‘We did what our manager asked to do, don’t let Pele shoot. Shame that he got to tell to not let him pass either.’
– ববি মুর
প্রচুর ফুটবল ফলো করা হয় বলে একটা ফুটবল গ্রুপে আমার অ্যাক্টিভিটি আছে। কয়েকদিন আগে ১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে হেড থেকে করা পেলের গোলটার একটা কোলাজ ছবি শেয়ার করি। সাধারণত এধরণের গ্রুপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হেড এর ব্যাপারে কোন পোস্ট হলে প্রচুর সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু দেখা গেল পেলের ওই পোস্টে তেমন কোন আলোচনা বা সমালোচনা কিংবা ‘ট্রল’ পর্যন্ত হয় নাই।
অর্থাৎ ওই পোস্টটি বেশিরভাগ মেম্বারই এড়িয়ে গেছে। এটা নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত কোন হতাশা বা ক্ষোভের কারণ নেই, কিন্তু একজন সত্যিকার ফুটবলপ্রেমিতো পেলের মতো কিংবদন্তির এমন সুন্দর একটি গোলের পোস্টকেতো একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার কথানা।
এটা যেকোন সময়ের জন্যই এটা একটা সমস্যা যে, কিংবদন্তিরা একটা নির্দিষ্ট জেনারেশন পার হয়ে যাওয়ার পর তাদের ব্যাপারে নতুন জেনারেশনের জানার আগ্রহ তৈরি হয়না। কিন্তু পেলেতো আর অন্য আর দশ জন কিংবদন্তিদের মতো না। পেলেই তো ফুটবলকে ‘বিউটিফুল গেম’ নাম দিয়েছেন। পেলের হাত ধরেই প্রথম ‘সর্বকালের সেরা ফুটবলার’ ধারণার শুরু হয়। আর তাছাড়া বাঙালিদের মধ্যে সেলেসাওদের সমর্থকও অজস্র।
এতকিছুর পরও কেন এধরণের পোস্ট তেমন কোন সাড়া পড়েনি? এটার কারণ চিন্তা করতে গিয়ে আমার মনে হলো পেলে সম্পর্কে আসলে বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমীর ধারণা কম কিংবা একেবারেই নাই। এজন্য পেলের টপিক যখন কোথাও আসে সেখানে একজন ব্রাজিল ফ্যানও বলতে পারবেনা কেন সে পেলে কে সেরা বলছে বা একজন প্রতিদ্বন্দি দলের সমর্থক জানে না কেন পেলে কে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় বলা হচ্ছে।
এখানে আমি একটা ভিডিও শেয়ার করছি। ভিডিওটি দেখার পরই আসলে লেখার পরবর্তী অংশ পড়তে হবে।
এই ভিডিওর তিনটা পার্ট আছে। একটা হলো ১৯৬৬ বিশ্বকাপের, আর দুইটা ১৯৭০।
- ১
১৯৬৬ বিশ্বকাপের ক্লিপ্স গুলা একটু দেখুন, দেখা শেষ হলে আবার দেখুন। পেলে কে থামানোর জন্য সেই বিশ্বকাপে ইউরোপের দলগুলো এত বাজেভাবে ট্যাকল করে যেগুলাকে আসলে শুধুমাত্র ফাউল বলা যায়না, অপোনেন্ট প্লেয়াররা রীতিমত কিক করছিল পেলের পা কে উদ্দেশ্য করে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এগুলার জন্য কোন প্লেয়ার লাল কার্ডতো দূরে থাক, হলুদ কার্ডও পায়নি – কারণ তখনো আন্তর্জাতিক ফুটবলে কার্ডের নিয়ম চালু করেনি ফিফা। সেবার পর্তুগালের বিপক্ষে ইনজুরি নিয়েই ম্যাচের অনেকটা সময় খেলেন পেলে। ওই বিশ্বকাপের পর পেলে রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়ে আর ফুটবল না খেলারও ঘোষণা দেন, যদিও পরবর্তিতে সে সীদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এরপর ১৯৭০ বিশ্বকাপে কার্ড এর নিয়ম যুক্ত করা হয়।
ভিডিওতে দুইজন ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতামত ছিল এমন, এতো অসাধারণ একজন প্লেয়ারকে যেভাবে পর্তুগালের খেলোয়াড়েরা ফাউল করেছে এই সময় এমন ট্যাকটিক্সে খেললে ওই দলের অর্ধেক প্লেয়ারকেই লাল কার্ড দেখতে হতো কারণ এর সবগুলোই ‘রেকলেস ট্যাকেল’-এর অন্তর্ভুক্ত হতো যার শাস্তি সরাসরি লাল কার্ড। এবার এমন “র্যাকলেস ট্যাকেল” নিয়ে একটা অ্যানালোজি দেই।
একটা প্লেয়ারকে ঠিক কখন এতোটা বিশ্রীভাবে ট্যাকেল করা হয়? যখন ওই প্লেয়ারটাকে থামানোর কোন উপায় জানা থাকেনা থাকেনা প্রতিপক্ষের। বর্তমান সময়ে লিগ ওয়ানে নেইমার এমন ট্যাকেল সহ্য করে, কিন্তু সেগুলার মাত্রা পেলের সময়ের ধারেকাছেও না।
আমার দেখা অনুযায়ী পেলের কাছাকাছি সর্বশেষ এমন সরাসরি শারিরীকভাবে আক্রমণাত্মক ফাউলের শিকার হয়েছে মেসি। বিশেষকরে মোরিনহোর আমলে যখন রিয়াল মাদ্রিদ ওকে থামানোর কোন উপায় পাচ্ছিলনা তখন রামোস, পেপে, আলোনসোরা সরাসরি মেসির পায়ে আঘাত করা শুরু করে।
এখন ১৯৬৬ এর সাথে ওই ক্লাসিকো গুলোর পার্থক্য হচ্ছে রামোস চাইলেই দ্বিতীয় বার সেরকম ফাউল করতে পারতোনা কারণ এরমধ্যেই তাকে লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়া লাগতো। কিন্তু ১৯৭০ এর আগে এমন ফাউলের ক্ষেত্রে বড়জোর ফ্রিকিক হতো। সুতরাং ডিফেন্ডাররা ফাউল করার ব্যাপারে আরো বেশি এগ্রেসিভ ছিল কারণ সেখানে লাল কার্ডের ভয় ছিলনা।
- ২
এবার ভিডিওর পরের অংশে আসা যাক। ভিডিওর দ্বিতীয় অংশে ১৯৭০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেলের পারফর্মেন্সের কিছু অংশ দেখানো হয়েছে। শুরুতে পেলের করা একটা হেড বার বার দেখানো হয়েছে। সেই সময়েই এতো উচ্চতায় উঠে বাতাসে ভেসে থেকে পেলের জোরালো হেডটা ইংল্যান্ডের গোলকিপার গর্ডন ব্যাংক সেইভ করে ফেলেন যেটাকে ইতিহাসের সেরা সেইভ বলা হয়। শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে চিন্তা করলে এটা প্রমাণ করে যে পেলের এথলেটিক এবিলিটি ছিল টপ ক্লাস। ইংল্যান্ডের সাথে হেডটি গোলে পরিণত না হলেও একই ধরণের হেডেই ইতালির বিপক্ষে সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেন পেলে।
এবার আসেন ভিডিওর শেষ অংশে। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? একজন প্লেমেকার কিভাবে মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে সতীর্থের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান খেলে স্পেস ক্রিয়েট করছে। বল নিয়ে টার্ন করেই কত সহজে ইংল্যান্ডের প্লেয়ারদের বোকা বানাচ্ছে। নাটমেগ করছে। তিনজন ইংলিশ ডিফেন্ডার ঘিরে ধরলে কিভাবে সেখানে থেকে বলটা সতীর্থকে ডেলিভার করছে।
সবশেষে একইভাবে ডিবক্সে যখন পেলে বল পেলো, তখন ইংলিশ প্লেয়ারদের ধারণা ছিল পেলে হয়তো শ্যুট করবে সেখান থেকে। আর এমন ধারণা হওয়াটা অমূলক না, পেলের অফিশিয়াল ক্যারিয়ার গোল ৭৫৭। পেলের স্কোরিং এবিলিটি নিয়ে তাদের ধারণা স্পষ্ট ছিল৷ আমরা বর্তমান সময়ে মেসি বা রোনালদোদের দেখে ক্যারিয়ারজুড়ে সাত শতাধিক গোল করতে কতটা ধারাবাহিক হতে হয় সেটা বুঝতে পারি। কিন্তু পেলেতো যাস্ট গোল স্কোরার ছিলনা। সম্প্রতি ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন সর্বকালের সেরা একাদশ তৈরি করতে গিয়ে পজিশন অনুযায়ী প্লেয়ারদের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করে সেখানে পেলে আছেন “এটাকিং মিডফিল্ডার” ক্যাটাগরিতে।
গোলের সংখ্যা দেখে যে জানেনা সে হয়তো অজান্তে ধরে নেয় পেলে হয়তো স্ট্রাইকার ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গোল বাদ দিলে পেলে ছিলেন একজন এটাকিং মিডফিল্ডার এবং বলের উপর তার কন্ট্রোল ছিল টপ টপ লেভেলের। বর্তমানে মেসিকে দেখলে হয়তো বুঝা যায় এই কম্বিনেশনটা কেমন হতে পারে। মিডফিল্ডার, আবার একই সাথে প্রচুর গোল। একজন প্লেয়ারের ভিশন, কন্ট্রোল, ফিনিশিং – সব যখন একেবারে চূড়ান্ত মাত্রায় থাকে তখন আসলে তাকে থামানো অনেক কঠিণ হয়ে যায় প্রতিপক্ষের।
পেলে যখন মুভ করতো তখন অপোনেন্টের জন্য অনেকগুলা অপশন মাথায় রাখা লাগতো। পেলে ড্রিবল করবে? নাকি পাস দিবে? নাকি নিজেই শুট করবে। যেমন, ১৯৫৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেলে ডিবক্সে বুক দিয়ে বল রিসিভ করে ডিফেন্ডার মাথার উপর বল নিয়ে গিয়ে ভলি থেকে গোল দেয়। ওই সময়ে ডিবক্সের মধ্যে এমন স্কিল প্রদর্শন করে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল দেয়ার কথা কেউ ঘুনাক্ষরেও হয়তো ভাবতোনা। একই ফাইনালে পেলে হেড থেকে আরো একটা গোল করেন যেটাতে প্রচুর বল প্রয়োগ হেড করেন নি, সেটা অনেকটা হেড দিয়ে লব করেন গোল্কির মাথার উপর দিয়ে৷ তখন তার বয়স ছিল মাত্র সতেরো।
যাইহোক, এগুলা কথার ছলে চলে আসে৷ বলছিলাম ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডারদের ব্যাপারে। পেলে যখন বল রিসিভ করলো তখন ববি মুরসহ তিনজন ডিফেন্ডার পেলেকে প্রেস করতে আসেন যাতে পেলে শ্যুট করার সুযোগ না পায়। কিন্তু পেলে বল রিসিভ করার পর মনে হচ্ছিল তিনি অনেক সময় পাচ্ছিলেন। আর বাম পাশ থেকে আসা বলকে ডেনিস বার্গক্যাম্প এর মতো রিসিভ করলেন, এরপর টার্ন, তারপর জিদান লেভেলের মাথা ঠান্ডা করা পাস একেবারে আলতো ভাবে। আর ওই পাস থেকে গোল করেন জর্জিনহো । একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, ওইসময় ইংল্যান্ড ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
ম্যাচ শেষে ইতিহাসের অন্যতম সেরা সেন্ট্রাল ব্যাক ববি মুরের ভাষ্য ছিল, তাদেরকে কোচ বলেছিল যেন তারা পেলেকে শ্যুট করতে না দেয় এবং তারা সেটাই করেছিল কিন্তু কোচের বলা উচিত ছিল যেন পেলে কাউকে পাসও দিতে না পারে। আর দিনশেষে সেই পেলেই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেন ম্যাচে। ব্রাজিল ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
- ৩
আজকে যে আমরা মেসি বা রোনালদো কে গোট (Greatest Of All Time) বলি, এটা এমনিতেই বলি? ২০১২ তে যখন মেসির ব্যালন ডি অর ৪টা আর রোনালদোর মাত্র ১টা তখন কয়জন পাওয়া যেতো রোনালদো কে সর্বকালের সেরা বলার জন্য। আবার ওই সময়ে মেসির জাতীয় দলে কোন সাফল্যই নাই, ইনফ্যাক্ট (এটা লেখা পর্যন্ত) এখনো নাই (সম্প্রতি কোপা আমেরিকা জিতেছেন) যেটা পেলের সাথে কম্পেয়ার করার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলার জন্য যথেষ্ঠ। তারপরও দিনশেষে ওরা সর্বকালের সেরা উপাধিটা আদায় করে নিয়েছে তাদের সামর্থের প্রমাণ দিয়ে। এই অর্জনটাও হয়েছে ধাপে ধাপে।
যেমন, রোনালদো ফ্রিকিক স্পেশালিস্ট ছিল আগে থেকেই, কিন্তু ওইসময় মেসির ফ্রিকিক এবিলিটি নিয়ে অনেক কথা হতো। পরে মেসি ঠিকই নিজেকে সেই কাতারে নিয়ে গেল। কোন এক সময় রোনালদো বড় ম্যাচ ফ্লপ ছিল বলে কথা উঠতো, এরপর টানা এল ক্লাসিকোতে গোল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হ্যাট্রিক করে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করলো। এদের এমনেই গোট বলা হয়না। আর তাছাড়া বর্তমান ফুটবলে দর্শকদের একটা বড় প্রভাব আছে খেলোয়াড়দের মাপকাঠি নির্ধারণে, মিডিয়ার কল্যানে ফ্যান ফলোয়ার বানানো আরো সহজ, সাথে স্পন্সরদের খেলাতো আছেই।
এগুলা একটা প্লেয়ারের ব্যাক্তিত্বকে সামগ্রীকভাবে আরো বড় করে তোলে। আর এদিকে পেলের না আছে রূপ, না খেলতো ইউরোপে। ব্রাজিলে খেলেই কৃষ্ণ বর্ণের পেলে পুরা পৃথিবীর কাছ থেকে সর্বকালের সেরা প্লেয়ার এর মর্যাদা পেয়েছেন৷ তাহলে ফুটবলে কতটা ইম্প্যাক্ট তৈরি করলে, নিজের খেলার পর্যায়টা কতটা উঁচুতে থাকলে- ওই সময়ে ব্রাজিলের একজন প্লেয়ার ইউরোপে না খেলেই এধরণের খেতাব পেতে পারেন। পেলেই ফুটবলের প্রথম গ্লোবাল স্টার। ইটজ ফ্যাক্ট।
আর তিনটা বিশ্বকাপ জেতা কোনো কাকতালী ঘটনা না। এটা অর্জন করতে আপনাকে সতেরো বছর বয়সেও যেমন ওয়ার্ল্ড ক্লাস থাকা লাগবে, তেমনি ত্রিশেও শারিরীকভাবে ফিট থেকে ১৯৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলের জায়গা করে নেয়ার মতো ফর্ম থাকতে হবে৷ বলাই বাহুল্য, পেলে ’৭০ বিশ্বকাপে ব্যাক্তিগতভাবে গোল্ডেন বল নিয়েই বিশ্বকাপ জেতেন। ওই দলে ব্রাজিলের অনেকগুলো গ্রেট প্লেয়ারই ছিল, কিন্তু ওই দলের টেকনিক্যাল লিডার ছিল পেলে৷
সে যেভাবে খেলাকে নিয়ন্ত্রন করেছে সেভাবেই ব্রাজিল খেলেছে। এসব কথা তার ওই দলের সতীর্থদের। আর ওই বিশ্বকাপে পেলে এমন কিছু দেখিয়েছে যেটা এর আগে কেউ করার কথা ভাবে নাই, যেমনটা পেলে ৫৮ তেও করেছিল। ৬০ এর দশকে পেলে কে নিয়ে যে বন্দনাগুলো ছড়িয়েছিল সেগুলো ৭০ বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স দিয়ে প্রমাণ করেই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বিদায় নেন ফুটবলের রাজা।
একজন ফুটবলপ্রেমীর জন্য, একজন ফুটবলারের জন্য এর চেয়ে তৃপ্তির ব্যাপার আর কি হতে পারে?
- ৪
এই লেখায় পেলেকে কয়েকটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছি । রোনালদোর সাথে মিলাতে গিয়ে পেয়েছি হেডে দক্ষতা কিংবা শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারটা, অন্যদিকে মেসির সাথে কম্পেয়ার করতে গিয়ে পেয়েছি তার বলের উপর কন্ট্রোলের ব্যাপারতা নিয়ে। পেলের আরেকটা স্কিল কখনো কথা হয়না, ফ্রিকিক থেকে গোল করার ক্ষেত্রে জুনিনহোর পরেই একাত্তর গোল নিয়ে অবস্থান পেলের । তো আপনি আর কি চান একটা প্লেয়ারের কাছ থেকে?
পেলের সময়ের মানুষ তার পরের সময়ের প্লেয়ারদেরও খেলা দেখেছে কিন্তু খুব কম লোকই অন্য কাউকে পেলের চেয়ে সেরা বলেছে। এটাই বাস্তবতা। এখানে আমি, আপনি, ব্রাজিল ফ্যান এর কিছু বানানো নাই। এটা ন্যাচারালি হয়েছে। পেলের ব্যাপারে আর্জেন্টিনার ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ী কোচ মেনোত্তি বলেন, যদি ম্যারাডোনা, মেসি, স্টেফানো আর ক্রইফকে একসাথে করা হয় তাহলে হয়তো পেলেকে পাওয়া যাবে৷ এটা একজন আর্জেন্টিইন কিংবদন্তির কথা, আমার না এবং এটা যেন তেন কোন কথা না। অনেক বোল্ড।
এটাতো একজন আর্জেন্টাইন এর কথা। ব্রাজিলের ’৭০ বিশ্বকাপ জয়ী টোস্টাওতো বলেই ফেলেছেন রোনালদো আর মেসি একত্র করলে যে প্লেয়ারটা পাওয়া যাবে সেটা পেলে। ক্রইফ বলেছেন, পেলেই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি যুক্তির গন্ডির পেরিয়ে গেছেন। এগুলা একেবারে আল্টিমেট প্রেইস। এমনকি স্টেফানোও বলেছিলেন যে মেসি রোনালদো থেকে পেলে বেটার।
এই লেখাগুলোর উদ্দেশ্য পেলে কে মেসি বা রোনালদোর চেয়ে সেরা বলা না, এর দ্বারা দেখাতে চেষ্টা করলাম একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে পেলের অবস্থানটা কোন জায়গায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে খুব কম লোকই পেলে কে নিয়ে এভাবে চিন্তা করে । পেলেকে নিয়ে প্রচুর ব্যাঙ্গার্থক আলোচনা বিভিন্ন ফেসবুক ব্লগে দেখা যায় প্রতিনিয়ত। এগুলার মূল কারণ পেলে সম্পর্কে অজ্ঞতা। মানুষ জানে শুধু পেলে তিনটা বিশ্বকাপ জিতেছে, হাজারের ওপর গোল করেছে।
এটুকু জানাই কিন্তু পেলের মাহাত্ম বোঝার জন্য যথেষ্ঠ না। আমরা কেউ পেলের খেলা দেখিনি, এটা সত্য। কিন্তু সেজন্য পেলে যা অর্জন করেছে এবং তার যে ‘লিগ্যাসি’ তৈরি হয়েছে সেগুলোতো মিথ্যা না। এখানে পেলের গ্রেটনেস বোঝার জন্যই মূলত মেসি আর রোনালদোর উদাহারণগুলো টেনে আনা যেন যার জানার আগ্রহ আছে তার বুঝতে সহজ হয়।
একটা ব্যাপার বুঝতে হবে – আপনার পছন্দের প্লেয়ার থাকবে, তাকে আপনি সর্বকালের সেরাও বলতে পারেন। কিন্তু সেজন্য তাকে কারো সাথে সরাসরি তুলনা করার আসলে প্রয়োজন নাই। সেটা করতে গিয়েই মূলত মেসি এবং রোনালদো প্রতিটা ম্যাচ শেষেই প্রচুর ট্রলের শিকার হোন বিপরীত সমর্থকগোষ্ঠীর কাছ থেকে। কিন্তু তাঁরা তো ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কিংবদন্তি। আপনি ফুটবলের কিংবদন্তিদের বাদ দিয়েতো ফুটবল চিন্তা করতে পারেন না।
মেসি রোনালদোকে সারাদিন ট্রল করে কি বুঝানো হয়? ওরা খেলা পারেনা? ওরা শুধু পেনাল্টি থেকেই গোল দেয়? কিংবা ওরা বলের জন্য দৌড়ায় না? আসলে যুগে যুগে এগুলাই লাইমলাইট পেয়েছে বেশি। যেমনটা পেলের ক্ষেত্রে প্রায়শ বলা হয়, ও সারাজীবন অফসাইড থেকে গোল করসে। বাস্তবতা হচ্ছে পেলেকে নিয়ে ছড়ানো এর চেয়ে বড় মিথ্যা কথা আর একটাও নাই, অথচ অনেক দর্শকই জেনে-না-জেনে এটা বিশ্বাস করে। কিন্তু এটা চিন্তা করে না, পেলে কে ছাড়া ফুটবল কি? কিংবা কিংবদন্তিদের ছাড়া ফুটবল কি?
পেলে কে জানতে হবে, কিংবদন্তিদের সম্মান দিতে হবে।