‘বিশ্বকাপের দল আগে দিলে ভালো হত’

আগামীকাল থেকে শুরু হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বিশ্বকাপের দল ঘোষণার শেষ সময় বেঁধে দিয়েছে দশ সেপ্টেম্বর। তাই সিরিজ চলাকালীনই দল ঘোষণা করতে হবে বাংলাদেশকে। এটা অনেক ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সেই প্রভাব ফেলতে পারে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলাকালীন ঘোষণা করা হতে পারে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের চূড়ান্ত দল। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মনে করেন সিরিজ শুরুর আগে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করা হলে সবচেয়ে ভালো হতো। এতে সবাই এই সিরিজে নির্ভার হয়ে খেলতে পারতো।

আগামীকাল থেকে শুরু হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বিশ্বকাপের দল ঘোষণার শেষ সময় বেঁধে দিয়েছে দশ সেপ্টেম্বর। তাই সিরিজ চলাকালীনই দল ঘোষণা করতে হবে বাংলাদেশকে। এটা অনেক ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সেই প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্বকাপের দলে নিজের জায়গা নিয়ে ভাবতে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলতে পারেন অনেক ক্রিকেটার। সেই ভাবনা থেকেই মাহমুদউল্লাহ মনে করেন দলটা সিরিজ শুরুর আগে দিলে ভালো হতো। আজ (৩১ আগস্ট) সিরিজ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক জানিয়েছেন যেহেতু আগে দল ঘোষণা হয়নি তাই তাদের লক্ষ্য এখন নিজেদের মেলে ধরা।

তিনি বলেন, ‘দল মোটামুটি ঠিকই হয়ে আছে। কোচ ও নির্বাচকদের সাথে কথা হয়েছে। হ্যাঁ সিরিজ শুরুর আগে দল দিতে পারলে ভালো হতো। সিরিজ শুরুর আগে বিশ্বকাপ দল দিলে সবাই নির্ভার হয়ে খেলতে পারতো। কিন্তু এটা আমাদের হাতে নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে খেলা। আমরা যেনো নিজেদের মেলে ধরতে পারি আমাদের সে ভাবেই আগানো উচিত।

বিশ্বকাপের দল মোটামুটি ঠিক হয়ে গেলেও সেই দলে ওপেনার হিসাবে আছেন কারা এটা নিয়ে কিছু খোলাসা করেননি মাহমুদউল্লাহ। গত দুই সিরিজে ইনিংস উদ্বোধন করেছেন সৌম্য সরকার ও নাঈম শেখ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ফিরেছেন লিটন দাস। বিশ্বকাপ দিয়ে ফেরার কথা রয়েছে তামিম ইকবালের।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে নাঈম ও সৌম্য ব্যর্থ হলেও এর আগে সিরিজে জিম্বাবুয়ের সাথে ভালো করেছেন দু’জনই। তার আগের সিরিজে নিউজিল্যান্ডের সাথেও দুর্দান্ত ছিলেন সৌম্য। আর বর্তমান টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভিতর এগিয়ে রয়েছেন নাঈম শেখ। লিটন এবং তামিম দু’জনই পরীক্ষিত।

এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক ম্যাচে ওপেনার হিসাবে নেমে ভালো শুরু পেয়েছিলেন শেখ মেহেদী হাসান। তাই সবার নজর আসন্ন এই সিরিজে ও বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ওপেনার হিসাবে থাকবেন কারা। মধুর সমস্যয় রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টও। তবে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন এটা নিয়ে চিন্তা করছেন না তাঁরা।

দলের ভিতর এই ইতিবাচক প্রতিযোগিতা উপভোগ করছেন সবাই। তিনি বলেন, ‘লিটন একজন দুর্দান্ত ওপেনার। সৌম্য এই বছর দারুণ ফর্মে রয়েছে। নাঈম টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। শেখ মেহেদীও ভালো একটা অপশন। আমার এই জিনিস গুলো নিয়ে চিন্তা নেই। তাঁরা খুব ভালো ছন্দে আছে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যারা সুযোগ পাবে তাঁরা যেনো দলের জন্য অবদান রাখতে পারে। আমার মনে হয় সবাই ঐ দিকেই নজর দিয়েছে। আমার মনে হয় এখন দলের ভিতর পজিটিভ প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এটা খুব ভালো দিক এবং সবাই উপভোগ করছে।’

গতকাল প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন নুরুল হাসান সোহান এবং তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে উইকেটের পিছনে দেখা যাবে মুশফিকুর রহিমকে। আর শেষ ম্যাচে দায়িত্ব দেওয়া হবে উইকেটের পিছনে দু’জনের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করার পর।

টিম ম্যানেজমেন্টের এমন সিদ্বান্তের সমালোচনা করেছেন অনেকেই। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে মুশফিকুর রহিমকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে বাংলাদরশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক জানিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্বান্তে খুশি আছেন দু’জনই।

মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘এটা নিয়ে কোন সমস্য নেই। দু’জনেই খুশি আছে। সোহান আগের সিরিজ ভালো করেছে। মুশফিকও আগে ভালো করেছে। এটা নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই। লিটনের কথা নাই বললাম। আমার মনে হয় এটা নিয়ে কোন সমস্য নেই। পুরো দলই পজিটিভ আছে।’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন এই সিরিজে  বাংলাদেশ পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে খেললেও  নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সফরে। নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলের কোন সদস্যই নেই এই সিরিজের স্কোয়াডে।

নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন সহ স্কোয়াডে নেই টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, মার্টিন গাপটিল, ডেভন কনওয়ে, জিমি নিশাম, কাইল জেমিসন, ম্যাট হেনরি, ইশ সোধি, মিচেল স্যান্টনার, লকি ফার্গুসনের মত তারকারা।

নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় সারির দল পাঠালেও নিজেদেরকে এগিয়ে রাখছেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের অধিনায়ক মনে করেন টি-টোয়েন্টিতে নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে ম্যাচ জিতবে তারাই। তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে রকম মানসিকতা ছিলো সেটা ধরে রাখতে চান মাহমুদউল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি বিষয়টা এমন যে আপনি আপনাকে এগিয়ে রাখতে পারেন তবে বেশি আত্মবিশ্বাসটা আবার নেগেটিভ হতে পারে। নির্দিস্ট দিনে আপনাকে ভালো ক্রিকেট খেলার মানসিকতা থাকা উচিত। আমাদের পজিটিভ থাকতে হবে। ওরা যে দল নিয়ে এসেছে এটা ভালো দল। আমাদের সম্পর্কে ওদের ধারণা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে প্রথম বল থেকেই আমাদের যেরকম মানসিকতা ছিলো ওটা ধরে রেখে খেলা উচিত। জিম্বাবুয়েতে ও অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভালো খেলেছি। আমাদের ঐ ভাবেই চিন্তা করা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে মাহমুদউল্লাহ আরো বলেন, ‘আমার মনে হয় ওরা ভালো একটা দল। নিউজিল্যান্ড এমন একটা দল যারা সব সময় হোমওয়ার্ক করে। ওরা যে পরিকল্পনা করে সেখানেই থাকার চেষ্টা করে। এই দিক থেকে ওরা খুব ডিসিপ্লিন। ওদের সাথে ভালো ক্রিকেট খেলতে হলে আমাদেরও ডিসিপ্লিন খেলতে হবে। আমার মনে হয় আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা উচিত।’

বর্তমান বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে শুধু ওপেনারদের ও উইকেটরক্ষকদের ভিতরই প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে না। প্রতিযোগিতা রয়েছে বোলারদের ভিতরও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। দুই পেসারের দারুণ পারফরম্যান্সে প্রথম চার ম্যাচে সুযোগই পাননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সাইফউদ্দিনও ভালো বল করেছেন। শ্রীলংকা সিরিজে ও জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ভালো করলেও টি-টোয়েন্টিতে সুযোগই পাননি তাসকিন আহমেদ। আর আগের চার সিরিজে দলের সাথে থেকেও মাঠে নামা হয় রুবেল হোসেনের। মাহমুদউল্লাহ মনে করেন বড় দল হতে এরকম প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘শরিফুল চারটা ম্যাচে ভালো বোলিং করেছে। মুস্তাফিজ দুর্দান্ত ছিলো। তাসকিন ও রুবেল আছে। সাইফউদ্দিন ভালো করেছে। সব বিভাগেই প্রতিযোগিতা আছে। ফিল্ডিংয়েও উন্নতি হচ্ছে। আমার মনে হয় ভালো দল হতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাংকিং সব সময় দলের আসল শেপটা দেখায় না।’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে মন্থর এবং টার্নিং উইকেট বানিয়ে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি অজি ব্যাটসম্যানরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেও তাই আলোচনায় মিরপুরের উইকেট ও বাংলাদেশের পরিকল্পনা। তবে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন এই সিরিজে ভালো উইকেটের প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেন, ‘উইকেট নিয়ে বলা সব সময়ই কঠিন। তবে আমরা ভালো উইকেট আশা করে ম্যাচে যাবো। আমরা মানিয়ে নেবো। আপনি যদি আগেই চিন্তা করেন যে এটা ১১০-১২০ রানের উইকেট তাহলে সেটা খারাপ হবে। এটা করাটা ঠিক না। আপনি পজিটিভ চিন্তা নিয়ে যাবেন যে এটা ভালো উইকেট আমাদের যে ব্যাটিং শক্তি আছে ঠিকঠাক ভাবে ব্যাট করতে পারলে ভালো স্কোর হবে।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...