আফিফের লড়াই ও হারে সিরিজ শেষ

উইকেট ছিলো ভীষণ মন্থর, কন্ডিশন বিচারে লক্ষ্যটাও ছিলো বেশ চ্যালেঞ্জিং। জিততে হলে তাই ব্যাট হাতে দারুণ কিছুই করে দেখাতে হতো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ইনিংসের শুরুতেই চার উইকেট হারিয়ে কাজটা দুরূহ হয়েছিল আরো। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর দারুণ এক জুটিতে বদলে যায় দৃশ্যপট। ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

কিন্তু শেষের সমীকরণ মেলাতে না পেরে সিরিজের শেষটা ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৩৩ বলে ৪৯ রানের হার না মানা দারুণ এক ইনিংস খেলেও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আফিফকে।

তবে প্রথম দুই ম্যাচে ও চতুর্থ ম্যাচে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের সাথে এর আগে দুটি ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও টি-টোয়েন্টিতে এটিই প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের।

১৬২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিলো সেটাই পায়নি বাংলাদেশ। সাবধানী শুরু করেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ ছিলেন দুই ওপেনার। পঞ্চম ওভারে আজাজ প্যাটেলের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন লিটন। একটু ঝাঁপিয়ে এক হাতে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন স্কট কুগেলেইন।

১২ বলে ১০ রান করে লিটন ফিরে যাওয়ার পর উইকেটে সুবিধা করতে পারেননি সিরিজে প্রথম বারের মত খেলতে নামা সৌম্য সরকার। কোল ম্যাককঞ্চির অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা সাধারণ এক ডেলিভারিতে বাজে শটে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন সৌম্য। ৯ বলে ৪ রান করে সৌম্য ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন নাঈম শেখ।

একটু পিছিয়ে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বেন সিয়ার্সের গতিতে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই ওপেনার। ২১ বলে ২৩ রান করে নাঈম ফিরে যাওয়ার পর বাজে শটের মিছিলে যোগ দেন মুশফিকুর রহিমও। সিরিজ জুড়ে ব্যাট হাতে ব্যর্থ অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান আজ ফিরে যান ৮ বলে ৩ রান করে। রবীন্দ্রকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে লং অফে ক্যাচ দেন মুশফিক।

৪৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। এই জুটিতেই ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে দু’জন যোগ করেন ৬৩ রান। দারুণ খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি। ২১ বলে ২৩ রান আসে বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাট থেকে।

মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পরেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। নুরুল হাসান সোহান ও শামিম হোসেন পাটোয়ারিও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। সোহান করেন ৪ বলে ৪ রান আর শামিমের ব্যাট থেকে আসে ৫ বলে ২ রান। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। আফিফ অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৪৮ রান করে।

নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেন আজাজ প্যাটেল ও মস্কট কুগেলেইন। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন জ্যাকব ডুফি, কোল ম্যাককঞ্চি ও বেন সিয়ার্স।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্র। ছয় ওভারেই উদ্বোধনী জুটিতে ৫৮ রান সংগ্রহ করেন দু’জন। সবচেয়ে বড় ঝড়টা যায় ইনিংসের চতুর্থ ওভারে শরিফুল ইসলামের উপর দিয়ে। সিরিজে প্রথম বারের মত সুযোগ পাওয়া এই পেসারের ঐ ওভার থেকে ১৯ রান সংগ্রহ করেন দুই ওপেনার।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আবার আক্রমণে আসেন শরিফুল। এবারো প্রথম বলে ছয় মারেন অ্যালেন, তৃতীয় বলে চার মারেন রবীন্দ্র। তবে এরপরই ঘুঁড়ে দাঁড়ান এই পেসার। পরের বলেই রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে দিয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফুল। এই পেসারের লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করে টাইমিং মিস করে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রবীন্দ্র।

১২ বলে ১৭ রান করে রবীন্দ্র ফিরে যাওয়ার দুই বল পরেই অ্যালেনকেও ফিরিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন শরিফুল। লাইন মিস করে ২৪ বলে ৪১ রান করে বোল্ড হয়ে যান এই ওপেনার। এরপর উইল ইয়াঙকে আফিফ হোসেন ফিরিয়ে দেওয়ার পর কলিন ডি গ্রান্ডহোম নাসুম আহমেদের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে গেলে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

ইয়াঙ করেন ৬ রান এবং গ্রান্ডহোমের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। ৮৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন টম লাথাম ও হেনরি নিকোলস। পঞ্চম উইকেটে ৩৫ রান যোগ করেন দু’জন। ২১ বলে ২০ রান করা নিকোলসকে ফিরিয়ে দিয়ে তাসকিন আহমেদ এই জুটি ভাঙলেও থেমে থাকেনি কিউইদের রানের গতি।

কোল ম্যাককঞ্চিকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ২১ বলে ৪৩ রান যোগ করেন লাথাম। এই জুটিতেই ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬১ রানের বড় সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। লাথাম ৩৭ বলে ৫০ রান করে ও ম্যাককঞ্চি ১০ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর দুটি উইকেট শিকার করেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ১৬১/৫ (ওভার: ২০; রবীন্দ্র- ১৭, অ্যালেন- ৪১, ইয়াঙ- ৬, গ্রান্ডহোম- ৯, নিকোলস- ২০, লাথাম- ৫০*) (আফিফ- ৩-০-১৮-১, তাসকিন- ৪-০-৩৪-১, নাসুম- ৩-০-২৫-১, শরিফুল- ৪-০-৪৮-২)

বাংলাদেশ: ১৩৪/৮ (ওভার: ২০; নাঈম- ২৩, লিটন- ১০, সৌম্য- ৪, মুশফিক- ৩, মাহমুদউল্লাহ- ২৩, আফিফ- ৪৯*, সোহান- ৪, শামিম- ২, তাসকিন- ৯) (রবীন্দ্র- ৩-০-১৯-১, প্যাটেল- ৪-০-২১-২, কুগেলেইন- ৩-০-২৩-২)

ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-২ ব্যবধানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link