‘সে লঙ্কা ও নেই আর তার সে ঝাঁজ নেই’ – আর সে ঝাঁজ নেই বলেই লঙ্কা দলকে প্রিলিমিনারি রাউন্ডে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়ার বাঁধা টপকে সুপার ১২-তে ঢুকতে হবে। বছর পাঁচেক আগেও যদিও সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। কিন্তু এখন সেটাই ঘোর বাস্তব, আসলে বছর কয়েক ধরেই সাঙ্গাকারা, মাহেলা, দিলশান,হেরাথ, থিসারা, কুলাসেকারাদের অবসরের পরে এই শ্রীলঙ্কা শুধুই অতীতের ছায়া মাত্র।
২০০৯ ও ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রানার আপ ও ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা তাদের পুরোনো ঝাঁজ হারিয়ে নিজেকে খুঁজে চলেছে। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানেরও পরে ১০ নম্বরে থাকা দলটা শেষ সাড়ে পাঁচ বছরে ৫৪টা ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র ১৬টা।
এর থেকেই বোঝা যায় ঠিক কেমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে লঙ্কানরা। অনেকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ট্রানসিশন পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে চলেছে বলবেন, কিন্তু একটা দলের এই ট্রানসিশন পিরিয়ড এতো দিন ধরে চললে বোঝা যায় সমস্যাটা অনেক গভীরে। যাই হোক বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া দলটা কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিশদে দেখা যাক।
- শক্তি
এবারের বিশ্বকাপে মালিঙ্গা দলে না থাকলেও বোলিং ডিপার্টমেন্ট খুব খারাপ ফল করবে বলে মনে হয়না। দুশমন্থ চামিরা ফাস্ট বোলার হিসেবে যথেষ্টই ভালো, তবে লঙ্কান দের মূল ভরসা তাদের স্পিনাররা। এই কয়েক বছরে তাদের আলো হয়ে যদি কেউ থাকেন, তিনি হলেন বর্তমানে টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের মধ্যে র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
একদিনের ক্রিকেটে অভিষেকে হ্যাটট্রিক করা হাসারঙ্গার লেগ স্পিন ও গুগলি আমিরশাহীতে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ভরসা হতে চলেছে, উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রান বেঁধে রাখাতেও যথেষ্ট পটু হাসারাঙ্গা ২৩ ম্যাচে মাত্র ১৪ গড়ে ৩৫টা উইকেট তুলে নিয়েছেন, এছাড়া হাতে বড় শট থাকায় সাত বা আট নম্বরে ব্যাট হাতেও যথেষ্ট কার্য্যকরী হবেন হাসারাঙ্গা। এছাড়া দলে পাঁচ জন স্পিনারের অন্তর্ভুক্তিতে বোঝা যায় আমিরশাহীর কন্ডিশনে স্পিনের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে লঙ্কানরা।
নবাগত মিস্ট্রি স্পিনার মাহিশ ঠিকসানা, যাকে শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘নতুন মেন্ডিস’ বলা হচ্ছে চোখ থাকবে তাঁর দিকেও। ব্যাটিংয়ে কুশল পেরেরা, চান্দিমালদের ওপরেই ভীষণ ভাবে নির্ভর করবে শ্রীলঙ্কা। তবে ব্যাট হাতে ওয়ান ডে ক্রিকেটের ফর্ম যদি ধরে রাখতে পারেন অভিস্কা ফার্নান্দো বা অলরাউন্ডার চামিকা করুনারত্নে, তাহলে ভালো কিছুর আশা করতেই পারে শ্রীলঙ্কা।
- দুর্বলতা
বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে অনভিজ্ঞতা শ্রীলঙ্কা দলের সাফল্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। শ্রীলঙ্কার গ্ৰুপে আয়ারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডস এর ক্রিকেটাররাও তুলনায় অনেক বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। আয়ারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যথেষ্টই ভালো দল, কেউই কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে ছেড়ে কথা বলবে না।
লঙ্কান ব্যাটিংয়ে রাজাপাকশে, আসলাঙ্কা, কামিন্দু মেন্ডিসদের অভিজ্ঞতার অভাব কিন্তু চাপের মুখে ডোবাতেই পারে। কুশল পেরেরা, চান্দিমালরা বড় রান না পেলে কপালে দুর্ভোগ আছে লঙ্কানদের। আর দাসুন শানাকাকে অধিনায়ক হিসেবে পাঠানো হয়েছে, বড় শট মারায় দক্ষ হলেও অলরাউন্ডার শানাকা কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট বা বল হাতে কোনোভাবেই নিজের প্রতিভার সুবিচার এখনও করে উঠতে পারেননি। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে ভালো কিছু করতে গেলে শানাকাকেও অবশ্যই জ্বলে উঠতে হবে।
- শ্রীলঙ্কা দল ও তাদের সম্ভাবনা
এবারের বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস বা লাসিথ মালিঙ্গার মত দুই তারকা না থাকায় তরুণদের ওপরেই অনেকটা নির্ভর করবে শ্রীলঙ্কা, তবে সিনিয়র হিসেবে কুশল পেরেরা, চান্দিমাল, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা বা দাসুন শানাকাদের এগিয়ে আসতে হবে, নাহলে বড় কিছুর আশা শ্রীলঙ্কার থেকে না করাই ভালো। আর তরুণ দের সামনেও দারুন সুযোগ এমন মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার।
চোখ থাকবে অলরাউন্ডার চামিকা করুণারত্নের দিকে, ফিনিশার হিসেবে খুব ভালো অপশন হতে পারেন চামিকা, বিগ হিটার হওয়ায় স্লগ ওভারে শ্রীলঙ্কা চামিকাকে কিভাবে ব্যবহার করে সেটাই দেখার, এছাড়া বল হাতেও মন্দ নন তিনি। আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত হলেও ডান হাতি অফ ব্রেক ও প্রয়োজনে বাঁহাতি স্পিনও করা কামিন্দু মেন্ডিস কিন্তু আমিরশাহীর উইকেটে নজর কাড়তে পারেন, আর এই মুহূর্তে ডিপেন্ডেবল হাসারাঙ্গা তো থাকলেনই।
তবে প্রত্যেকেই নিজেদের কে ছাপিয়ে দুর্ধর্ষ পারফরমেন্স না করতে পারলে সুপার ১২ এর বেশি এগোনো খুব খুব কঠিন শ্রীলঙ্কার পক্ষে, কারণ সুপার ১২-তে ‘গ্ৰুপ অফ ডেথে’ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাদের সাথে লড়াই। সেখানে আবারও ঝাঁজহীন লঙ্কার দেখাই হয়তো পাওয়া যাবে, যদি না কোনো মিরাকল হয়।
- শ্রীলঙ্কা স্কোয়াড
দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), কুশল পেরেরা, চারিথ আসালাঙ্কা , ভানুকা রাজাপাকশে, কামিন্দু মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, মাহিশ ঠিকসানা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুশমন্থ চামিরা, আভিস্কা ফার্নান্দো, দীনেশ চান্দিমাল, প্রাভিন জয়াবিক্রমা, লাহিরু মাদুশানকা, চামিকা করুণারত্নে, নুয়ান প্রদীপ।