পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচেই বোলাররা ধারাবাহিক ভাবে ভালো করলেও এখনো নিজেদের সেই ভাবে মেলে ধরতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তিন ম্যাচে দলের পক্ষে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিটি করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
তবে বাংলাদেশের অধিনায়কের মন্থর ব্যাটিংয়ে করা এই হাফ সেঞ্চুরিটি নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। যাই হোক তার ৫৩ বলে ৫২ রানের ইনিংসেই লড়াই করার পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত এই রান নিয়েই জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা। এই ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ সেরা হলেও দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান অবশ্যই মুস্তাফিজুর রহমানের।
এই পেসারের দারুণ এক ওভারেই প্রায় হারতে বসা ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বাংলাদেশ। চার ওভারে মাত্র নয় রান দিয়ে তাই পার্শ্বনায়ক মুস্তাফিজ। আর প্রথম ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে সব আলো নিজের করে নিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। আর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ছিটকে যাওয়া ম্যাচে ৩৭ রানের কার্যকরি ইনিংস খেলে জিতিয়েছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।
তবে গত তিন ম্যাচেই ব্যাটে বলে সমান তালে অবদান রেখে পার্শ্বনায়ক ছিলেন একজন। তিনি সাকিব আল হাসান – তিন ম্যাচেই এই অলরাউন্ডারের অনবদ্য পারফরম্যান্স ঢাকা পরে গেছে অন্য কারো পারফরম্যান্সের ছাঁয়া তলে। সিরিজের তিন ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৮ রান। সাকিবের স্টাইকরেট ১৩১.৩৪, যা এই সিরিজের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই অনবদ্য। বল হাতে এই তিন ম্যাচে মাত্র ৫.৬৬ ইকোনোমিতে সাকিবের শিকার তিন উইকেট।
এইটুকু পরিসংখ্যানে সাকিবের এই তিন ম্যাচের জয়ে অবদান বোঝানো হয়তো সম্ভব নয়। সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে আরো একটু বিশ্লেষণ করা যাক। তিন ম্যাচেই ধারাবাহিক ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। ইনিংস বেশি বড় করতে না পারলেও প্রতি ম্যাচেই দারুণ ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
প্রথম ম্যাচে চতুর্থ ওভারেই উইকেটে এসে দলের হাল ধরেছিলেন সাকিব। বাকিদের যাওয়া আসার মিছিলে এক প্রান্ত আগলিয়ে রেখে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ বলে ৩৬ রান করেন সাকিব। স্টাইকরেট নিয়ে কারো কারো প্রশ্ন থাকলেও এই ইনিংসে ভর করেই ১৩১ রানের লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। যা জয়ের জন্য এই উইকেটে যথেষ্ট ছিল। এরপর বল হাতে চার ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে শিকার করেন এক উইকেট।
দ্বিতীয় ম্যাচে ১২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ দলীয় ৩ রানেই হারায় দুই ওপেনারকে। পাল্টা আক্রমণে চাপে থাকা বাংলাদেশকে মোমেন্টাম এনে দেন সাকিব। ইনিংস বেশি বড় করতে না পারলেও সাকিবের ১৭ বলে ২৬ রান দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর বল হাতে চার ওভারে ২২ রান দিয়ে শিকার করেন এক উইকেট।
শেষ ম্যাচেও একই পরিস্থিতিতে ব্যাটিংয়ে নেমে করেন ১৭ বলে ২৬ রানই। বল হাতেও আগের ম্যাচের মতই চার ওভারে ২২ রান দিয়ে শিকার করেন এক উইকেট। তবে গতকাল পাওয়া উইকেটের কথা একটু আলাদা করে বলতেই হয়। ১২৭ রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৮ রানে প্রথম উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে বেন ম্যাকডারমট ও মিশেল মার্শের জুটিতে ক্রমেই জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সফরকারীরা।
সব ধরণের চেষ্টা করেও এই জুটিকে থামাতে পারছিল না বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে এই জুটির ৬৩ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৭১। অর্থ্যাৎ হাতে ৯ উইকেট নিয়ে প্রয়োজন ছিল ৪০ বলে ৫৭ রান। দারুণ এক বলে এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন সাকিব। মূলত এই জুটি ভাঙার পরই অস্ট্রেলিয়াকে পুরোপুরি চেপে ধরে স্বাগতিক বোলাররা।
শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে এই অলরাউন্ডারের অবদান দেখতে চাইলাম না দেখেই এতো বিশ্লেষণ। তবে সেই পরিসংখ্যান দিয়েই কাকতালীয় ভাবে গত দুই ম্যাচে দারুণ এক মেলবন্ধন তৈরি করেছেন সাকিব। যা দেখলে চমকে উঠতে পারেন আপনিও।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিব রান করেন ২৬, গতকালও রান করেছেন ২৬। দ্বিতীয় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিব বল খেলেন ১৭টি, গতকালও বল খেলেছেন ১৭টি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে চার মারেন চারটি, গতকালও চার মেরেছেন চারটি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইকরেট ছিলো ১৫২.৯৪, গতকালও স্ট্রাইকরেট ছিলো ১৫২.৯৪।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আউট হন ইনিংসের নবম ওভারে, গতকালও আউট হয়েছেন ইনিংসের নবম ওভারে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সাকিব একমাত্র উইকেটটি পেয়েছেন নিজের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে, গতকালও একমাত্র উইকেটটি পেয়েছেন চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে চার ওভারে সাকিব দিয়েছিলেন ২২ রান, গতকালও চার ওভারে গুনেছেন ঠিক ২২ রানই।