‘ভারত ফাইনালে চলে যেতে পারে; এমন কি জিততে পারে বিশ্বকাপ ও।’ – কথাটা বলেছেন ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠান। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের সূচনা খুব একটা সুখকর হয়নি। তাঁদেরকে হারতে হয়েছে নিজেরদের প্রথম ম্যাচ। সেই হারের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত দল নিয়ে করা প্রশ্নের প্রতি উত্তরে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ইউসুফ পাঠান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বের গ্রুপ-২ এ রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন দল ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দি পাকিস্তানও একই গ্রুপে থাকায়, দুই দলের মুখোমুখি হওয়া ছিল অবিসম্ভাবী। প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তান রোমাঞ্চকর ম্যাচের দেখা মেলে মূল পর্ব শুরু হবার দ্বিতীয় দিনেই। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয় এই দুই দল।
ভারতের পক্ষে ফলাফল আসার প্রত্যাশা হয়ত করেছিলেন ভারতের সাবেক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বিশ্বের অধিকাংশ ক্রিকেট বিশারদরা। কেননা পরিসংখ্যান তো ছিল ভারতের পক্ষেই। এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচের আগে দুই দল বিশ্বকাপ আসরে মুখোমুখি হয়েছিল মোট ১২ বার। সাতটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ম্যাচ ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচ। কিন্তু কোন বারই পাকিস্তান হারাতে পারেনি ভারতকে।
তবে এই পরিসংখ্যান এবং ইতিহাসের পাতায় নতুন ডাটা সংযোজন করেছে পাকিস্তান। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁরা ভারতেকে হারিয়ে দেয় প্রথম বারের মতো। শুধু যে হারিয়ে দিয়েছে তা নয় রীতিমত ভারতীয় বোলারদের নাজেহাল করে জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস করেছেন পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই দুই ব্যাটার যথাক্রমে ৫২ বলে ৬৮ ও ৫৫ বলে ৭৯ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দেন ইতিহাস গড়া জয়।
এই জয়ে যেমন ভারতকে হারানোর ইতিহাস রচিত হয়েছে ঠিক তেমনি আরো বেশকিছু ইতিহাসের অংশ হয়ে রইবে সে ম্যাচ। টি-টোয়েন্টি-তে দশ উইকেট ব্যবধানে কখনো হারেনি ভারত এবং ঠিক একই মার্জিনে জয় পায়নি পাকিস্তান। এই দুই রেকর্ডের নিয়ামকও সেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।
এমন হারে প্রশ্ন উঠেছে ভারতের শক্তিমত্তা ও সামর্থ্য নিয়ে। সমর্থক থেকে সমালোচক সবার মনে প্রশ্নের উৎপত্তি প্রথম রাউন্ড পেরোতে পারবে কি ভারত? কিন্তু সবার মনে যখন এমন প্রশ্নের উত্থান ঠিক তখনি ভিন্ন সুর শোনালেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। তিনি জানালেন দলের প্রতি তাঁর আস্থার কথা।
ভারতের ক্রিকেট অঙ্গনে ছড়িয়েছে শঙ্কা। নিউজিল্যান্ড কি তবে হবে ভারতের বাঁধা? তেমনটা মনে করেন না ইউসুফ পাঠান। ভারত ফিরে আসবে মত ইউসুফের এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের জন্যে টুর্নামেন্টে ফিরে আসা খুব বেশি কঠিন কিছু হবে না। এই দলটি খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দল এবং এদের প্রত্যেকের যথেষ্ট পরিমাণ অভিজ্ঞতা রয়ছে এর পাশাপাশি তাঁরা ভাল ক্রিকেট খেলা উপহার দিয়ে আসছে বছর জুড়েই। দলে থাকা প্রত্যেকে খুবই পরিশ্রমী। আর বিরাট এবং তাঁর দল জানে কি করে চাপ সামলে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হয়। তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোটা এখন সময়ের অপেক্ষা।’
ভারত সেমিফাইনালে যেতে পারবে কি না এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছি এবং এই একটি মাত্র হার এটা প্রমাণ করে না যে আমরা এখনই টুর্নামেন্ট থেকে বাদ। আমাদের এখনও বহুদূর যেতে হবে। এমনও হতে পারে এই পরিস্থিতি থেকে ভারত ফাইনালে চলে যেতে পারে এমন কি জিতে নিতে পারে শিরোপা। একটি পরাজয়ের ভিত্তিতে ভারতের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করা অবান্তর।’
তবে এই মুহূর্তে আরো একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভারতের ক্রিকেট অঙ্গনে। কিউইদের বিপক্ষে ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই ম্যাচে অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডেয়া বোলিং করবে কি না তা নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা। অনেকে মনে করেন যদি সে বল না করতে পারে তাহলে তাঁর উচিৎ দলে অন্য কারো জন্যে জায়গা ছেড়ে দেওয়া।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া আইপিএলের পরিসংখ্যান বিবেচনায় হার্দিক পান্ডিয়াকে একজন প্রকৃত ব্যাটার হিসেবে সেরা একাদশে খেলানো আযৌক্তিক। তাঁর ১২ ম্যাচে ১২৭ রান অন্তত তাঁকে একজন জেনুইন ব্যাটার স্বীকৃতি দেয় না। তাছড়া প্রথম ম্যাচেও হার্দিক আশানুরুপ পারফর্ম করতে পারেননি। সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে আট বলে তাঁর সংগ্রহ এগারো রান।
ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠানও একই মতামত দিয়েছেন। তিনি মনে করেন একজন অলরাউন্ডার ব্যাটিং কিংবা বোলিং দু’টোর যেকোন একটিতে নিজের অবদান না রাখতে পারলে তাঁর একাদশে থাকা উচিৎ নয়। তিনি আরো বলেন, ‘একজন অলরাউন্ডার দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন হয় বল হাতে কিংবা ব্যাটে। যদি একজন অলরাউন্ডার বোলিং করতে অস্বীকৃতি জানায় তবে তাঁকে একাদশে রাখা নিছক বোকামি।’
পাঠান হার্দিকের পরিবর্তে দলে অন্য কোন খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়ার পরামর্শের পাশাপাশি আরো জানান দলে হার্দিকের জায়গা পূরণ করার মতো খেলোয়াড় রয়েছেন। যদি একজন অলরাউন্ডার এর পরিবর্তে একজন অলরাউন্ডার নিতে চায় দল তাহলে শার্দুল ঠাকুর হতে পারে প্রথম পছন্দ। আর যদি একজন জেনুইন ব্যাটার প্রয়োজন হয় তবে হার্দিকের থেকে ভাল অপশন ঈশান কিষাণ ও শ্রেয়াস আইয়ার তাদেরকে সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন ইউসুফ পাঠান।
ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোথায় গিয়ে থামবে তা এখন সময়ের হাতে।