‘এটা সত্যি অসাধারণ একটা ব্যাপার। আমি যখন ব্যাট করতে যাই এমন কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। আমি যখন উইকেটে নামি দলের অবস্থা তখন প্রথম দশ ওভারেই ২৯ রানে ৩ উইকেট নেই। আমার প্রথম লক্ষ্য ছিলো শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা। ইনিংস যত এগিয়েছে আমি আত্মবিশ্বাস পেয়েছি এবং আমার পরিকল্পনা মতো শট খেলতে পেরেছি। শেষ ওভারে যখন গৌড়ি টোকা বল করছিলো, আমি প্রথম চার ছয় মারার পর ছয় বলে ছক্কা মারার চিন্তা করছিলাম। আমি বেশ খুশি যে এই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পেরেছি।’
মালহোত্রার ছয় ছক্কায় ৯ উইকেটে ২৭১ রান সংগ্রহ করেছিলো আমেরিকা। সেই ম্যাচে ১৩৪ রানের বড় জয় পায় তাঁরা। সেই সাথে টি-টোয়েন্টিতে ছয় ছক্কা হাঁকানো যুবরাজ সিংয়ের পাশে নাম লেখান ভারত থেকে এসে আমেরিকার ক্রিকেটে নাম লেখানো জাসকরন মালহোত্রা। জাসকরনকেও চাইলে আমেরিকার যুবরাজ সিং বলা যায়।
আশায় আছেন শুভেচ্ছা পাবেন যুবরাজ সিংয়ের কাছ থেকেও। যদিও অপেক্ষার প্রহর এখনো শেষ হয়নি, তবে তিনি আশা ছাড়ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি জানি যুবরাজ পাজিও আমাকে কল করবে। আমি অধীর আগ্রহে আছি সেটার জন্য।’ যুবরাজের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পেলে নিশ্চয়ই সেটা জাসকরনের জন্য দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। এই যুবরাজই প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ওভারে ছয় ছক্ক হাঁকান ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
ভারতের হয়ে বয়স ভিত্তিক দলে খেলেছেন জাসকরন মালহোত্রা। ছিলেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে। একবারে কাছে গিয়েছিলেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলার। বিশ্বকাপের দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন ২০০৮ সালে! কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল স্কোয়াডে সুযোগ পাননি। বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে খেলার বড় সুযোগটা হাত ছাড়া করার আক্ষেপ তো আছেই। সেবার ভারত শিরোপাও যে জিতেছিল!
জাসকরণ বলেন, ‘আমি হিমাচল প্রদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৫ ও অনূর্ধ্ব ১৭ দলে অধিনায়কত্ব করেছি। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব ১৭ খেলা ক্রিকেটারদের আমি সেরাদের একজন ছিলাম। ২০০৮ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ২০ জনের দলেও আমি জায়গা পেয়েছিলাম। তবে, দূর্ভাগ্যবশত শেষ ১৬ তে সুযোগ পাইনি। যার কারণে বিরাট কোহলির অধীনে সেবার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলতে পারিনি। ওই বিশ্বকাপে ভারত শিরোপা জিতে।’
হিমাচল প্রদেশের সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেও ডাক পাননি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের জন্য। ২০১০ সালে আমেরিকায় আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে সেখানে এক ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পান তিনি। বেশ ভালো পারফরমও করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতিবছর আমেরিকা থেকে খেলার জন্য প্রস্তাব পেতেন তিনি। একটা সময় বুঝতে পারলেন ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ! আর তাই ২০১৪ সালে একেবারে পাড়ি জমালেন আমেরিকায়।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিলো ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা। আমেরিকার হয়ে খেলতে পেরেও বেশ উচ্ছ্বসিত আমি। এখানে ক্রিকেট এখন সঠিক পথেই আছে। ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকেও সম্ভাব্য ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটা আমাদের জন্য সেরা সুযোগ হবে পুরো বিশ্বের সামনে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার। এটার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই রাউন্ডে ভালো খেলাটাও দরকার। যাতে আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারি।’
সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলেন জাসকরন। ভারতের হয়ে না হলেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমেরিকার হয়ে। এবার সেই আমেরিকান ক্রিকেটকেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে চান জাসকরন। সেটা তিনি করতে পারুন, চাই না পারুন – ছয় ছক্কার সেই ওভারের সুবাদে জীবনটা একদম মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেল জাসকরনের।