‘মানকাড’ আলোচনায় মায়েভা দুমা

এক ম্যাচে চার ‘মানকাড’ আউট করে আলোচনার অনেকটা কেন্দ্রবিন্দুতে ক্যামেরুনের নারী অলরাউন্ডার মায়েভা দুমা। ১৬ বছর বয়সী এই পেসার উগান্ডার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের অঞ্চলভিত্তিক এক ম্যাচে এমন কান্ড ঘটিয়েছেন।

মানকাড আউট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই বিভিন্ন মাধ্যমে। অনেকের মতেই এটি নিয়ম অনুযায়ী সঠিকই! কেনো ব্যাটসম্যানরা এতে বাড়তি সুবিধা পাবে। বোলার বল ছাড়ার পূর্বেই ব্যাটসম্যানরা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারলে মানকাডিং অবশ্যই যুক্তিযুক্ত এমনটাই মনে করেন অনেকে।

অবশ্য সেদিন উগান্ডার বিপক্ষে ম্যাচেও ঠিক এমনই হয়েছিলো। উগান্ডার ব্যাটসম্যানরা বল রিলিজের আগে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশ কয়েকবার সেটি লক্ষ্য করেন দুমা। আর তারপরই শুরু করেন মানকাডিং। অবাক করা ব্যাপার হলো, প্রথমবার মানকাড আউটের শিকার হবার পড়েও গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে একই কান্ড করেন উগান্ডার ব্যাটসম্যানরা। আর তাই সুযোগ মতো গুনে গুনে চারবার মানকাড আউট করেন মায়েভা দুমা।

বটসওয়ানায় প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯০ রান সংগ্রহ করে উগান্ডা প্রমিলা দল। ইনিংসের ১৬ তম ওভারে তখন বল করছেন দুমা। ওই ওভারের তৃতীয় বল ছাড়ার আগেই নন স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান কেভিন অয়িনো ক্রিজ ছেড়ে বের হওয়া মাত্রই তাঁকে মানকাড আউট করেন দুমা।

ওই ওভারের শেষ বলে নতুন ব্যাটসম্যান ইম্যাকুলেট কাইসুঁই একই কান্ড করলে তাঁকেও মানকাডের ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে রিতা মুসামালি ও শেষ বলে জানেত এমবাবাজিকেও একই ফাঁদ পেতে শিকার করেন দুমা।

১৯১ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩৫ রানেই গুড়িয়ে যায় ক্যামেরুনের ইনিংস। অবশ্য ম্যাচ শেষে পরবর্তীতে দুমা বলেছেন এটি তাঁর পূর্বপরিকল্পিত ছিলো না। কিন্তু উগান্ডার ব্যাটসম্যানরা বার বার বল রিলিজের পূর্বে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসায় তিনি মানকাড করেছেন।

আইসিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি যখন খেলা শুরু করি, তখন আমি এ ব্যাপারে কোনো চিন্তাও করিনি। কিন্তু খেলা যত গড়াতে লাগলো আমি বুঝতে পারলাম ব্যাটসম্যানরা তাদের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। আমি কেনো এই সুযোগটা নিবো না? এটা আসলে কোনো কৌশল ছিলো না, কিন্তু আমি শুরু থেকেই এটা দেখছিলাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বেশ ভালো ট্যাকটিক। বিশেষকরে যখন আপনার প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী এবং তাদেরকে আউট করাটা বেশ কঠিন হচ্ছে। নন স্ট্রাইকার যদি ক্রিজ ছেড়ে আগেই বেরিয়ে আসলে তাহলে এটা আউট করার জন্য বেশ ভালো সুযোগ।’

অল্প বয়সেই অলরাউন্ডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা মায়েভা মানকাড কান্ডে ইতিমধ্যেই এসেছেন আলোচনায়। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে উঠে আসা নিয়ে দুমা বলেন, ‘আমি যেখানে থাকতাম দেখতাম অনেকেই ক্রিকেট খেলতো আর আমিও তাদের সাথে খেলতে যেতাম। এরপর আমি একটা ক্লাবে ভর্তি হই। আমি খেলাধুলা খুব পছন্দ করতাম। আমি সবসময় অনুশীলন করতাম। সেখান থেকেই আজকে আমি জাতীয় দলে।’

দুমাদের দেখেই ক্যামেরুনের অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রিকেটে। ক্যামেরুনে ক্রিকেট অনেক জনপ্রিয় না হলেও দিন দিন এটির গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে দুমাদের কারণেই। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট দিন দিন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এখানে। স্কুলেও নিয়মিত অনুশীলন হচ্ছে ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলার জন্য আমরা লড়ছি এটাও আমাদের জন্য বড় সুযোগ। যেটা ক্রিকেটকে এখানে আরো জনপ্রিয় করে তুলছে।’

দুমা মনে করে বটসওয়ানার এই টুর্নামেন্ট তাঁর জন্য বেশ বড় সুযোগ। এমনকি দলের জন্যও বেশ সুযোগ নিজেদের স্কিল আরো বাড়ানোর। দুমা বলেন, ‘এ ধরনের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নিজ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাটা আমাকে গর্ববোধ করায়। আমি অনেক কিছু শিখতে পারছি। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ খেলছে তাদের সাথে খেলার মাধ্যমে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। আমি খেলার মাধ্যমে এখন অনেক কিছুই শিখছি।’

শুরুর দিকে নিজেকে শুধু বোলার হিসেবে বিবেচনা করলেও দিন দিন নিজের ব্যাটিংটাও উন্নতি করেছেন এই অলরাউন্ডার। দুমা বলেন, ‘ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের মাঝে আমি বোলিং করতেই বেশি ভালোবাসি। কারণ আমি যখন ক্রিকেট শুরু করি সবার আগে বোলিংই করেছিলাম। আমি যেমন বোলিং করতে ভালোবাসি, তেমনি ব্যাটিংটাও আরো পারফেক্ট করার চেষ্টা করছি।’

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ভবিষ্যত লক্ষ্য নিয়ে দুমা বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আরো ভালো খেলোয়াড় হওয়া। শুধু আমার দলের জন্য না এর বাইরেও আমি সেরা হতে চাই। আমি আরো কঠোর পরিশ্রম করে নিজের সেরাটা দিতে চাই যাতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link