শামিম পাটোয়ারি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন কিনা তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। মাত্র ৭ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন তিনি। তবে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী শামীম ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রমাণিত ক্রিকেটার। তবে বিশ্বকাপে যাবার আগে তাঁকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে নেয়া হলো কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
একটু পিছনে ফিরে যাওয়া যাক। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনাল ম্যাচ।
বাউন্ডারির দিকে ছুটতে থাকা একটা বল যেটাকে মাঠের সবাই ইতোমধ্যে বাউন্ডারি বলে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। মনে হলো হঠাৎই একটা বাজপাখি এসে বলটাকে মাঠের মধ্যে আঁটকে দিল। দুরন্ত গতিতে এসে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে একটা চার আটকালেন। একইরকম চিত্র দেখা গেলো মাস কয়েক আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। বাউন্ডারি লাইনে এবার কী দারুণ এক ক্যাচ। এতখানি দৌড়ে এসে ক্যাচটা ধরার পরেও নিজেকে ব্যালেন্স করেছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি।
শামিম বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসা ব্যতিক্রমী এক প্যাকেজ। কব্জি কিংবা পেশীতে দারুণ জোর। তবে সেই মাসল পাওয়ার ব্যবহার করে কীভাবে শট খেলতে হয় সেটা খুব ভালো করে বোঝেন। মোদ্দা কথা শামিম দেশের ক্রিকেটে আসা নিখাঁদ স্লগারদের একজন। এছাড়া নতুন কিংবা পুরান বলে দলের প্রয়োজনে হাতও ঘোরাতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা ফিল্ডার শামিম পাটোয়ারি ইতোমধ্যে বিশ্বমানের। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরল এবং প্রথম।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ শুরু করেছিলেন। একটি ম্যাচ জয়ী ইনিংসও এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। তিনি যে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেন তাঁর প্রমাণ মিলেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। তবে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচে আবার ব্যাট হাতে কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। ফলে সেই দুই ম্যাচের বিবেচনাতেই তাঁকে একাদশ থেকে বাদ দেয়া হয়।
মিরপুরে যে পিচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা হয়েছে সেখানে দুই দলের ব্যাটসম্যানই রান করতে সংগ্রাম করেছেন। বল ঠিক করে ব্যাটেই আসছিল না। ওই টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১২০ রান করতেই ঘাম ঝড়িয়েছে দুই দল। তবে বিশ্বকাপে নিশ্চই এমন পিচে খেলা হবেনা। আরবা আমিরাতের উইকেটে আশা করা যায় নিয়মিত ১৫০-১৬০ রানের স্কোর দেখা যাবে।
সেই সময়টাতেই শামিমের গুরুত্ব বোঝা যাবে। নিয়মিত ১৬০ বা এরবেশি রান করতে হলে দলে একজন স্লগারের প্রয়োজন হবে। যে নেমেই ব্যাট চালাতে পারবে। বাংলাদেশ দলে এখন এমন ব্যাটসম্যান শুধু শামিমই। যিনি নিজেকে স্লগার হিসেবেই গড়ে তুলেছেন। নিজের পেশি শক্তির দারুণ ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে শামিমের মত ক্রিকেটার রোজ আসেনা। আমরা ছয়-সাত নম্বর পজিশনে যে ধরনের ব্যাটসম্যান খুঁজি শামিম ঠিক সেটাই। কিংবা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারচেয়েও বেশি কিছু। তাঁর বল রিড করার ক্ষমতা অসাধারণ। খারাপ বল গুলো সীমানা ছাড়া করতে কখনো ভুল করেননা। একজন স্লগারের ভূমিকা ঠিক যা হয়। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি দলে শামিমের মত ক্রিকেটারদের ভীষণ প্রয়োজন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শামিমের মানসিকতাও একটি বড় শক্তির জায়গা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে পারেন। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ফিল্ডিং বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই তাঁর ফিল্ডিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডারদের একজন শামিম।
এছাড়া বোলার শামিমকে এখনো সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। তবে বল হাতেও বেশ কার্যকর তিনি। বয়সভিত্তিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটেও বল হাতে বেশ সফল। বিশ্বকাপেও স্পিনিং উইকেটে তাঁর স্পিন ব্যবহার করতেই পারে বাংলাদেশ। ব্যাট, বল, ফিল্ডিং সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড হতে পারেন শামিম।