বাফুফের প্রত্যাখ্যান, ভায়োকানোর অর্জন

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। ডেনমার্ক প্রবাসী এই ফুটবলার তাঁর প্রতিভা, নেতৃত্বগুণ এবং মাঠে তার কুশলী নৈপুণ্য প্রদর্শন করেই পেয়েছেন জাতীয় দলের আর্মব্যান্ড। তাঁকে দেখেই মূলত প্রবাসী ফুটবলারদের প্রতি আগ্রহী হয় বাংলাদেশ। জাতীয় দলের নতুন সংযোজন সাহরান খান এবং তাহমিদ ইসলাম এরই প্রমাণ। তবে তাঁদেরকে ছাপিয়ে গেছেন আরেক বাংলাদেশি তরুণ জিদান মিয়া। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন লা লিগার দল রায়ো ভায়োকানোর সাথে।

তবে বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে জিদান নতুন নাম নয়। প্রতিভাবান এই ফুটবলার বিগত কয়েকবছর ধরেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর আগ্রহ করে আসছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তাকে পাত্তাই দেয়নি, রীতিমতো তাকে অপমানই করে। জাতীয় দলের ক্যাম্প কিংবা নিদেনপক্ষে ট্রায়ালে ডাকার আগ্রহ পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। কিন্তু একই ভুল করেনি লা লিগার দল ভায়োকানো।

দুই মাস আগে তাঁদের অনুশীলন ক্যাম্পে ট্রায়ালে যোগ দেন জিদান। তার প্রতিভা এবং ফুটবলশৈলীতে মুগ্ধ হয়েই তাঁকে দলে ভেড়ানোর ঘোষণা দেন তারা। তবে আপাতত জিদান দলটির বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গেই থাকবেন। পরে যোগ দেবেন লা লিগায় খেলা মূল দলের সাথে। মানে, লা লিগার মঞ্চে নামার জন্য তাঁকে এখনও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে।

জিদানের পৈতৃক ভিটা বাংলাদেশের মৌলভিবাজারের কদমহাটা গ্রামে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সত্তরের দশকের শেষভাগে লন্ডনে পাড়ি জমান জিদানের বাবা সুফিয়ান মিয়া। ফ্রান্সের কালজয়ী ফুটবলার জিনেদিন জিদানের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ সুফিয়ান সিদ্ধান্ত নেন ছেলেকে ফুটবলার বানাবেন। নিজের আইডলের সাথে মিলিয়ে ছেলের নাম রাখেন জিদান মিয়া। যদিও জিদানের পছন্দের ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

ছোটবেলা থেকেই জিদান তার ফুটবল প্রতিভা দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। তার শৈশব ক্যারিয়ার শুরু করেন ডেভিড বেকহ্যামের ফুটবল একাডেমিতে। এরপর একে একে মাঠ মাতিয়েছেন ক্রিস্টাল প্যালেস, আর্সেনাল ডেভেলপমেন্ট স্কোয়াড, এফসি ডালাসসহ বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য দলের হয়ে।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ট্রেনিং সেন্টার মাইকেল জনসন পারফরমেন্স সেন্টারেও অনুশীলন করেছেন জিদান। তবে ইংল্যান্ড, হংকং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেললেও জিদান কিংবা তার বাবা কখনোই ভুলেননি শেকড়ের টান। বাংলাদেশের প্রতি তার আবেগ প্রকাশ করেছেন বারবার। খেলতে চেয়েছেন লাল-সবুজদের একজন হয়ে। কিন্তু বাফুফে মূল্যায়ন করেনি তাকে।

অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের রোলে খেলা এই ফুটবলার মূলত অ্যাটাকিং থার্ডে বল পায়ে বিচরণ করতেই বেশি পছন্দ করেন। দারুণ ড্রিবলিংয়ের পাশাপাশি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ সব শট নিতে পারেন তিনি। তবে গত মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকায় প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ প্র‍্যাকটিসের অভাব রয়েছে এই মিডফিল্ডারের।

একারণে প্রথমে বয়সভিত্তিক দলের সাথে যোগ দিয়েছেন তিনি। তাদের হয়ে স্প্যানিশ লিগের সপ্তম টায়ারে ম্যাচ খেলে তার ম্যাচ ফিটনেস এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করবেন জিদান এমনটাই জানিয়েছেন মাদ্রিদভিত্তিক স্পোর্টস নিউজ অ্যান্থেম। মূলত জিদানের এজেন্ট মরিস পানেইলো তার চুক্তির ব্যাপারে সবকিছু দেখভাল করছেন।

তবে বাংলাদেশ থেকে কেবল অবহেলা পেলেও জিদান ভুলেননি বাংলাদেশকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশি সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। তার বাবা সুফিয়ান মিয়া এখনো বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে ডাকের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, ‘জিদান সবসময়ই বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চায়। বাংলাদেশ থেকে যদি ওকে ডাকে, এটা অবশ্যই ওর জন্য সম্মানের হবে। যদি বাংলাদেশ থেকে ডাক আসে, তা হলে আমরা সবরকমের ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি।’

আশার কথা হলো জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে জানিয়েছেন জিদানের উপর নজর আছে তাঁর। তবে রায়ো ভায়োকানোর হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে জিদানের পারফরমেন্স দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। ফেডারেশনের ভুলে বাংলাদেশ হারিয়েছে দারুণ সব প্রবাসী ফুটবলারদের, যাদের সংযোজন জাতীয় দলকে করে তুলতো আরো বেশি শক্তিশালী।বাংলাদেশের ষোল কোটি ফুটবল ভক্তের এখন তাই একটাই প্রত্যাশা ফুটবল ফেডারেশনের অবহেলায় যেন হারাতে না হয় জিদানের মতো প্রতিভাবানকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link