২০০৪ সাল। প্রথমবারের মত ইউরো খেলতে নেমেছিলেন। নেমেই ফাইনাল। ফাইনালে হার, গ্রিস রূপকথায় স্বপ্নভঙ্গ হয় পর্তুগালের সোনালী প্রজন্মের।
তখন আর কতই বা বয়স, কতই বা অভিজ্ঞতা। সেদিনের যে কিশোর বয়স পেরোনো তরুণটি অঝোরে কেঁদেছিলেন, আজ তিনি বিশ্বফুটবলের মহীরূহ। আর ইউরোপিয়ান ফুটবলের মঞ্চে তিনি বিরাট এক ব্যক্তিত্ব। তিনি এখন ইউরোপিয়ান মঞ্চে সর্বোচ্চ গোলদাতা।
নামটা নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। নয়টা গোল তিনি আগেই করে রেখেছিলেন, ফরাসি কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনির পাশে নামটা আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। এবার হাঙ্গেরির বিপক্ষে করলেন আরো দু’টি গোল। এখন তিনি ১১ টি গোল নিয়ে ইউরোর গোলদাতাদের আসনে এককভাবে সিংহাসনে বসলেন।
রোনালদোর আন্তর্জাতিক গোল এখন ১০৬ টি। আলি দায়ি’র ১০৯ টি আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার আর বুঝি বেশি সময় বাকি নেই।
হাঙ্গেরির বিপক্ষে শুরুতে মোটেও সুবিধা করতে পারছিল না। বিশেষ করে হাঙ্গেরিয়ানদের অতিরিক্ত শারীরিক ফুটবলে বারবার মার খাচ্ছিল পর্তুগিজদের আক্রমণগুলো। সেই অচলায়তন ভাঙে ৮০ মিনিটের পর গিয়ে। আর তিনটির মধ্যে দু’টিই আসে রোনালদোর মাধ্যমে।
ম্যাচটাকে চাইলে রোনালদোর গোটা ইউরো জীবনের মত করেও দেখা যায়। একটা শিরোপার জন্য এই মানুষটা কিই না করেছেন। ২০০৪ সালের সেই ফাইনাল হারের পর ২০১২ সালেও গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। সেবার সামনে স্পেন। এবার টাইব্রেকারে বাদ পড়লেন। তিনি শ্যুট নেওয়ার আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেল ম্যাচের।
চার বছর পরই অবশ্য সেই দু:স্বপ্নের ইতি ঘটিয়েছিল পর্তুগিজরা। ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ফ্রান্স, স্পষ্ট ফেবারিট। ইনজুরি নিয়ে ম্যাচের প্রথম দিকেই মাঠের বাইরে সিআর সেভেন। নাহ, এবার হয়তো হবে না।
রোনালদো খেললেন, মাঠ থেকে না পারলেও মাঠের বাইরে থেকে। মূল কোচের সাথে তিনিও সেদিন আবির্ভূত হলেন কোচের ভূমিকায়। সাইডলাইনে থেকেও হয়ে উঠলেন সত্যিকারের নেতা। সেদিন অতিরিক্ত সময়ের গোলে জিতে যায় পর্তুগাল। প্রথমবারের মত ইউরোপের সেরার পুরস্কার ওঠে পর্তুগালের হাতে।
রোনালদো এমনই, মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে – তিনি জিততে জানেন। এই যেমন হাঙ্গেরির বিপক্ষে মাঠে নামার আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে। টুর্নামেন্টের অফিসিয়াল স্পন্সরদের একজন কোকাকোলার বোতল সরিয়ে পানির বোতল দেখিয়ে বললেন, ‘কোকাকোলা নয়, পানি খান।’
এই কথাটা বলার জন্য বলতেও ‘কলিজা’ দরকার। আজকের দিনের বানিজ্যিক ফুটবলের দুনিয়ায় এমন মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে। সেই ঘটনার পর কোকাকোলার ব্র্যান্ড ভ্যালুতে এসেছে বিরাট রদবদল, শেয়ারের দাম কমে গেছে। রোনালদো তাতে থোড়াই কেয়ার করেছেন।
তাঁর সাফ কথা, ‘আমার ছেলে মাঝেমধ্যে কোক-ফান্টা আর চিপস খায়। ও জানে আমি সেটা পছন্দ করে না।’
কাগজে কলমে, অন্তত একটা পয়েন্ট আদায় করে নেওয়ার জন্য ম্যাচে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছে হাঙ্গেরি। কিন্তু, বুদাপেস্টে সেটা হতে দেয়নি রোনালদোর দল। ‘এফ’ গ্রুপটাকে বলা হচ্ছে ইউরোর মৃত্যুকুপ। সেখানে আরো আছে জার্মানি ও ফ্রান্স। কার্য্যত, এই দুই দলই এগিয়ে। কিন্তু, রোনালদো যেভাবে শুরুটা করলেন, তাতে বরং এখন সেই ফরাসি আর জার্মানদেরই এখন সতর্ক থাকতে হবে।
কে বলবে এই লোকটার বয়স ৩৬!