বাছাইপর্বের যে স্টেটমেন্টটা বাংলাদেশের রেখে আসা উচিৎ ছিল আমরা সেটা পারিনি। দলে নানারকম সমস্যাও আছে। মাঠের বাইরের আলোচনাগুলোকে আপাতত সড়িয়ে রাখছি। ওপেনিং পজিশনের সমস্যা আমাদের জন্মলগ্ন থেকেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আমরা একজন রিস্ট স্পিনার তৈরি করতে পারিনি।
তবে এই সবকিছুর পরেও আমি আশা দেখছি। এত সমস্যার মাঝেও বলছি একটু টেকনিক্যালি চিন্তা করলে ও মাঠে স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে পারলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালও খেলতে পারে।সবার আগে আমাদের দলে কিছু টেকনিক্যাল পরিবর্তন দরকার। ওপেনিং পজিশনে আপাতত নাঈম-লিটনকে সময় দেয়া ছাড়া আমাদের হাতে তেমন অপশন নেই।
যদিও বড় দলের বিপক্ষে নাঈমের মন্থর ইনিংস এবং অফে চরম দুর্বলতা বাংলাদেশকে ভোগাবে বলে মনে করি। এই দুইজন একেবারে ক্লিক না করলে মাহেদীকে দিয়ে ওপেন করিয়ে সাতে শামীমকে খেলানো যেতে পারে। শামীমের স্পিনও খারাপ না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ফিল্ডিংটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তবে মাহেদীকে দিয়ে আবার লং টার্মে ওপেন করানোর পরিকল্পনা করা যাবেনা।
ওদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিককে আমি কোনভাবেই একাদশে রাখার পক্ষপাতি না। তবে রিয়াদ অধিনায়ক থাকা অবস্থায় মুশি বাদ পড়বে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে তাকে আমি ৫ এ খেলাতে চাই আফিফকে যেভাবেই হোক চারে নিয়ে আসতে হবে। এই ফরম্যাটে তিনিই দেশের সবচেয়ে কার্যকর ব্যাটসম্যান।
এছাড়া আমাদের বোলিং লাইন আপটা ভালো অবস্থায় আছে। সাকিব, মাহেদী, মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন দারুণ ছন্দে আছেন। তবে টি-টোয়েন্টিতে তাসকিনকে আরেকটু বৈচিত্র নিয়ে আসতে হবে। শুধু গতি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করা যাবেনা। ওদিক দিয়ে শরিফুল ভালো অপশন হতে পারে। গতির সাথে ইয়োর্কার ও বাউন্সারের দারুণ সমন্বয় আছে। সবচেয়ে বড় কথা তার উইকেট নেয়ার ক্ষমতা। একটু খরুচে হলেও নিয়মিত উইকেট এনে দিবেন। তার বোলিং স্ট্রাইকরেট খুব সম্ভবত ১৪ এর কাছাকাছি।
আবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গ্রুপ ওয়ানে পড়াটা বাংলাদেশের জন্য সাপে বরই হয়েছে। অন্য গ্রুপে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান থাকায় আমাদের আসলে ভালো ক্রিকেট খেললেও সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। এছাড়া আফগানিস্তানের সাথেও হোচট খাওয়ার একটা ভয় ছিল। সবচেয়ে বড় কথা ওই গ্রুপে আমরা উপমহাদেশের কন্ডিশনের কোন ব্যবহার করতে পারতাম না।
তবে গ্রুপ ওয়ানে সেই সুযোগ আছে। অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে কিছুদিন আগেই আমরা মোটামুটি থ্রাশ আউট করেছি। জানি বিশ্বকাপ দলে আরো বড় তারকা যোগ হয়েছেন। তবে সাইকোলজি এখানে বড় ফ্যাক্টর। মাঠে নামার আগে আমরা সেই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে নামতে পারবো। এছাড়াও বাংলাদেশের স্পিনারদের সামর্থ্য আছে এই অস্ট্রেলিয়াকেও বিপদে ফেলা।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম গুলো বড় হলেও কার্যত এবারের বিশ্বকাপে তাদের বড় দল মনে করছি না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মোটামুটি বুড়িয়ে যাওয়া একটি দল গঠন করেছে। এবং শারজাহতে স্পিনিং উইকেটের সহায়তা নিয়ে ম্যাচ জেতা খুব কঠিন হবেনা। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও উপমহাদেশের কন্ডিশন বড় ফ্যাক্টর হবে। আবু ধাবিতে মুস্তাফিজের বোলিংও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভোগাবে। ফলে বাংলাদেশের ভালো সুযোগ আছে। তবে কাজটা অবশ্যই সহজ না।
আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো কন্ডিশনেই বাংলাদেশকে আমি ফেভারিট মনে করি। স্মার্ট পরিকল্পনা থাকলে আর মাঠে বড় কোন ভুল না করলেই এই ম্যাচ বাংলাদেশের জেতার কথা। তবে বাংলাদেশ যেহেতু মোমেন্টাম নির্ভর দল ফলে মূল পর্বের প্রথম ম্যাচ হিসেবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া শ্রীলঙ্কা সাম্প্রতিক ফর্মও কনসার্ন।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে বোলারদের পুরো দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। তবে আদিল রাশিদ থাকলে ইংল্যান্ডের স্পিনিং ডিপার্টমেন্টে ভালো দুর্বলতা আছে। আর আবু ধাবিতে খেলা হওয়ায় এই ম্যাচেও বাংলাদেশের বড় ভরসা মুস্তাফিজ। সাইফউদ্দিনও এই ধরনের উইকেটে মন্দ না।
মোদ্দাকথা এই গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা সবার সাথেই বাংলাদেশের আরব আমিরাতের কন্ডিশনে ভালো সুযোগ আছে। কারো বিপক্ষে বাংলাদেশকে আপনি ঠিক ফেলে দিতে পারবেন না। ফলে মাঠে ও মাঠের বাইরে রিয়াদ টুকটাক সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারলেই বাংলাদেশের বড় কিছু করে ফেলা সম্ভব। নাহলে আবার কোন জয় ছাড়া বাড়ি ফেরাও সম্ভব।