বিশ্বকাপে যে স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল, তার ধারের কাছেও পৌঁছাতে পারেনি। সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখে সুপার টুয়েলভের পাঁচটি ম্যাচের সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। সেই ব্যর্থতাটা অবশ্যই প্রথমত ক্রিকেটারদের। সেটা মানছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। তবে, তিনি দায় এড়িয়ে কাউকে বলির পাঠা বানানোর পক্ষে তিনি নন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাশরাফি লিখেছেন, ‘আরও একটি বিশ্বকাপ শেষ হলো। আট ম্যাচ খেলেছি, দু’টি জয়, ছয়টি হার। প্রথমেই বলে নেই, ক্রিকেটারদের দায় কোনোভাবেই এড়ানোর উপায় নেই। বিশেষ করে, যেভাবে আমরা হেরেছি। এত বাজে খেলার পর ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানো কঠিন। তবে, আমার অনুভূতি তো আমার মতো করেই। আমি বিশ্বাস করি, ওরা হয়তো খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ। ঠিক এই মুহূর্তে ক্রিকেটারদের উচিত ধৈর্য ধরা ও সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা। কোনো সমালোচনার জবাব দেওয়া উচিত নয়। আশা করি, তারা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে এবং সঠিক কাজটি করবে।’
শুধু দলে কিছু পরিবর্তন আনাতেই সমাধান দেখছেন না মাশরাফি। তাঁর ভাষায়, ১তবে কিছু ব্যাপার মেলানো প্রয়োজন। সেটা হলো, খারাপ হওয়ার প্রথম দায় অবশ্যই ক্রিকেটারদের। এরপর আর কি কারও দায় নেই? শুধু ক্রিকেটারদের ঘাড়ে চাপিয়ে যদি শেষ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। প্রমাণ তো আগেও অহরহ দেখা গেছে! আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও বলে দেওয়া যায়, এখন সামনে কী হবে। হয়তো কাউকে বাদ দেওয়া হবে, কারও ওপর অদৃশ্য রাগ ঝাড়া হবে, রিয়াদকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হবে। সমর্থকরা যে ক্রিকেটারকে পছন্দ করছে না, তার ওপর ঝাল মিটিয়ে সমর্থকদের শান্ত করা হবে। সাংবাদিক ভাইদের নানা কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।’
মাশরাফির অভিযোগের তীর বোর্ডের তিনি। তিনি লিখেছেন, ‘আগেও দেখেছি যে, এসব করে একেকটা পক্ষ দাঁড় করানো হয় এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, সামনের বিশ্বকাপে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরাও ভাই আবেগি মানুষ, এসব দখে সব ভুলে আশা নিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকব। এরপর বিশ্বকাপ আসবে, দেখা যাবে একই ফলের পুনরাবৃত্তি! তাই, ক্রিকেটারদের দায় দিন, ভালো কথা। সেটা তাদের প্রাপ্য। পাশাপাশি, নিজেরাও বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনারাও ব্যর্থ! কারণ, এই পুরো প্রক্রিয়ার অংশ আপনারাও।’
দোষারোপ নয়, বরং যোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করার আহ্বান জানালেন দেশের ইতিহাসের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা অন্যান্যবারের মতা বলতেই পারেন, ‘অমুকের জন্য পারিনি, তমুক ব্যর্থ হয়েছে, এজন্যই পারলাম না।’ সেক্ষেত্রে তো দায়টা আপনাদেরও, কারণ উপযুক্ত বিকল্প আপনারা তৈরি করতে পারেননি। সেই দায়িত্ব তো আপনাদের কাঁধেই ছিলঅ আপনাদের তো আগেই বোঝা উচিত ছিল! আপনারা সেটা পারেননি। তাই দয়া করে, সত্যকে আলিঙ্গন করুন এবং নতুনভাবে কাজ শুরু করুন। সামনে আরেকটি বিশ্বকাপের দোহাই দিয়ে, ক্রিকেটারদের ক্ষতি না করে প্রক্রিয়াটা ঠিক করুন। দেখবেন, তখন দল আপনাআপনি ভালো খেলবে। দলকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরই। তাই দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে দায়িত্ব নিয়েই কথা বলা বা কাজ আমরা আশা করি।
কাউকে বলির পাঠা বানানোকে সমাধান মানেন না মাশরাফি। তাঁর অভিমত, ‘সবচেয়ে বড় শঙ্কা আমি যা দেখছি, ক্রিকেটারদের বলির পাঠা বানিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া হবে যে, ‘আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা সামনের বিশ্বকাপে বড় ভূমিকা রাখবে।’ আসলে এতে ক্রিকেটের কোনো লাভ হবে না। ক্রিকেটার তৈরি ও গড়ে তুলতে আধুনিক ক্রিকেটে প্রক্রিয়াগুলো দেখুন এবং সেগুলো দেশের ক্রিকেটে অ্যাপ্লাই করুন। তাদেরকে যত্ন করুন, হয়তো তারা সামনের পথচলায় আমাদের দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দেবে।’
সময় লাগুক, মাশরাফি চান প্রক্রিয়াটা শুরু হোক এখন থেকেই। তিনি লিখেছেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে। কারণ একজন প্রপার খেলোয়াড় তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। সবাই না বুঝলেও, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট লোকদের এসব বোঝা উচিত। তাই সময় লাগুক, কিন্তু প্রক্রিয়া নতুন করে সাজান। ত্বরিত সিদ্ধান্ত খুব বেশি কাজে দেবে না। দয়া করে এই কথা বলবেন না যে, ‘২০২২ বা ২০২৩ বিশ্বকাপে এদের দিয়ে হবে না, তাই সব নতুন সুযোগ দিতে হবে।’ নতুনদের সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে, তবে তাদের তৈরি করে। আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি, কারণ আমাদের শরীরের প্রকিটি রক্ত কনিকায় শুধু ক্রিকেটই বসবাস করে।’