‘ভাল খেলে হেরে গিয়ে লাভ নেই’

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বলার মত কোনো ইতিহাস নেই। এই ফরম্যাটে তাই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বড় কোনো লক্ষ্যও থাকে না। কিন্তু সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর কাগজে কলমে অন্তত একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

এই প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

এই বিশ্বকাপ অভিযান নিয়ে খেলা ৭১ এর সাথে খোলা মেলা কথা বলেছেন অধিনায়ক রিয়াদ। বাংলাদেশের প্রস্তুতি, উইকেটের মান, দুটো সিরিজ জয়ের মূল্য – এসব কঠিন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। কথা বলেছেন নিজেকে ও মুশফিকুর রহিমকে নিয়েও।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কেমন হল?

আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা আমাদের ভালই হয়েছে। আমরা শেষ যে কয়েকটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেললাম সিরিজ গুলো জিতেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের আত্মবিশ্বাসও এখন বেশ ভাল আছে। আমি আশাবাদী অবশ্যই আত্মবিশ্বাসটা আমাদের কাজে দেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে।

আমাদের লক্ষ্য কী কেবল প্রথম পর্ব পার করা?

যেহেতু বিগত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ গুলোতে আমাদের হয়তোবা ওরকম বলার মত কোন রকম সাফল্য আমরা পাইনি। আলহামদুলিল্লাহ আমি চেষ্টা করবো, আমরা দল হিসাবে চেষ্টা করবো যেন বিশেষ কিছু করতে পারি। তো এটাই আমাদের লক্ষ্য।

আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো-এটা বলার মতো আত্মবিশ্বাস আছে আমাদের?

আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আপনি চ্যাম্পিয়ন হবেন, এরকম ঘোষণা দেওয়াটা আমার কাছে মনে হয় অতি আত্মবিশ্বাসী। যে কোনো দলের জন্যই এটা বলা কঠিন। কারণ এই ফরম্যাটটা এমন একটা ফরম্যাট যেখানে যে কোন দল যে কাউকে হারাতে পারে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মোমেন্টামের খেলা। আমাদের প্রতিটা ম্যাচই খুব সিরিয়াসলি খেলতে হবে এবং প্রতিটা ম্যাচেই আলাদা আলাদা বিষয় বা আলাদা আলাদা দিক নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এবং ঐ ভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

আমরা সর্বশেষ তিনটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলাম। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়েছি আমরা। এই জয়গুলো কী টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ভালো দল করে তুলেছে?

আমি সব সময় বিশ্বাস করি এবং আমাদের দলও বিশ্বাস করে যে এই ফরম্যাটে আমরা ভালো দল। এর আগে হয়তো বা আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছিলাম না। কিন্তু এই তিনটা সিরিজ আমরা জিতলাম। এই তিনটা সিরিজের আত্মবিশ্বাস আমাদের আরো জোগাবে যে, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতি পারি এবং আমরা আরো স্কিলফুল ক্রিকেটার হতে পারি। আমাদের যে স্কিল লেভেল আছে এটা আমাদের সাথে ভালো পারফরম্যান্সের একটা সমন্বয় এই সিরিজগুলোতে হয়েছে। এখন কম্বিনেশটা আমাদের ঠিক করতে হবে। এখন আমরা যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি এবং ছোট খাটো জায়গা গুলো যেখানে আমাদের উন্নতি করা দরকার, সেটা যদি করতে পারি, আমি আশাবাদী এই ফরম্যাটে আমরা আরো ভালো দল হয়ে উঠবো।

একটা অভিযোগ আছে যে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা শুধু উইকেটের কারণে জয় পেয়েছি …

মানুষ তো অভিযোগ করবেই। অনেক মানুষের কাজই আছে অভিযোগ করা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে এই ফরম্যাটে আমাদের জয়ের একটা ধারাবিহিকতা প্রয়োজন ছিলো। সেটা আল্লাহর রহমতে আমরা করতে পেরেছি এবং এটার জন্য দল হিসাবে ও টিম ম্যানেজমেন্ট আমরা সবাই খুব খুশি।

এই উইকেটে ব্যাট করার ফলে ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতিতে কী ঘাটতি থেকে গেল না?

আমি শিকার করি যে উইকেট এবং কন্ডিশন যে রকম ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু আপনি একটা জিনিস খেয়াল করবেন যে অনেকে অভিযোগ করছে আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়নি, আমরা উইকেটের জন্য জিতেছি। তো উইকেট প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য যেমন কঠিন ছিলো, আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। এরকম না যে ওদের সময় বোলিং সহায়ক ছিল আর আমাদের সময় ব্যাটিং সহায়ক হয়ে গেছে এক দুই ঘণ্টার ভিতর, এরকম তো ছিল না। আমাদের ব্যাটসম্যানরা সংগ্রাম করেছে, হ্যাঁ অবশ্যই উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু আমরা ঐ চ্যালেঞ্জটা নিতে পেরেছি এবং বোলাররা দুর্দান্ত ছিল। আমার কাছে মনে হয় এই ক্রেডিটটা আমাদের দলকে দেওয়া উচিত।

দল হিসেবে কী আপনারা এই জয়ের ফলে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন?

যে কোন জয়ই যে কোন ফরম্যাটে আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে। এখন আপনি যদি ভালো ক্রিকেট খেলে হেরে যান, সেই হার আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে না যতটুকু আপনি একটা ম্যাচ জিতলে আত্মবিশ্বাস পাবেন। জয়ের আত্মবিশ্বাস সব সময়ই আপনাকে অন্য রকম একটা সাহায্য করে। ইনশাআল্লাহ সামনের বিশ্বকাপের মঞ্চেও সেই আত্মবিশ্বাস আশা করি কাজে আসবে।

আসলে এমন জয়ের আত্মবিশ্বাস, নাকি ভালো উইকেটে প্রস্তুতি; কোনটা জরুরি?

আত্মবিশ্বাসও জরুরি, একই সাথে আমাদের প্রস্তুতিটা আমরা কী ভাবে নেবো, ওখানকার উইকেট গুলো কেমন হবে ঐ চিন্তাধারা থেকে আমাদের প্রস্তুতিটা কী ভাবে নেবো এটার উপরও নির্ভর করে। দুটোই জরুরি।

আমাদের বোলাররা এখানে যে দাপট দেখাতে পেরেছে, সেটা কী আরব আমিরাতে পারবে বলে মনে হয়?

আলহামদুলিল্লাহ, আমার কাছে মনে হয় আমাদের বোলিং বিভাগ এই সময়ে সেরা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। আপনি যদি আমাদের বোলিং বিভাগের বৈচিত্র্য ও কম্বিনেশনটা দেখেন এটা অনেক ভালো। মুস্তাফিজ, সাকিব, তাসকিন, সাইফউদ্দিন, শরিফুল, নাসুম, মেহেদী। স্পিন বিভাগ এবং পেস বিভাগ দুই বিভাগেই ভালো একটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে দলের ভিতর। এই সুযোগটা এবং এই প্রতিযোগিতাটা দলকে আরো ভালো খেলতে সাহায্য করছে। এবং এটা খুবই ভালো একটা দিক আমাদের দলের উন্নতির ক্ষেত্রে।

মুশফিক কয়েকটা সিরিজ ধরে সেভাবে রানে নেই। তাকে নিয়ে কী দুশ্চিন্তায় আছেন?

বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশ দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে মুশফিক। ওটা নিয়ে আমাদের কারো কোন সন্দেহ নেই। এক দুইটা ম্যাচ ও যে ভাবে ব্যাটিং করতে চেয়েছে বা আমরা যে ভাবে ওর কাছে থেকে প্রত্যাশা করি সে হয়তো ঐ ভাবে পারফরম্যান্স করতে পারেনি। শুধু এক দুইটা ম্যাচ। ও সব সময় আমাদের দলের জন্য একজন অপরিহার্য ক্রিকেটার। সে আমাদের জন্য নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। ও বড় মঞ্চের খেলোয়াড়, আমি আশাবাদী ও বড় মঞ্চে আবারো বাংলাদেশ দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়াবে।

আপনি আপনার নিজের পারফরম্যান্স কী ঠিক আছে বলে মনে করেন?

আলহামদুলিল্লাহ, শেষ দুই তিনটা সিরিজে ব্যাটিংয়ে যে ভাবে করছি দলের পরিস্থিতি ও কন্ডিশন অনুযায়ী মোটামুটি ভালো লাগছে। কিন্তু আমার মনে হয় আমার আরো উন্নতির দিক আছে, ঐ জিনিস গুলো নিয়ে বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্পে কাজ করবো এবং আরো ভালো করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link