দূরে ঠেলে দিয়ে ২২ গজে রান বন্যায় ভাসিয়েছেন।
ভারতের মতো ক্রিকেটপাগলদের দেশে পানওয়ালা থেকে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী – পর্যন্ত ক্রিকেট নিয়ে মতামত দেয়, উপদেশ দেয়। তবে শচীন টেন্ডুলকার চেন্নাইয়ে সেদিন সেই ওয়েটারকে বলার সুযোগ দিয়েছিলেন বলেই তাঁর থেকে পাওয়া পরামর্শ তাঁর ক্যারিয়ারে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। তাই দীর্ঘ এত বছর পরেও সেই ওয়েটারের কথা ভোলেননি এই ক্রিকেট ঈশ্বর।