খুবই আন্ডাররেটেড এক চরিত্র। চুপচাপ খেলে যান, মিডফিল্ডে খেলাটা গড়ে তোলেন নিজের মতো করে। পাস দেন, গতি নিয়ন্ত্রণ করেন — কোন ঝামেলা ছাড়াই। ভুটানের বিপক্ষে মিডফিল্ডে দারুণ নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর। উইঙ্গার হিসেবে খেলে একাধিকবার অ্যাটাকিং থার্ডে এমন পাস দিয়েছে, যা থেকে গোল আসতে পারত সহজেই।
একটা ‘চিকি’ পাস তো ছিল একেবারে চোখধাঁধানো। চোখের পলকে বল পৌঁছে গেছে ফরোয়ার্ডের পায়ে—ডিফেন্ডার বুঝতেই পারেনি।
তাকে অনেকে বলেন বাংলাদেশের ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং, যদিও ফ্র্যাঙ্কি মূলত ডিপ-লাইং মিডফিল্ডার। কাজিম শাহ একটু আলাদা — তিনি বেশি আক্রমণাত্মক। বলা চলে, ডি ইয়ং গেমের টেম্পো ঠিক রাখেন, আর কাজিম আক্রমণের যোগানদাতা। গোলের সুযোগ তৈরি করে, ‘থ্রু বল’ দেন একের পর এক।
তিনি যেন একটু কেভিন ডে ব্রুইনার মতো—দূরদর্শী ও ক্ষুরধার। সময়ের সাথে সাথে হয়তো হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের মিডফিল্ডের প্রধান চালক। শব্দ কম, কাজ বেশি — এই হলো কাজিম শাহ। তাকে ঘিরে আড়োলন না থাকলেও বাংলাদেশের ফুটবলকে আলোকিত করবার রসদ রয়েছে তার পায়ে।
পুরো নাম সৈয়দ শাহ কাজিম কিরমানি। সাবেক ভারতীয় বিশ্বকাপজয়ী উইকেরক্ষক সৈয়দ কিরমানির নামে নাম। কাজিমের বাবাকে নব্বই দশকের ক্রিকেট ভক্তদের মনে থাকার কথা। তিনি হালিম শাহ।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক পরিচিত নাম ছিলেন। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেখানেই চোখে পড়ে যান সবার—প্রতিভা ছিল, ছিল সম্ভাবনার ঝলক। সেই সময়ের কোচ, সতীর্থ থেকে শুরু করে বোর্ডের লোকজন—সবার কাছেই তিনি ছিলেন ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময় ব্যাটার।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন। সবাই ভেবেছিল, খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াবেন হালিম শাহ। কিন্তু প্রতিশ্রুতির শুরু থাকলেও, শেষটায় গিয়ে মিলছিল না সেই আশার প্রতিফলন।
সব স্বপ্নের গল্প যে রূপকথার মতো এগোয় না—হালিম শাহের গল্পটাও ছিল ঠিক তেমন। বাবার হয়ে সেই স্বপ্নটা জিতেছেন কাজিম শাহ, ফুটবল মাঠে, লাল-সবুজ জার্সিতে। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় আর ফুটবল জীবনের ইতি টেনে তিনি এখন বাংলাদেশের। স্বপ্ন বাঁচিয়ে এবার সিঙ্গাপুরকে আটকে ফেলার মিশন। কাজিম শাহ’র বাংলাদেশ কি পারবে?