অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিট চলছে। এমন সময় ম্যানেজার দ্রুত ডাক পাঠালেন চতুর্থ রেফারিকে, দ্রুত বদল করতে হবে খেলোয়াড়। বেঞ্চ থেকে উঠে এলেন রিজার্ভ গোলরক্ষক, মাঠে থাকা গোলরক্ষকও গ্লাভস খুলতে খুলতে বেরিয়ে এলেন।
ভিনি, ভিসি, ভিডি! বেঞ্চে থাকা গোলরক্ষক এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। এমন ঘটনা শেষ কোনটা মনে করতে পারেন, বলুন তো? শেষ এমনটা ঘটেছিল ২০১৪ বিশ্বকাপে, কোস্টারিকার বিপক্ষে জ্যাস্পার চিলিসেনকে সরিয়ে টিম ক্রুলকে নামিয়েছিলেন কোচ লুই ভ্যান হাল। সেদিনের হিরো হয়ে উঠেছিলেন ক্রুল।
গতকাল সেটাই করেছেন থমাস টুখেল। শেষ মিনিটে বাজির দর ধরেছিলেন কেপা আরিজাবাগালার উপর। পুরো মৌসুম অসাধারণ খেলা এডুয়ার্ড মেন্ডিকে সরিয়ে নামিয়েছিলেন কেপাকে। আর চেলসির ভিলেন থেকে রাতারাতি হয়ে উঠলেন হিরো!
বেশিদিন আগে নয়, এমন এক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল চেলসি। ২০১৯ সালের কারাবাও কাপ ফাইনালে তিনি ছিলেন মাঠে। কিন্তু কোচ মাউরিৎজিও সারির পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম। এক্সট্রা টাইমের শেষ সময়ে তার ভরসা ছিল বেঞ্চে বসে থাকা গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরোর উপর। সকলে যখন তৈরি খেলোয়াড় বদলানোর জন্য, ঠিক সে সময়ে বেঁকে বসেন কেপা। মাঠ থেকে চিৎকার করে বলতে থাকেন, আমি পারবো, উঠবো না আমি। পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে সেদিন দেখেছিল কোচের বিরুদ্ধে কীভাবে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন কেপা।
ফলশ্রুতিতে বেঞ্চেই থাকতে হয় কাবায়েরোকে, রাগ করে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিলেন কোচ সারি। এমনকি পেনাল্টি বুঝিয়ে দেওয়ার সময়ও কথা বলেননি কেপার সাথে। সেদিনও দূর্দান্ত এক শট থামিয়ে দিয়েছিলেন কেপা। কিন্তু সতীর্থদের ব্যর্থতায় শিরোপা আর তুলে ধরা হয়নি তাদের। কোচের নির্দেশ অমান্য করায় পরে জরিমানাও গুনতে হয় স্প্যানিশ গোলরক্ষককে।
সেই থেকে শুরু হয়েছিল কেপার ডাউনফল। সে ম্যাচে ভালো করলেও আস্তে আস্তে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা হারাতে শুরু করেন তিনি। বাজে সব ভুল, খেলার মনোযোগ হারিয়ে দ্রুতই মূল দলে জায়গা হারান। খেলার বাইরে ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার প্রভাব পড়েছিল খেলার মাঠে। আর তাতেই চেলসির এত দামী গোলরক্ষক হয়ে যাব চেলসির ভিলেন।
m ১১৯ মিনিটে যখন ডাক পড়ল এডুয়ার্ড মেন্ডির। মেন্ডিও চুপচাপ মাঠ থেকে বেরিয়ে এলেন, সুযোগ করে দিলেন কেপাকে, আরেকবার চেলসির হিরো হওয়ার। যে হিরো হতে বিলবাও ছেড়ে চেলসিতে এসেছিলেন তিনি, দ্বিতীয়বারের মতন সেটা করে দেখাতে। আর টাইব্রেকারে সে হিরোই হয়ে দেখালেন কেপা!
নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলেই শেষ হয়েছিল। ২৭ মিনিটে গোল করে চেলসিকে এগিয়ে নেন মরক্কোর মিডফিল্ডার হাকিম জিয়েখ। পুরো ম্যাচে একের পর এক আক্রমণ করে গেলেও ঠিক লক্ষ্যভেগ করতে পারছিল না ভিয়ারিয়াল। এমনকি দুইবার বল গোলপোস্টে লেগে ফেরতও এসেছে।
শেষপর্যন্ত ৭৩ মিনিটে ভিয়ারিয়ালকে সমতাসূচক গোলটি এনে দেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জেরার্ড মোরেনো। শেষ পর্যন্ত আর গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানেই স্প্যানিশ দলের বিপক্ষে হিরো হয়ে উঠেন আরেক স্প্যানিশ।
টাইব্রেকারে চেলসির প্রথম শট নিতে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন কাই হাভার্টজ। মিস করে বসেন তিনি। যদিও কেপা তার সতীর্থকে রক্ষা করতে বিন্দুমাত্র সময় নেননি। আইসা মান্দিরের শট রুখে দিয়ে সমতায় ফেরান দলকে। এরপর সপ্তম পেনাল্টিতে গিয়ে ভিয়ারিয়ালের অধিনায়ক রাউল আলবিওলের শট ডানদিকে দূর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন কেপা। আর সেই সাথে নিশ্চিত হয়ে যায় চেলসির জয়।
গত দুই মৌসুম ধরে যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তার সবটাই যেন পূর্ণতা পেলো আজ। চেলসির মূল একাদশ থেকে বাদ পরেছেন, স্পেন দলেও ডাক পাননি তিনি। নিজের ব্যক্তিগত জীবন, খেলোয়াড়ি জীবন দুটোই ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল দুই বছরে। আজ সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হয়েছেন চেলসির হিরো। দক্ষিণ বেলফাস্ট স্টেডিয়ামে প্রায় ১৩ হাজার দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন তার পারফরম্যান্স দিয়ে।
কোচও নিজের খেলোয়াড়ের প্রশংসা করতে ছাড়েননি, ‘কেপার পেনাল্টি ঠেকানোর হার সেরাদের কাতারে। বিশ্লেষকেরা আমাকে তা দেখিয়েছেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম নকআউট ম্যাচে এমন (কেপাকে নামানো) হতে পারে।’ কেপা সে বিশ্বাসের মান রেখেছেন, তা তো বলতেই হবে।