বাঙালি চায়নি সুইসরা হারুক

সুইজারল্যান্ড কি অমরত্ব চেয়েছিলো?

ইউরোর খেলা চলছে। তখন, রাত বারোটা পাঁচ। বঙ্গবাসীর নৈশযাপনে দিনের রেখা আঁকছে ইয়ান সমারের ফিস্ট। ঢুলে আসা চোখে পেপ টক দিচ্ছে আহত গ্রানিত জাকা। বঙ্গবাসী কি সুইশদের জয় চেয়েছিলো? ম্যাচের সাতাত্তর মিনিটের সেই লাল কার্ড — রাত সাড়ে এগারোটার বাঙালি টেবিলে মারছে চাপড়।

আরো পড়ুন

তারপর থেকে চুয়াল্লিশ মিনিটের মরণপণ সুইস কমিটমেন্ট — মধ্যরাত্রের বাঙালির বুকে ঘনাচ্ছে অলীক আশা। বহু দূর দেশের সমfর, শাকিরি, এলভেদির নাছোড়বান্দা লড়াই বাঙালিদের অজান্তেই বাঙালিকে নিয়ে যাচ্ছে একটা অসম্ভব আশার কক্ষপথে, আস্তে আস্তে, নি:শব্দে। বাঙাশি আশা দেখতে ভালো বাসে।

প্রতিটি পিছিয়ে পড়া দেশের ফুটবল লড়াইয়ের মধ্যে বাঙালি নিজেকে খুঁজতে চায়। এলভেদি-আকিঞ্জির প্রতিটা ক্লিয়ারেন্স বাঙালির ধুকপুকে বুকে টেনে যাচ্ছে অলীক আশার এক একটা রেখা। বঙ্গবাসী কি গতরাত্রের সুইসদের একটু বেশিই ভালোবেসেছিল? সুইজারল্যান্ড তো বাঙালির দেশ নয়।

সমার, এলভেদি, রডরিগেজরা তো গুরপ্রিত-সানা-সন্দেশ নয়। কিন্তু ঘুমু ঘুমু চোখের বাঙালি কি রেড ক্রস মারা সুইস পতাকায় নিজেদের বুভুক্ষু স্বপ্নিল চোখের ক্ষুধার্ত অবয়বকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো নয়। ঠিক কী খুঁজছিলো তারা? নিজেদের? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো নয়। কে জানে!

রাত বারোটা দশ। রুবেন ভার্গাসের অসহায় মুখ আশ্র‍য় নিচ্ছে পেটকোভিচের কোর্ট পরা বুকে। কোর্ট ভিজছে, একটু একটু। বাঙালিও ভিজছে হয়তো। রাত সাড়ে বারোটা। নতুন ম্যাচ। নতুন মাঠ। রাশিয়ার ক্রেসতভস্কি স্টেডিয়াম থেকে স্যাটেলাইট মুহূর্তে পৌঁছে গেলো মিউনিখের অ্যালায়েঞ্জ এরিনায়।

বাঙালির মনন পারলো কই আর অতো দ্রুত অন্য ম্যাচে পৌঁছে যেতে, স্যাটেলাইটের মতো করে? চিজে, ইমমোবিলে কিংবা ইনসিগনের দূরন্ত ফুটবলের মাঝেই বাঙালির মননে হালকা হালকা শ্যাডো হচ্ছে ভার্গাসের অসহায় মুখ, টাইম মেশিনে চড়ে বাঙালি দেখছে ভার্গাসের কান্না ভিজিয়ে দিচ্ছে পেটকোভিচের কোর্ট। ইউরো ২০২০’এর লড়াকু সুইসরা অমরত্ব চায়নি, বাঙালি দিয়ে দিলো তাঁদের, অজান্তেই, একদম মুহূর্তের মধ্যে।

বাঙালি কি চেয়েছিলো সুইজারল্যান্ড জিতুক? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো নয়,হয়তো বা কেউ স্প্যানিশ জয়ের প্রহর গুনছিলো। কিন্তু, বাঙালিরা যে মোটেও চায়নি সুইসরা হারুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link