সব পাখি ঘরে ফেরে, ফেরেই…

একমাত্র সন্তান ঘরের বাইরে পা বাড়ালে হু হু করে ওঠা বাবা-মায়ের বুক ভেসে যায় যন্ত্রণায়। আবার কবে ফিরবে সে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্লান্তক্লিষ্ট মন তার রাস্তার দিক হারিয়ে ফেলে। নিজেকে নিমগ্ন করে নেয় জাগতিক ব্যস্ততায়। ঠায় বসে থাকা বুড়ি মা ভাবে, কবে তার জওয়ান ছেলেটা ঘরে ফিরবে সেই দূরের বর্ডার থেকে! কেউ জানে না।

আরো পড়ুন

আসলে কেউ জানতে চায় না। মানুষ অভ্যাসের দাস, পরিস্থিতির দাস। কান্নাভেজা চোখগুলো থেকে অশ্রুবিন্দু মিলিয়ে যায় একসময়। স্টেশনে বিদায় দিতে আসা পরিবার ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নেয়, একদিন সে ফিরবে। ফেরা আর হয় না। দিন যায়, কাল যায়, সময় যায় নদীর স্রোতের ন্যায়। শ্বাশত থেকে যায় তার না ফেরা।

কথা দিয়ে কথা না রাখা প্রেমিকা ফেরে না, স্মৃতির মণিমুক্তোয় ভরা ছেলেবেলা ফেরে না, অলস ক্লান্ত দুপুরের ভাঙা গিটারে অনভিজ্ঞ হাতে ধরা টুং টাং – ফেরে না। রয়ে যায় মূহূর্তেরা, অবিকল একইরকম চেহারা নিয়ে। কখনও তাদের জড়িয়ে ধরে রাতে ঘুম নেমে আসে, কখনও হাসির চাদরে ঢাকা পড়ে যায় মনের ভেতরে জমে থাকা গাঢ় বেদনার সমস্ত আর্তি। কেউ শুনতে পায় না, কেউ দেখতে পায় না। জীবন বয়ে চলে একই খাতে।

অথচ একদিন আচম্বিতে বহু পরিচিত, বহু চেনা সেই কণ্ঠস্বর ভেসে আসে বাড়ির সামনে – ‘কই গো, সবাই আছ তো?’ অপ্রত্যাশিত আনন্দের ভারে জর্জরিত মানুষগুলো যেন ফিরে পায় তাদের হারিয়ে যাওয়া পরশপাথর। যাকে ধরেই নেওয়া হয়েছিল, আর ফিরবে না। ফিরতে পারে না সে। যে একদিন ভারাক্রান্ত মনে বিদায় নিয়েছিল তার সাজানো সংসার থেকে। আজ এতদিন পরে না জানি কেন রে জাগিয়ে উঠিল প্রাণ, ওরে উথলি উঠেছে বারি! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি জানতেন, সবাই একদিন ঘরে ফেরে?

এক যুগ পরে যে লোকটা ঘরে ফিরছে, সে আর সোনালী চুলের নয়। সামান্য দাঁতটা উঁচুও নয়। আজ সে স্বাবলম্বী। পৃথিবীতে পরাক্রমশালী এক যোদ্ধা, যাকে সারা বিশ্ব নতমস্তকে প্রণতি জানায়। সে ফিরেছে, ঘরেই ফিরেছে। সতীর্থদের কেউই প্রায় নেই, পুরনো সেই গুরু নেই, এক সময়ের সতীর্থ আজ তাঁর কোচ – তবে তিনি চলে এসেছেন। এসেছেন তাঁর পুরনো ঠিকানায়। ফিরতে তাঁকে হতোই।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মাটিতে ফিরে এসেছে অবশেষে, যেমন সব পাখি একদিন ঘরে ফিরে আসে। ফিরতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link