রাহবার খানে প্রত্যাশার আলো

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে জয় পাবে বাংলাদেশ দল, এমনটা প্রত্যাশা করাটা যেমন বোকামি তেমনি বাড়াবাড়িও। সে কারণেই কিরগিজস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ০-২ গোলের হারটি তাই প্রত্যাশিতই! কিন্তু নতুন বাংলাদেশের দেখা মিলবে বলে যে কথা বলা হয়েছিল তার দেখা পাওয়া যায়নি। ফুটবপ্রেমীদের কাছে তাই এটি পুরনো বাংলাদেশই। নতুনত্ব বলতে গেলে পাঁচজন ডিফেন্ডারের পাশাপাশি অনেকদিন পর একাদশে সুযোগ পান গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল।

‘শিশুসুলভ’ ভুলের কারণে খ্যাতি পাওয়ার পরও তাকে শুরুতে খেলানোটা তাই চমক দেখিয়েছেন কোচ জেমি ডে। যদিও এই ম্যাচে আবারো ভুল করেছেন আবাহনী লিমিটেডে খেলা এই গোলরক্ষক। পরাজয়ের বাইরে এ ম্যাচে বড় চমক বলা যেতে পারে কানাডা প্রবাসী রাহবার ওয়াহেদ খান। তাকে বিস্ময় বালক হিসেবে এরই মধ্যে উপাধিও দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য নেমেই সবার মন জয় করে নিয়েছেন।

ম্যাচের ৮৩ মিনিটে কোচ এক সঙ্গে দুইটি পরিবর্তন করান। রাকিব হোসেনের জায়গায় মোহাম্মদ ইব্রাহিম আর সোহেল রানার জায়গায় রাহবার খান। রাহবার মাঠে নামার মিনিট বিশেক আগে আরেক প্রবাসী তারিক কাজীকে উঠিয়ে নেন কোচ। ফিনল্যান্ডে বেড়ে ওঠা তারিক থাকলে এক সঙ্গে তিন প্রবাসী খেলার নতুন রেকর্ড হতো বাংলাদেশের ফুটবলে। আর রাহবার খান দেশের তৃতীয় প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেললেন।

অনেকেই রাহবারকে নিয়ে টিপ্পনি কেটেছিলেন। কেউ কেউ তো গলির ফুটবলারও বলেছিলেন। তবে যে ২০ মিনিট মাঠে ছিলেন তাতে নতুন স্বপ্নটা দেখা যেতেই পারে। এই সময়টাতে যে স্কিল দেখিয়েছেন সেটি লাল সবুজ জার্সিতে খেলা অনেক ফুটবলারেরই ছিল না। সমালোচকদের অনেকেই তাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। যে সময়টাতে মাঠে ছিলেন তাতে করে প্রথম একাদশে খেলাটা প্রত্যাশা করতেই পারে।

রাহবারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফুটবলারদের মধ্যে আশাটা বেড়ে গেছে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। যারা এখন আশা করছেন লাল সবুজ জার্সি গায়ে চাপানোর তারাও স্বপ্ন দেখা শুরু করতে পারেন। মূলত দেশের বাইরের দলের সাথে খেলার সময় স্কিলে সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হয়। তারিক কাজী, জামাল ভুইয়া আর রাহবার খানের সাথে আরও কয়েকজন যদি যোগ দেয় তাহলে শক্তিশালী একটা দলই হয়ে ওঠবে। তবে অনেকে আবার ভেবে বসবেন না ফিলিস্তিনের মতো দলের বিপক্ষে এখনই জিতে যাবে বাংলাদেশ। র‌্যাংকিং এ যে ৮৬ ধাপ ফারাক সেটি মাঠে অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায়।

এদিকে ২০১৩ সালে জামাল ভূঁইয়া কাঠমান্ডু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে প্রথম বাংলাদেশ দলের জার্সি গাঁয়ে দিয়েছিলেন। জামাল সাত বছরের বেশি সময় জাতীয় দলে একাই প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে ছিলেন। এরপর উত্তরসূরি হিসেবে ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজীকে পেয়েছেন মাস দুয়েক আগে। কাতারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তারিকের অভিষেক হয়।

এর আগে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে খেলছেন। জামাল ঘরোয়া ফুটবলে না খেললেও তৎকালীন কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের ক্যাম্পে সরাসরি ডাক পেয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় কানাডা প্রবাসী রাহবার সরাসরি জাতীয় দলের মূল স্কোয়াডে ডাক পাওয়ায় ফুটবলাঙ্গনের বিস্ময় ছিল তাকে নিয়ে। ৮৩ মিনিটে নামার পর এই ফরোয়ার্ড নিজেকে চেনানোর খুব একটা সুযোগ পাননি।

নির্ধারিত সময়ের সাত মিনিট ও ইনজুরি সময়ের পাঁচ মিনিটের অধিকাংশ সময় বল ছিল প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পায়ে। অফ দ্য বল কিছুটা রানিং করে চেনানোর চেষ্টা করেছেন। নিজেও বল পেয়েছেন কিছুটা সময়। জেমি ডে’র স্কোয়াডে রয়েছেন আরেক প্রবাসী তাহমিদ ইসলাম এবার অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন। ফ্রান্স প্রবাসী এই ফুটবলারের বয়স আরো কম। তাকে নিয়ে জেমির মূল পরিকল্পনা হয়তো অনূর্ধ্ব ২৩ দল।

এই ম্যাচে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি বলা যেতে পারে ফিলিস্তিন কোচের মুখে শোনা প্রশংসা। তবে এখনো অনেক ভৌতিক সিদ্বান্ত দেখা যায়। যেমন মোহাম্মদ সাদ উদ্দিন। ঘড়োয়া ফুটবলে খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে, এবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন মিডফিল্ডার হিসেবে কিন্তু জেমি যে তাকে খেলান স্ট্রাইকার হিসেবে। এ যেন সপ্ত আম্চার্যের মতোই ঘটনা। কিরগিজস্তানের এই আসরটিকে মূলত ফিফা উইন্ডোতে ম্যাচ খেলার পাশাপাশি সাফ ফুটবলের জন্য বড় প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

নতুন কৌশলে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে আরও অচেনাই লেগেছে বাংলাদেশ দলকে। ম্যাচেও প্রথমার্ধে অগোছালোর পর দ্বিতীয়ার্ধেও নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারেনি লাল সবুজ দল। নতুন কৌশলে মাঠে নেমে পুরো ম্যাচে একবারও প্রতিপক্ষের গোল পোস্টে বলার মতো শট নিতে না পারা বাংলাদেশ হার দিয়ে শুরু করল তিন জাতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। ফিলিস্তিনের কাছে এই ম্যাচ হারের মাধ্যমে শেষ চার পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

তার আগে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছিল জামাল ভুঁইয়ারা। ম্যাচের ঠিক একদিন আগে জেমি ডে জানিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনের বিপক্ষে নতুন কৌশল প্রয়োগ করে দলকে খেলাবেন। কিন্তু মাঠে তার ছিটেফোটাও পাওয়া মেলেনি। যদিও ম্যাচের শুরু থেকে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলা শুরু করান জেমি ডে। তিন সেন্টার ব্যাকের পাশাপাশি ইয়াসিন আরাফাত ও বিশ্বনাথ ঘোষকে খানিকটা উপরে খেলিয়েছেন কোচ।

তবে বেশিক্ষণ এই ফর্মেশন ধরে খেলতে পারেননি বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের আক্রমণের ধার বাড়ার সাথে সাথে রক্ষণভাগেই বেশি সময় কাটাতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। অন্যদিকে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কিরগিজস্তানের কাছে ১-০ গোলে হারা ফিলিস্তিন এ ম্যাচে শুরুতে ধীর গতির ফুটবল খেলে।

তবে সময় বাড়ার সাথে সাথে নিজেদের গুছিয়ে নেয় ফিফা র‌্যাংকিংয়ের ১০২ নাম্বারে থাকা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা দলটি। পাশাপাশি ডিফেন্ডারের ভুলের সঙ্গে গোলরক্ষক সোহেলের অর্দরদর্শিতা প্রমাণিত হয়। বাকি দুই ম্যাচের মধ্যে কিরগিজস্তান অনুধ্ব-২৩ অলিম্পিক দলের বিপক্ষেই কেবল জয়ের আশা করতে পারে বাংলাদেশ। কিরগিজস্তান জাতীয় দলের বিপক্ষে জয় পাওয়ার আশাটাও এখন করা যাচ্ছেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link