বোরিয়া মজুমদার গোপাল বসুকে নিয়ে ‘তারাদের শেষ তর্পণ’ ওয়েব সিরিজে বলেছেন যে, ‘বাঙালি লড়াই ও বঞ্চনার গল্প উদযাপন করে সুখ পায়।’ অনেকাংশে সত্যি এই কথাটা নতজানু হয়ে যায় একজন বাঙালি ক্রিকেটারের মাথা উঁচু করে করা লড়াইয়ের সামনে এসে দাঁড়ালে।
আরো পড়ুন
- বাঙালি বাজপাখির ব্যাট
- ঋদ্ধি তো বক্স অফিস নন!
- হিলি-গিলি ও ঋদ্ধি-ঋষভ
- ঋদ্ধি মানেই সিদ্ধি
- আইপিএল মাতানো উইকেটরক্ষক
পঙ্কজ রায়ের লড়াই ও জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠা এখনো সত্তরোর্ধদের আড্ডা সরগরম করে রাখে। সম্বরণ ব্যানার্জির লড়াই ও যোগ্যতা ভারতীয় নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। উৎপল চ্যাটার্জির উপর হওয়া অবিচার এখনো প্রায় তুলনাহীন। প্রায় ক্যারিয়ারের শেষ দিকে সম্পূর্ণ অসময়ে চরণামৃতর মত তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ তাঁর দিকে ছুঁড়ে দেয়া হয়েছিল। ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুুলির সহ্য করা বঞ্চনা, লড়াই ও কামব্যাক এখনো বাঙালির গর্ব করার মত যৎসামান্য কিছুর বৃহৎ অংশ।
অথচ আজকের আলোচ্য বাঙালি ক্রিকেটারের প্রতি অবিচার সীমাহীন হয়েও নিরুচ্চার বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। আঘাতপ্রবণতা সত্ত্বেও তার নিরলস, নিষ্ঠাবান লড়াই তাকে বারবার ফিরিয়ে এনেছে টেস্ট টিমে, আবার বাদ যাওয়ার জন্য।তারপর আবার লড়াই, আবার টিমে ফেরা। আবার বাদ যাওয়া।
তিনি যেন এ যুগের মহিন্দর অমরনাথ, এই নিরিখে। তবু বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেই কেন আলোচনাতেও ব্রাত্য তিনি? কে তিনি? কে আবার – ঋদ্ধিমান সাহা।
এর কারণ হয়ত তার অতি সাধারণ একান্তই নিজস্ব পরিবারতান্ত্রিক জীবনযাপনে হাইপ্রোফাইল না হয়ে থাকা, সোশ্যাল মিডিয়াতে কম সক্রিয় থাকা, পার্টিতে বেশি না যাওয়া। সেলিব্রিটিসুলভ এই সব গুণ না থাকাটাই হয়ত তার বঞ্চনার কারণ আবার ঐ কারণগুলিই তার বঞ্চনাতে আলো না ফেলে তাকে অন্ধকারেই রেখে দেয়।
তাঁর সমতুল্য উইকেটরক্ষক এই মুহূর্তেও (হ্যাঁ, এই মুহূর্তেও) ভারতে নেই, ব্যাটিংয়েও তিনি অনেক তারকাদর্শন উইকেটরক্ষকের চেয়ে ভাল, তবু ম্যানেজমেন্টের নেকনজরে না থাকা তাকে আজও নিয়মিত হতে দেয়নি ভারতীয় টেস্ট দলে। ২০১৯ সালে পুণেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে উমেশ যাদবের বলে তার নেওয়া থিউনিস ডি ব্রাউনের ক্যাচটিকে ‘সুপারম্যান সাহা’স ক্যাচ’ নামে অভিষিক্ত করে বিশ্ব ক্রিকেট।
২০১০ থেকে ২০২১, ১১ বছরে ৪০ টি টেস্টে ২৯.৪১ গড়ে তিনটি শতকসহ ১৩৫৩ রানেই (সর্বোচ্চ ১১৭) লেখা আছে তাঁর বঞ্চনার ইতিহাস। ওই ৪০ টি টেস্টে ৯২ টি ক্যাচ আর ১১ টি স্টাম্পিংয়ে ধরা আছে তার উইকেটকিপিং ঐশ্বর্যর আখ্যান।
আজও এটাই সত্যি যে দু’জন ভারতীয় ক্রিকেটার জীবনে কোনদিন কোন ঈশ্বরপিতা পাননি, কার্সন ঘাউড়ি আর এই ক্রিকেটারটি। চিরবঞ্চিত ঋদ্ধিমান সাহা শিলিগুড়ি থেকে এসে যিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন, কোন “দাদা”স্থানীয় ঈশ্বরপিতা ছাড়াই।