দেশের হয়ে বিশ্বকাপের আসরে খেলতে কেউ না চায়। এবার যখন অপেক্ষার প্রহর শেষে আরব আমিরাতে মরুর বুকে পর্দা উঠছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের, তখনও পূরণ হয়েছে অনেকের স্বপ্ন। হোক সেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এই আসরকে ঘিরে ভক্ত-সমর্থকদের উত্তেজনার কমতি নেই।
২২ গজের লড়াইয়ে কারা জিতবে সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে এবারের আসরে বাড়তি নজর থাকবে বিশেষ কিছু খেলোয়াড়ের উপর। যারা মরুর বুকে দেখাতে পারেন চমকপ্রদ পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপ মঞ্চে চোখ ধাঁধাঁনো পারফরম্যান্স দিয়ে চমকে দিতে পারেন এমন কিছু ক্রিকেটারদের নিয়েই খেলা ৭১-এবারের আয়োজন।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)
চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের সময় করেছিলেন দারুন এক রেকর্ড। এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক ব্যাটার রিজওয়ান। পল স্টার্লিংয়ের রেকর্ড টপকে নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি। উড়ন্ত ফর্মে আছেন এই ব্যাটার!
চলতি বছর ১৭ ম্যাচে ৯৪ গড়ে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ৭৫২ রান করেছেন তিনি। সাত ফিফটির পাশাপাশি করেছেন এক সেঞ্চুরিও! তাঁর দুর্দান্ত ফর্ম ওপেনিংয়ে বর্তমানে পাকিস্তানের অন্যতম ভরসা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের জন্য বড় থ্রেট হতে পারেন রিজওয়ান।
- রহমানুল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান)
আফগানিস্তানের অভিষেকের পর থেকে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নজর কেঁড়েছেন সবার। সবশেষ এবারের আসরের লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) ৮ ম্যাচে ২১ গড়ে ১৬৯ রান করেছেন তিনি! স্ট্রাইক রেট ১৫৮! এখন পর্যন্ত ১৩ টি-টোয়েন্টিতে ৩৪ গড়ে ৪৪৬ রান করেছেন গুরবাজ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্ট্রাইক রেট ১৪৪! ওপেনিংয়ে গুরবাজের ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে ভালো সংগ্রহ এনে দিতে পারে আফগানিস্তানকে। আরব আমিরাতের মাটিতে ৩ ম্যাচে ১ ফিফটিতে ৩৮ গড়ে ১১৪ রান করেছেন তিনি। সেখানেও স্ট্রাইক রেট ১৫৪।
- সুরিয়াকুমার যাদব (ভারত)
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। দীর্ঘ কয়েক মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে অপেক্ষার প্রহর ঘুচিয়ে সুযোগ পান জাতীয় দলে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই ফিফটি! ম্যাচ সেরার পুরস্কারের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বলেই ৬ মারার রেকর্ড! এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকের দ্বিতীয় ম্যাচেই করেছেন ফিফটি। এবছর আইপিএলে ১৪৩ স্ট্রাইক রেটে ২৩ গড়ে ২ ফিফটিতে করেছেন ৩১৭ রান।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে মিডল অর্ডারে তাই বিশেষ নজর থাকবে তাঁর উপর। তারকায় টুইটুম্বুর দলটার ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে পারেন সুরিয়াকুমার।
- লিয়াম লিভিংস্টোন (ইংল্যান্ড)
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে বড় চমক লিয়াম লিভিংস্টোন। মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে বেশ পারদর্শী তিনি। চলতি বছর ৬ ম্যাচে ৪৭ গড়ে ১৮২ স্ট্রাইক রেটে ১৯০ রান করেছেন তিনি। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পার্ট টাইম স্পিনার হিসেবেও বেশ কার্যকর তিনি।
আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে আরব আমিরাতে সুযোগ পেলেও সেটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন এই ব্যাটার। তবে সবশেষ ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লিগ ভাইটালিটি ব্লাস্টে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর জাতীয় দলে তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম মিডল অর্ডারে ইংল্যান্ডকে দিতে পারে বাড়তি মাত্রা।
- জশ ইংলিস (অস্ট্রেলিয়া)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডের সবচেয়ে বড় চমক উইকেটরক্ষক ব্যাটার জশ ইংলিস। চলতি বছর ভাইটালিটি ব্লাস্টে ১৪ ম্যাচে ৪৮ গড়ে ৫৩১ রান করেন তিনি! স্ট্রাইক রেট ১৭৫! ২ সেঞ্চুরি আর ১ ফিফটিও আছে তাঁর নামের পাশে।
সবশেষ বিগ ব্যাশে ছিলেন সেরাদের একজন। ১৭ ম্যাচে ৩৪ গড়ে ৩ ফিফটিতে করেছিলেন ৪১৩ রান, স্ট্রাইক রেট ১৪০! ব্যাট হাতে তাঁর দুর্দান্ত ফর্মই তাকে টেনে এনেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। আপাতত দেখার বিষয় অভিজ্ঞ ম্যাথু ওয়েডকে টপকে একাদশে জায়গা করতে পারেন কিনা।
- ডেভন কনওয়ে (নিউজিল্যান্ড)
ত্রিশ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েই ব্যাট হাতে তান্ডব দেখান নিউজিল্যান্ড ব্যাটার ডেভন কনওয়ে। এখন পর্যন্ত ১৪ টি-টোয়েন্টিতে ৫৯ গড়ে করেছেন ৪৭৩ রান। ১৫১ স্ট্রাইক রেট! আছে চার ফিফটিও। এশিয়ার মাটিতে এখনো খেলার সুযোগ না হলেও ব্যাট হাতে তাঁর ফর্ম প্রতিপক্ষের জন্য হতে পারে চিন্তার কারণ।
আরব আমিরাতের মাটিতে সুবিধা করতে পারবেন কিনা সেটা অবশ্য সময়ই বলে দিবে। তবে নিউজিল্যান্ডের এই নব্য তারকা ব্যাট হাতে বিশ্বমঞ্চে দেখাতে পারেন বড় চমক!
- ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
মুখ থুবড়ে পড়া লঙ্কান ক্রিকেটে আশার আলো হয়ে এসেছিলেন লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারঙ্গা। অবশ্য দিনে দিনে নিজেকে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও শেষদিকে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে এই লঙ্কান ভবিষ্যৎ তারকাকে। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লঙ্কানদের জন্য ‘বিগ অ্যাসেট’ এই হাসারাঙ্গা। দেখার বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট কিংবা বল হাতে দেখানো জৌলুস ঠিক কতটা ধরে রাখতে পারেন তিনি।
- হেইডেন ওয়ালশ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীদের একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই দলের বড় বড় তারকাদের ভীড়ে এক ক্ষুদ্র নাম লেগ স্পিনার হেইডেন ওয়ালশ। ছোট্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো পারফরমই তিনি দেখিয়েছেন।
সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ঘরের মাটিতে ৫ ম্যাচে প্রায় ৬ ইকোনমিতে শিকার করেছিলেন ১২ উইকেট। এছাড়া ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (সিপিএল) বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের উইকেটে এই লেগস্পিনার দলের জন্য হতে পারেন অন্যতম সেরা অস্ত্র।
- তাবারাইজ শামসি (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড স্পিনারদের একজন এই তাবারাইজ শামসি। বর্তমানে টি-টোয়েন্টির এক নম্বর বোলারও তিনি। চলতি বছর ২১ ম্যাচে ২৮ উইকেট শিকার করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই স্পিনার। ইকোনমি রেটটাও অবাক হবার মতোই!
মাত্র ৫.৫৪ ইকোনমিতে তিনি বল করেছেন। বরাবরই অনেকটা আলোচনার বাইরে থাকা ২২ গজের এই ম্যাজিশিয়ান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরব আমিরাতের উইকেটে হয়তো বল হাতে নতুন কোনো ‘জাদু’ দেখাবেন!
- মুস্তাফিজুর রহমান
গেলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কাটার আর স্লোয়ার ভেলকিতে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন ব্যাটারদের। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলেও ছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের অন্যতম সেরা বোলার। মাঝে খেই হারিয়ে ফেলা ফিজ ফিরবেন কিনা সে নিয়েও অনেকে ছিলেন সন্দিহান।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর পারফরম্যান্স যেনো আবারো আশা জাগিয়েছে সমর্থকদের মনে। বিশ্বকাপের মঞ্চে মুস্তাফিজ যে দলের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন সে নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। বোলিং বিভাগে বাংলাদেশের মূল ভরসার জায়গাটাও যে ফিজ।