গোল করতে পারলে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট

বাংলাদেশের ফুটবলে দক্ষ গোল স্কোরারের অভাবটা বেশ পুরনো। আন্তর্জাতিক সাফল্য না পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণও এটি। দেখা গেছে পুরো ম্যাচে ভাল খেলেও প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পেরে যেমন করে জয়বঞ্চিত হচ্ছে ঠিক তেমনি পয়েন্টও হারাতে হচ্ছে।

সেই ধারা কিরগিজস্তানে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেও অব্যহত রেখেছে জামাল ভুইয়ারা। প্রথম ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে যদিও সুযোগই তৈরি করতে পারেনি ফরোয়ার্ডরা। প্রতিপক্ষের গোলমুখে বলার মতো আক্রমনও করতে পারেনি মতিন মিয়া, মাহবুবুর রহমান সুফিলরা। এই অবস্থায় আজকে দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। বোধকরি আসরে সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটাই খেলতে নামার অপেক্ষায় রয়েছে জেমি ডে’র শীষ্যরা।

কারণ, এমনিতে স্বাগতিক দল কিরগিচস্তান, তার ওরপর র‌্যাংকিং এ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। ফিফার সর্বশেষ র‌্যাংকিং এ বাংলাদেশ থেকে ৮৭ ধাপ এগিয়ে ১০১ নাম্বারে রয়েছে স্বাগতিকরা। সে হিসেবে পিছিয়ে থেকেই মাঠের লড়াইয়ে নামতে হবে সফরকারীদের। আর এই ম্যাচে চিন্তার বড় একটা জায়গা জুড়ে থাকবে ফরোয়ার্ডদের নিয়ে। যেমন করে সুযোগটা তৈরি করতে হবে, আবার পেলে সেগুলোকে কাচে লাগানোর মতো অবস্থায় থাকতে হবে। কিন্তু এটি কতটা সম্ভব?

কিরগিজস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজটাকে সাফ ফুটবলের প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ঘরোয়া ফুটবলে নিয়মিত মাঠে ছিলেন খেলোয়াড়রা। পাশাপাশি বসুন্ধরা কিংসের হয়ে জাতীয় দলের ৯ জন খেলোয়াড় এএফসি কাপের তিনটা ম্যাচে খেলেছিলেন। সেখানে ম্যাচ প্র্যাকটিসের ঘাটতির পাশাপাশি কাটিয়েছে জড়তাও। এরপরই কিরগিজস্তানে এই সিরিজে খেলছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা।

আজ রাতে দেশটির জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কোচ জেমি ডে এই ম্যাচে নতুনদের মাঠে নামিয়ে পরীক্ষা করাবেন বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে ভাল খেলা রাহবার খান মিনিট বিশেক খেলে কানাডা প্রবাসী এই খেলোয়াড় প্রাথমিকভাবে পাশও করেছেন। ফিলিস্তিনের কাছে ০-২ গোলে পরাজয়ের এবার কঠিন এক লড়াইয়ে মাঠে নামছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিন তাদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারিয়েছিল কিরগিজদের।

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে চারটি ম্যাচ খেলেছে। ভারতের নেহেরু কাপে ২০০৭ সালে প্রথম ম্যাচে ০-৩ গোলে পরাজয় দিয়ে শুরু হয়েছিল। কিরগিজস্তানের বিপক্ষে পরের বছর প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ১-২ গোলের ব্যবধানে। এরপর ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুটি ম্যাচ খেলে প্রথমটিতে ১-৩, এরপর দ্বিতীয়টিতে ০-২ গোলে হার মানতে হয়েছিল। ২০০৮ সালে ওই ম্যাচে একটিমাত্র গোলই করেছিল বাংলাদেশ। র‌্যাংকিংয়ের মতো মাঠের লড়াইয়েও যে বাংলাদেশকে প্রবল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছে সেটি পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। হয়তো লড়াই করার প্রবল মানসিকতা নিয়েই নামতে হবে বাংলাদেশকে।

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচের পর শুধু র‌্যাংকিং নয়, শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে থাকা কিরগিজদের বিপক্ষে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে খেলাটাকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কোচ। সিরিজে মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলার বিষয়ে কিছুটা হতাশ প্রকাশ করে জেমি ডে বলেন, ‘সাফ ফুটবলের আগে আমাদের প্রস্তুতি দরকার ছিল। তবে কেন আমরা মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে তিনটি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি সেটি বুঝতে পারছিনা। বিশ্রামের তেমন একটা সুযোগই যে মিলছে না। এ অবস্থায় আগের ম্যাচে খেলা ফুটবলাররা এই অল্প সময়ে কতটা রিকভার করতে পারে, সেটা দেখেই অঅজকের ম্যাচের জন্য দল সাজাব।’

কিরগিজস্তান ফিলিস্তিনের চেয়েও শক্তিশালী দল মেনে নিয়ে কঠিন পরীক্ষার জন্য শীষ্যদের প্রস্তুতি করেছেন এই ইংলিশ ম্যান। প্রথম ম্যাচে রাহবার ওয়াহেদ খান অভিষেকটা বদলি হিসেবে হলেও কিছু মুভমেন্টে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে রাহবার বলেন, ’ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল বিধায় কিছুটা চাপে ছিলাম। তবে আমি মনে করি, শেষ ১০ মিনিটে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, নার্ভাস না থেকে স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পেরেছি বলেই ভাল লাগছে। কিরগিজস্তানের বিপক্ষে সুযোগ পেলে আরও ভাল খেলার প্রত্যাশা করছি।’

রাহবারের খেলায় বিষয়ে কোচ জেমি ডে’র পর্যবেক্ষণ ছিল এরকম, ‘খুব অল্প সময় পেয়েছে রাহবার। এর মধ্যেও সে ভালো কিছু স্পর্শ করেছে বলে আমরা দেখেছি। সামনে আমাদের আরও ২ ম্যাচ আছে, সেখানে আরো সুযোগ পাবে বলেই মনে করছি।’

এদিকে প্রথম ম্যাচের পর ফিলিস্তিনের প্রধান কোচ ফরহাত মুসাবিগকোভ বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আমাদের দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল বিগত সময়ের তুলনায় অনেক ভাল খেলেছে। তাদের খেলায় উন্নতি চোঁখে পড়েছে আমার। বেশ কয়েকজন চৌকস খেলোয়াড় আছে যাদের দক্ষতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আমি তাদের পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’

এদিকে কিরগিজস্তান ম্যাচে দলে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন জেমি। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচে বেশ ভাল খেলেছেন উইঙ্গার রাকিব হোসেন। তার সাথে নতুন কাউকে হয়তো সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে গোলের সুযোগ পেলে কে নিশানা ভেদ করতে পারেন সেটি ফরোয়ার্ডও এখন খোজা হচ্ছে।

লাল সবুজ খেলোয়াড়রা যেন প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতে ভুলেই গেছেন। একটার পর একটা ম্যাচ খেলছেন আর গোল হজম করে চলেছেন। গোল দেওয়ার জন্য খেলোয়াড়ের খোঁজ মিলছে না। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ জাতীয় দল সর্বশেষ জয়ের দেখা পেয়েছিল ৯ ম্যাচ আগে। গত বছর ঢাকায় নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলের জয়ই ছিল সর্বশেষ পাওয়া সাফল্য।

এরপর খেলা আট ম্যাচের মধ্যে আবার তিনটিতে ড্র। বাকি পাঁচটিতে পরাজয় দেখেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এই আট ম্যাচে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা যেখানে হজম করেছে ১৫ গোল, বিপরীতে গোল করেছে মাত্র দুটি! যার একটি ফরোয়ার্ডের এজন, অপরটি একজন ডিফেন্ডারের। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে তাই জেমি ডে’র বড় দুশ্চিন্তা নাম গোলদাতা সংকট। প্রতিটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাই বেড়েই চলেছে এই দুশ্চিন্তা।

আজকের কিরগিজস্তানের মতো করে পরের ম্যাচগুলোতেও ভোগাবে এই সংকট। এর সমাধান কোথায় কেউ বলতে পারছেন না। সে কারণেই শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গোল করতে পারলে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। কিন্তু দক্ষ গোল স্কোরারের যে অভাব বছরের পর বছর ধরে ভোগাচ্ছে জাতীয় দলকে সেটি নিয়ে ভাবনার সময় চলে এসেছে। সাফ ফুটবলে সফলতা পেতে হলে ফরোয়ার্ডদের গোল করতেই হবে। তবেই মিলিয়ে যেতে পারে পেছনের সময়ে পাওয়া হতাশাগুলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link