সবদিকেই মুস্তাফিজ!

ফ্র‍্যাঞ্জাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। বিশ্বের নামি-দামি ক্রিকেট প্লেয়ারদের এক মিলনমেলাই বলা চলে। অবশ্য আইপিএলের চতুর্দশ আসর চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা এই লিগে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি।

সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া নিয়মিত আইপিএলে সু্যোগ পাননি আর কোনো বাংলাদেশি! এর মাঝেই আইপিএলের এক কীর্তিতেও নাম আছে মুস্তাফিজের।

আইপিএলের গেলো তেরো আসরে সেরা উদীয়মান তারকার পুরস্কার জিতেছেন মোট ১৩ জন। এর মধ্যে ১২ জনই ভারতীয় ক্রিকেটার। আর একবার জিতেছেন মুস্তাফিজুর রহমান! বিশ্বের বহু তারকা ক্রিকেটার সহ অনেক তরুণদের মাঝেও ভারতের বাইরের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এই পুরস্কার জিতেন মুস্তাফিজ।

২০১৬ সালে নিজের খেলা আইপিএলের প্রথম আসরেই এই কীর্তি গড়েন তিনি। সেবার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৬.৯০ ইকোনমিতে ১৭ উইকেট শিকার করেন ফিজ।

২০১৬ আইপিএলে মুস্তাফিজুর ছিলেন পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। অভিষেক আসরেই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে আপন রঙে রাঙিয়েছিলেন তিনি। স্লোয়ার আর কাটার ভেলকিতে মাত দিয়েছেন বিশ্ব সেরা তারকা ব্যাটসম্যানদের!

২০১৬ তে ইমার্জিং প্লেয়ারের পুরষ্কার জেতার পরের আসরে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। বাজে পারফরম্যান্সে পাননি খুব বেশি সুযোগও। তবে, চলতি আসরে এখন পর্যন্ত বেশ দুর্দান্ত বোলিং করছেন। শুধু আইপিএলই নয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ দারুণ সময়ই পার করছেন ফিজ।

২০১৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ডেথ ওভারে উইকেট এবং ইকোনমি অনুযায়ী সেরা বোলার মুস্তাফিজ। গেলো দুই বছরে এখন পর্যন্ত ৭.৯৫ ইকোনমিতে ৬১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। মুস্তাফিজের পরই উইকেটের দিক থেকে তালিকার দ্বিতীয়তে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস মরিস (৫৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো (৫৫), কিংবা ইংল্যান্ডের  ক্রিস জর্ডানরা (৫৫)।

উইকেটের দিক দিয়ে মুস্তাফিজের কাছাকাছি থাকলেও ইকোনমির দিক থেকে মুস্তাফিজের চেয়ে বেশ পিছিয়েই আছেন বাকিরা। ইকোনমির দিক থেকে দ্বিতীয়তে থাকা ডোয়াইন ব্রাভো গেলো দুই বছরে গড়ে ৮.২৬ ইকোনমি রেটে বল করেছেন।

এবারের আসরের আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচেই দলের হয়ে সেরা পারফরম করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও ১৯ তম ওভারে মুস্তাফিজের ম্যাজিকেল বোলিংয়ে ম্যাচের মোড় পালটে যায়।

শেষ ২ ওভারে পাঞ্জাব কিংসের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো মাত্র ৮ রান। ১৯ তম ওভারে মুস্তাফিজ দেন মোটে ৪ রান! এরপর শেষ ওভারে কার্তিক ত্যাগির বোলিং নৈপুণ্যে জয় পায় রাজস্থান রয়্যালস।

দ্বিতীয় ম্যাচে দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২২ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। চার ওভারের কোটায় কোনো বাউন্ডারি দেননি তিনি! শিকার করেছেন ঋষভ পান্ত ও শিমরন হেটমায়ারের উইকেট।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ একদম দোরগোড়ায়। আইপিএলের পর একই ভেন্যুতে আরব আমিরাতে পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর। আর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সাম্প্রতিক সময়ে মুস্তাফিজের ছন্দে থাকাটা বাড়তি মাত্রা যোগ করবে বাংলাদেশ দলে। এছাড়া আইপিএলের এই অভিজ্ঞতা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চাইবেন ফিজ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কতটা ভালো করবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করলে মুস্তাফিজের বোলিং পারফরম্যান্সের উপর। তবে, মুস্তাফিজ গেলো দুই বছর ডেথ ওভারে যেভাবে নিজেকে শীর্ষে রেখেছেন, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেকোনো দলের জন্যই বড় ঘাতক হয়ে উঠতে পারেন তিনি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link