ইমরান খানকে নিয়ে বেশ কিছু লেখা দেখলাম। বেশিরভাগ লেখাই অসাধারণ স্মৃতিচারণ। কিন্তু সব কটি লেখাতেই মূল সুরটা একই। নিছক পরিসংখ্যান দিয়ে ইমরানকে মাপা যায় না। নিশ্চয়ই পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষ ইমরান বা রাজনীতিবিদ ইমরানকে মাপা যাবে না।
সেখানে ক্যানভাসটা জীবনের। ক্রিকেট নামক খেলাটা সেই ক্যানভাসে একটা ছোট্ট তুলির আঁচড়। কিন্তু ক্রিকেটার ইমরানের কম্পন মাপার প্রবলতম রিখটার স্কেল বোধহয় সংখ্যাই। ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ হোক বা ‘অলরাউন্ডার’ ইমরান খানের ক্যারিয়ার প্রোগ্রেশন দুটোরই পরিচয় দেয় তথাকথিত শুষ্ক পরিসংখ্যান। সেই নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
প্রথমে আসি অধিনায়ক হিসাবে ইমরানের পরিসংখ্যানে। অধিনায়ক হিসাবে তাঁর ব্যাটিং গড় ৫২.৩৪। ৪৮ টি ম্যাচে তিনি অধিনায়কত্ব করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৮০ জন ক্রিকেটার ২০র বেশি টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন।ব্যাটিং গড়ের হিসেবে ইমরানের ওপর সেই তালিকায় মাত্র ১৩ জন। অধিনায়ক হিসাবে ইমরানের বোলিং গড় ২০.২৬।
অধিনায়ক হিসেবে ইমরানের চেয়ে ভালো বোলিং গড় মাত্র তিনজনের – মার্ক টেলর, অ্যালিস্টেয়ার কুক ও মাইকেল আথারটন। তাঁদের মিলিত উইকেট সংখ্যা তিন। এমনকি কুড়ি টেস্টে অধিনায়কত্বের আঙ্কিক কারফিউ যদি সরিয়েও দিই, তবুও ইমরান ওপরের দিকে।
তাঁর ওপরে যে ১৭ জন রয়েছেন বেশির ভাগই হয় ব্যাটসম্যান অধিনায়ক, যাঁরা মাঝে মধ্যে এক আধটা উইকেট পেয়ে গেছেন, বা এমন কোনো বোলার যিনি অধিনায়ক হিসাবে মাত্র এক-আধটা টেস্ট খেলেছেন। কাজেই স্বচ্ছন্দে বলা যায়, অধিনায়ক হিসাবে সেরা বোলিং গড় ওই অক্সফোর্ড শিক্ষিত লাহোরের ভদ্রলোকের।
এবার আসি অলরাউন্ডার ইমরানের ক্রিকেট জীবনে। ইমরান ক্রিকেট জীবনের শুরুর দিকে যে খুব একটা ধারাবাহিক ছিলেন তা নয়। তাঁর ৮৮ টেস্টের ক্রিকেট জীবনকে যদি তিন ভাগে ভাগ করি তাহলে প্রথম ২৯ টেস্টের ইমরান একেবারেই আশাপ্রদ নয়। এই সময়ে তিনি ৯৭৯ রান করেছেন ২৩.৮৭ গড়ে এবং ১১৮ উইকেট নিয়েছেন ২৯.৯৪ গড়ে। বস্তুত তাঁর বোলিং গড় তিরিশের নিচে নামে ২৭ টেস্টের পর। এই ২৯ টেস্ট তিনি খেলেছিলেন ১৯৭১ থেকে ১৯৮০-এই সময়ে। অলরাউন্ডার ইমরানের সেরা সময় ২৯ টেস্টের পর। অর্থাৎ ৩০ থেকে ৫৮ নম্বর টেস্টে।
এই দ্বিতীয় ভাগে ইমরান ১২৪৫ রান করেন ৩৮.৯ গড়ে এবং ১৫১ উইকেট নেন অভাবনীয় ১৫.৮ গড়ে। এই সময়ে তিনি বোলিং অলরাউন্ডার থেকে প্রকৃত অলরাউন্ডারে উন্নীত হন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬-এটাই ইমরানের সেরা সময়। ১৯৮৬ পরবর্তী শেষ ৩০ টেস্টে ইমরান মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডারে পরিণত হন।
তাঁর ব্যাটিং গড় এইসময়ে ছিল ৫৬.৫৩ এবং রান ১৫৮৩। বোলিং গড় ২৫.১৫ কিন্তু উইকেট মাত্র ৯৩। অর্থাৎ বোলিং করতেন অনেক কম, কিন্তু যখনই করতেন, ভালো করতেন। শেষ পর্যায়ে তিনি বল করেছেন ৮৮০.৩ ওভার। অর্থাৎ টেস্ট প্রতি ১৭৬ বল। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি করতেন টেস্ট প্রতি ২২১ বল। প্রথম ২৯ টেস্টে তাঁর টেস্ট প্রতি বলের সংখ্যা ২৬৮।
ক্রিকেটার ইমরানের সেরা সময় ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬। ১৯৮২ সালে তিনি অধিনায়ক হন। ক্রিকেটার ইমরান পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের ক্যারিয়ারের আদর্শ কেস স্টাডি এবং ব্যক্তিগত ভাবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, ক্রিকেটার ইমরানের কম্পন উপলব্ধি করার সেরা উপায় শুষ্ক পরিসংখ্যানই।