কাগজে কলমে এই ইউরোর সেরা দল কোনটি? টিম লিস্টের দিকে না তাকিয়েই অনেকে বলে দিতে পারবেন ফ্রান্স। না ফ্রান্স নয়, প্রশ্নটা ভালোমতো শুনুন। ‘কাগজে-কলমে’ এই ইউরোর সেরা দল কোনটি? সেই প্রশ্নের উত্তর হলো বেলজিয়াম।
ফুটবল বিশ্বে বেলজিয়ামের মতন পরিকল্পিত উত্থান দেখেছে খুব কম দেশই। ২০১৪ বিশ্বকাপ ও ২০১৬ ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনাল, এরপর গত বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই তাদের পরিকল্পনা ফলাফল দিচ্ছে। এই শতাব্দীর শুরুতে বেলজিয়াম চষে বেরিয়ে ফুটবল ট্যালেন্ট বের করেছে এজেন্টরা।
যার ফলাফল আজ ইডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা, রোমেলু লুকাকুরা। এই ইউরোও তাই পাখির চোখ করেছে তারা। জেতার পুরো লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে রবের্তো মার্তিনেজের শিষ্যরা। তার আগে দেখে আসা যাক তার ঘোষিত ২৬ জনের দল।
গোলরক্ষক
থিবো কোর্তোয়া (রিয়াল মাদ্রিদ), সিমোন মিনিওলেত (ক্লাব ব্রুগ), মাৎস সেলস (স্ট্রাউসবোর্গ)
ডিফেন্ডার
টোবি অল্ডারভাইরেল্ড (টটেনহাম হটস্পার), দেদ্রিক বোয়াতা (হার্থা বার্লিন), জেসন দেনায়ের (অলিম্পিক লিওঁ), টমাস ভারমায়েলেন (ভিসেল কোবে), ইয়ান ভার্তোনে (বেনফিকা)
উইঙ্গার/উইংব্যাক
তিমোথি কাস্তানিয়ে (লেস্টার সিটি), থমাস মনিয়ের (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড) নাসের শাদলি (ইস্তানবুল বাশেকশেহির), ইয়ানিক কারাসকো (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ), থরগান হ্যাজার্ড (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
এক্সেল উইটসেল (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), হান্স ভ্যানাকেন (ক্লাব ব্রুগ), লিয়েন্দার দেনদঙ্কার (উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স), ডেনিস প্রায়েত (লেস্টার সিটি) কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি), ইয়ুরি তিয়েলেমান্স (লেস্টার সিটি)
ফরোয়ার্ড
ইডেন হ্যাজার্ড (রিয়াল মাদ্রিদ), জেরেমি ডোকু (রেনেঁ), ড্রেস মের্তেন্স (নাপোলি), লিয়ান্দ্রো ত্রসার (ব্রাইটন) রোমেলু লুকাকু (ইন্টার মিলান), ক্রিস্টিয়ান বেনটেকে (ক্রিস্টাল প্যালেস), মিচি বাতশুয়াই (ক্রিস্টাল প্যালেস)
কোচ: রবার্তো মার্টিনেজ
অধিনায়ক: ইডেন হ্যাজার্ড
- শক্তিমত্তা
বেলজিয়ামের শক্তির সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তাদের বিশাল স্কোয়াড। ২৬ জনের ২৬ জনই মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়ার মতন। কোচ রবার্তো মার্তিনেজকে তাই বেশ সতর্ক থাকতে হবে একাদশ গঠনের সময়। ভুলে ম্যাচ হাত গলে বেরিয়ে গেলে কথা শুনতে হবে তাকেই।
নিয়মিত অধিনায়ক ইডেন হ্যাজার্ডের মৌসুমটা ভালো যায়নি। বরং চোটে চোটে মৌসুমে শেষ হয়ে গিয়েছে তার। তাকে ছাড়াই ইউরো কোয়ালিফায়ার পাড়ি দিয়েছে তার সতীর্থরা। তাতেই বোঝা যাচ্ছে দলে ট্যালেন্টের অভাব নেই।
এই মৌসুমে ইউরোপিয়ান টপ ফাইভ লিগে আধিপত্যের পেছনে বড়সর প্রভাব রেখেছেন বেলজিয়ান খেলোয়াড়েরা। মূল স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু ইন্টারের হয়ে এই মৌসুমে করেছেন ৩০ গোল। তার উপরে ভর করেই অ্যান্তোনিও কন্তে ভেঙ্গেছেন জুভেন্টাসের সিরি আ রেকর্ড। ইউরোপের সেরা মিডফিল্ডারের তকমা লেগেই আছে ডি ব্রুইনারগায়ে। ম্যানচেস্টার সিটি প্রতিটি ম্যাচে তার উপর ভরসা করেছেন গার্দিওলা। ফাইনালে যেই না ফসকেছেন, সেই যেন খেলাটা বেরিয়ে গিয়েছে তাদের হাত থেকে।
লেস্টারকে এফএ কাপ জিতিয়েছেন তিয়েলেমান্স, রিয়াল-বার্সাকে টপকে ৭ বছর পর অ্যাটলেটিকোর লিগ জয়েও বড় অবদান আছে ইয়ানিক কারাসকোর। শুধু তাই নয় এবারের লিগে ১৭ টি ক্লিনশীট রেখেছেন থিবো কর্তোয়া। তিনকাঠির নিচেও বেলজিয়াম বেশ সলিড।
- দূর্বলতা
দলের বর্তমানে মূল সমস্যা দুই প্লেমেকারের ইনজুরি। চোটের কারণে দলের নিয়মিত অধিনায়ক ইডেন হ্যাজার্ড খেলতেই পারেননি পুরো মৌসুম। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন কেভিন ডি ব্রুইনাও। দুজনকে ছাড়া যে বেলজিয়াম চলবে না, ব্যাপারটা তা নয়।
কিন্তু দলের সুই অধিনায়ক আর প্লেমেকারকে ছাড়াই শুরুর কয়েকটা ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। আর ফেরার পরেও সেই দূর্দান্ত ফর্মে থাকবেন কীনা সেটাও প্রশ্ন। তাদের খেলা না খেলার উপর নির্ভর করছে বেলজিয়ামের কৌশল, সেই সাথে ভাগ্যও।
ঐতিহ্যগতভাবে ফুলব্যাক পজিশনে বেশ দুর্বল বেলজিয়াম। এত বছরেও ভালো কোনো রাইট এবং লেফট ব্যাক তৈরি করতে পারেনি তারা। যে কারণে মার্তিনেজ দলকে খেলান ৩-৪-৩ ফরমেশনে। কিন্তু সেখানেও চিন্তার ভাঁজ রয়েছে। গত বিশ্বকাপে ডিফেন্সের ধারকবাহিক হয়েছিলেন ভিনসেন্ট কোম্পানি। এবার তিনি নেই। যে কারণে তার জায়গাটা কী ঠিকভাবে সামাল দিতে পারবেন কীনা লিওঁর জেসন দেনায়, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
সেই সাথে বেলজিয়ামের উইংব্যাকদের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। ডানে থমাস মুনিয়ের নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিলেও বামে কেউই নির্ভরযোগ্য হতে পারছেন না। থরগান হ্যাজার্ড, ইয়ানিক কারাসকো কিংবা নাসের শাদলি—সকলেই নিজ নিজ ক্লাবে উইঙ্গার। উইংব্যাক হিসেবে দিনশেষে ট্র্যাকব্যাক করতে তাদের বড্ড অনীহা। ফলে এ জায়গায় সামান্য চিন্তার ভাঁজ তয়ে গিয়েছে মার্তিনেজের।
মাঝমাঠে তিয়েলেমানসের সঙ্গী নিয়েও একটা চিন্তা আছে বটে, কিন্তু মিডফিল্ডে ট্যালেন্টের মাঝ থেকে একজনকে বের করে ফেলতে পারবেন রবার্তো মার্তিনেজ। বলতে গেলে মার্তিনেজের বেশিরভাগ সমস্যাই দলের চোট নিয়ে। তা মানিয়ে নিতে পারলে নিয়ার পারফেক্ট একটা দল নিয়ে ইউরো যাত্রা করছে তারা।
- সম্ভাব্য একাদশ
একাদশ নির্ভর করছে ডি ব্রুইনা আর হ্যাজার্ড ফিরছেন কীনা তার উপর। নইলে ইডেন হ্যাজার্ডের জায়গা দখল করবেন তার ভাই থোরগান হ্যজার্ড আর ডি ব্রুইনার জায়গা দ্রিস মের্তেন্স। নইলে একাদশ অনেকটা এরকমই হবে।
প্রতিপক্ষ ও ম্যাচ: (বাংলাদেশ সময়)
রাশিয়া, ১৩ জুন, রাত ১টা
ডেনমার্ক, ১৭ জুন, রাত ১০টা
ফিনল্যান্ড, ২২ জুন, রাত ১টা
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গ্রুপ থেকে সেরা হয়েই পরের রাউন্ডে যাওয়ার কথা বেলজিয়ামের। রাউন্ড অফ সিক্সটিনেও খুব একটা কঠিন প্রতিপক্ষ পরার কথা না বেলজিয়ামের। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। এই ইউরো আর সামনের বিশ্বকাপই তাদের শেষ সুযোগ। নিজেদের বিদায়টা রাঙিয়ে তুলবার জন্য বড় শিরোপার বিকল্প কিছু নেই। এমন একটা দল নিয়ে শিরোপা জেতার আশা করতেই পারে বেলজিয়ামবাসী।