মাহেলা মোমেন্ট

মাহেলা জয়াবর্ধনে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটসম্যানদের একজন। শ্রীলঙ্কার সাবেক এই অধিনায়ক দেশটির প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক। ওয়ানডে ক্রিকেটেই দেশটির দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন তিনি।

দেশটির হয়ে ২০০৭ ও ২০১১ সালে পরপর দুইটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিলেন মাহেলা। তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান যার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দুটিতেই সেঞ্চুরি আছে। এছাড়া ২০১৪ সালে দেশটির হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জেতেন এই কিংবদন্তি। সব মিলিয়ে ব্যাটিং যদি একটি শিল্প হয় তাহলে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী মাহেলা জয়বর্ধনে। সেই ব্যাটিং শিল্পের কিছু ঝলক আপনাদের জন্য এক করেছে খেলা ৭১।

  • দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৭৪, ২০০৬

রেকর্ড বইয়ের সব পাতা সেদিন নতুন করে লিখতে বাধ্য করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। কলম্বোতে সেই টেস্টে তাঁর সেরা শিল্পকর্মটি করেছিলেন এই শিল্পি। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন মাহেলা। মোট ৪৩ টি বাউন্ডারি মেরে খেলেন ৩৭৪ রানের এক বিশাল ইনিংস।

সেই ম্যাচে কুমার সাঙ্গাকারার সাথে করেছিলেন ৬২৪ রানের এক মহাকাব্যিক জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই দুই ব্যাটসম্যানের সেই জুটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা জুটি। সেই ইনিংসে ৭৫৬ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা মাত্র ৫ উইকেট হারিয়েই। শেষে ১৫৩ রানের জয় পায় দেশটি। তবে সেই ম্যাচ ইতিহাস হয়ে থাকে মাহেলার সেই মহাকাব্যের জন্য।

  • নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৭, ১৯৯৮

সব মিলিয়ে মোট ৩০ উইকেট পড়েছিল স্পিনারদের দাপুটে সেই ম্যাচে। একমাত্র নাথান অ্যাস্টলে বাদে আর কেউ আফ সেঞ্চুরির দেখাও পাননি। তবে সেই ম্যাচে মাহেলা জয়াবর্ধনের টেকনিকের কারুকাজ দেখেছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। বোলারদের সেই স্বর্গে নিজের ব্যাটিং স্কিল দিয়ে একাই গড়েছিলেন প্রতিরোধ। খেলেছিলেন ১৬৭ রানের এক ইনিংস। মাহেলার সেই ইনিংসেই সহজ জয় পায় শ্রীলঙ্কা।

  • নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৫, ২০০৭

২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আরেকটি দর্শনীয় ইনিংস খেলেন এই ব্যাটসম্যান। সেমিফাইনালের সেই বড় মঞ্চে থমকে গিয়েছিল দেশটির ব্যাটিং লাইন আপ। ইনিংসের মাঝপথে মাহেলা যখন আসেন তখন ম্যাচে অনেকটা পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা।

অন্যপ্রান্ত থেকে একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে দলটি। তবে সেই যাওয়া আসার মিছিলে থিতু হয়েছিলেন জয়বর্ধনে। দলকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার মহা দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। ১১৫ রানের এক ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে।

  • ভারতের বিপক্ষে ৯৪, ২০০৫

মাহেলা তাঁর ক্যারিয়ারে বড় ইনিংস খেলেছেন অনেক। তবে ভারতের বিপক্ষে ৯৪ রানের অপরাজিত সেই ইনিংসটি তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা। ভারতের বিপক্ষে হারতে বসা দলকে খাঁদের কিনারা থেকে তুলে আনেন জয়বর্ধনে। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ৯৫ রান। সেই সময়ে উপুল চন্দনার সাথে জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। এটি ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ম্যাচে ফিরে আসার ঘটনা গুলোর একটি।

  • ভারতের বিপক্ষে ২৭৫, ২০০৯

২০০৯ সালে আহেমাবাদের সেই টেস্টে আগে ব্যাট করে বোর্ডে ৪২৬ রান জমা করে ভারত। ভারতের এই পাহাড়সম রানের উত্তর দিতে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা দল। তবে জয়াবর্ধনের ২৭৫ রানের ইনিংস খেলে শুধু ভারত নয় জবাব দেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। আবারো একবার জানান দেন তিনি কেনো সেরাদের সেরা। শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ৭৬০ রান করে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র করতে পেরেছিল ভারত।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link