বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক হিসেবে তার নামটি স্বর্নাক্ষরে লেখা রয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২৫ রানের জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। বল হচ্ছিল এনামুল হক জুনিয়রের কথা। বাহাতি স্পিন বিষে আফ্রিকার দেশটিকে কাবু করে সাদা পোষাকে প্রথম বিজয় কেতন উড়িয়েছিলেন সিলেটের এই কৃতি সন্তান।
এরপর কয়েক বছর নিয়মিত খেললেও দীর্ঘসময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন তিনি। কম বয়সে টেষ্ট খেলোয়াড়ের ট্যাগ লেগে যাওয়ার লাল বলের জন্য এনামুলকে বিবেচনায় আনা হয়নি। কিন্তু তার প্রতিভাকে যে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সেটি তিনি নিয়মিতভাবেই প্রমাণ করে চলেছেন। এবার দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অনন্য এক কীর্তি গড়লেন। দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট শিকারীর মাইলফলক পেরোলেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে এনামুলের এই অর্জনের খবরটি খুব একটা ফলাও করে ছাপা হয়নি সংবাদপত্রগুলোতে। তবে আব্দুর রাজ্জাকের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৫০০ ইউকেট শিকার করা অনেক বড় অর্জন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
কিন্তু ইতিহাসে নিজেকে জায়গা করে দিয়েও যেন মানসিকভাবে ভাল নেই এনামুল হক জুনিয়র। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) তৃতীয় রাউন্ড শুরুর আগে এই কীর্তি থেকে মাত্র ৪ উইকেট দূরে ছিলেন তিনি। সিলেটের আউটার স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনে জাহিদ জাভেদের উইকেটটি নিয়েই ৫০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।
২০১৩ সালের পর আর জাতীয় দলে না সুযোগ পাওয়ার আক্ষেপটা কিছুটা হলেও কেটেছে এবার, ’ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট প্রাপ্তি অনেক বড় ব্যপার। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটের প্রতি আমার যে ভালবাসা সেটার ফল পেলাম। মনের জোরেই ক্রিকেটটা চালিয়ে গেছি। এভাবে যতদিন পারি খেলাটা চালিয়ে যেতে চাই’। জাতীয় দলের বাইরে থেকে নিজেকে ফিট রাখা বেশ কঠিন কাজ।
এগুলো পূর্বসূরি খেলোয়াড়রা যেভাবে করেছেন, তাদের দেখে দেখে নিজেকে তৈরি রেখেছেন। সিলেট বিভাগীয় দলের রাজিন সালেহ, অলক কাপালিদের অনুসরণ করে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। এর বাইরে দীর্ঘদিন খেলা আব্দুর রাজ্জাক তো ছিলেনই।
যারা দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে থেকেছেন তাদের কাছে খুলনার এই বাহাতি স্পিনার রীতিমতো আদর্শে পরিণত হয়েছেন। এখন তো নির্বাচক হিসেবে জাতীয় দলের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন। খেলোয়াড় নির্বাচন না করলে হয়তো এখনো খেলে যেতেন রাজ্জাক। নিয়মিত উৃইকেট প্রাপ্তিই তাকে মাঠের ক্রিকেটটা চালিয়ে যেতে পেছন থেকে সহায়তা করেছে।
বর্তমানে পাওয়া পারিশ্রমিকে ঠিকমতো সংসারই চালানো যায়না বলে আক্ষেপ করে এনামুল বলেন, ’লাল বলের প্রতি আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আলাদা একটা টান ছিল। টেস্ট ক্রিকেট খেলবো এই স্বপ্ন খেলা যখন শুরু করি তখন থেকেই দেখেছি। টেস্ট ক্রিকেট খেলার এবার পর যখন বাদ পড়লাম, তখনও লাল বলের প্রতি আমার ঝোঁকও ছিল। নিজে নিজেই খেলবো পাশাপাশি সিলেট বিভাগকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যাবো। এখন যে পারিশ্রমিক পাচ্ছি তা দিয়ে আমার সংসার চলে না। কিন্তু ওই যে খেলাটা আমার আবেগের জায়গা, আমি মনের আনন্দেই এখন পর্যন্ত খেলে যাচ্ছি।’
এখনো জাতীয় দলে ফেরার আশা ছাড়েননি এনামুল হক জুনিয়র। একটা ভাল মৌসুম কাটালে তার ডাক পড়লে পড়তেও পারে, সেই আশাটা ছাড়লে যে ক্রিকেটটাই খেলা কঠিন হয়ে পড়বে তার জন্য। ইমরান আহমেদ নামের ময়মনসিংহ জেলার একজন খেলোয়াড় ছিলেন। বরিশাল বিভাগের হয়ে খেলতেন, এই ব্যাটসম্যানই এনামুলের প্রথম শিকার ছিলেন। তার পরের গল্পটা তো শুধুই এগিয়ে যাবার।
উইকেট শিকারের দিক থেকে এর আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে এই এলিট ক্লাবে প্রথম নাম লিখিয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। বর্তমানে নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার ৫০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছে ছিলেন মাত্র ১১৩ ম্যাচে। ৬৩৪ উইকেট নিয়ে তিনি এরই মধ্যে অবসরেও চলে গেছেন। এনামুল ৫০০ উইকেটের মালিক হন ১৩৬ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে।
৩৪ বছর বয়সী এই স্পিনার তার লম্বা ক্যারিয়ারে ৩৪ বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন তিনি ৬ বার। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৪৭ রানে ৭ উইকেট। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচ শুরুর আগে ৫০০ উইকেট থেকে মাত্র ৪ উইকেট দূরে ছিলেন এনামুল। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে মাইলফলকটির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন এই বাহাতি স্পিনার।
রংপুর বিভাগের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কাঙ্খিত সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যান এনামুল। তার স্পিনের জালে পরাস্ত হয়ে রংপুরের ওপেনার জাহিদ জাভেদ উইকেটকিপার জাকির হাসানের কাছে ক্যাচ দিলে উল্লাসে ফেটে পড়েন এই স্পিনার। তবে দুঃখের বিষয় হলো, তার এমন অর্জনের ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি তার দল সিলেট। ৪ উইকেট হারিয়ে দলের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪০ রান তুলে নেয় রংপুর।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি
- ৬৩৪ (১৩৭ ম্যাচ) – আব্দুর রাজ্জাক রাজ
- ৫০১ (১১৩ ম্যাচ) – এনামুল হক জুনিয়র
- ৩৯৩ (১৩২ ম্যাচ) – মোহাম্মদ শরীফ
- ৩৯২ (১১২ ম্যাচ) – মোশাররফ হোসেন রুবেল
- ৩৬৯ (৯৪ ম্যাচ) – সাকলায়েন সজীব