প্রদীপের জ্বালানি বিরাট

প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দল ভারত। সপ্তম আসরে এসে বাদ হয়ে যেতে হলো প্রথম পর্ব থেকেই। সেই সাথে সমাপ্তি ঘটলো রবি শাস্ত্রীর কোচিং ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বের। ভারত জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের পদটা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেবার ঘোষণা বিশ্বকাপের আগেই দিয়েছিলেন কোহলি।

নামিবিয়ার বিপক্ষে টুর্নামেন্টের নিয়ম রক্ষার ম্যাচ দিয়ে ভারতের বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর দলে বিরাটের থাকা না থাকা নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন। বিশ্বকাপ পরবর্তী নিউজিল্যান্ডে সিরিজকে সামনে রেখে ঘোষিত টি-টোয়েন্টি দলে বিরাটের অনুপস্থিতি জনমনে তৈরি করে দারুণ শঙ্কা।

তবে বিশ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সাবেক পেসার আশিস নেহেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে বিরাট ব্যতীত ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ করার সময় এখনো আসেনি।

বিরাট যে ফর্মহীনতায় ভুগছেন বিষয়টা এমন নয়৷ বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ব্যাটিং এর হাল ধরেছিলেন বিরাট কোহলি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং অর্ডার আগলে রেখে করা বিরাটের অর্ধশতক যেন ম্লান হয়ে যায় প্রতিপক্ষ ব্যাটার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটিং তাণ্ডবে। সব দিন যায়না সমান৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ধ্বস নামা ব্যাটিং অর্ডার আগলে রাখতে ব্যর্থ হন বিরাট। তবে শুধু এতটুকুই তাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলাকে সমর্থন করে না।

বিরাট একজন ধারাবাহিক ব্যাটার এ কথা মনে করিয়ে সাবেক ভারতীয় পেসার আশিষ নেহরা বলেন, ‘যেহেতু আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়াতে সেহেতু তাঁর উচিৎ এই ফরম্যাটটায় খেলে যাওয়া৷ অস্ট্রেলিয়ার মাঠগুলো তূলনামূলক বড় এবং আশা করা যায় আরব আমিরাত থেকে ভাল পিচের দেখা মিলবে সেখানে।’

নেহেরা মনে করে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিরাট হতে পারেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাটার। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিরাটের ব্যাটিং স্মরণ করিয়ে নেহেরা আরো বলেন, ‘এমনকি এই টুর্নামেন্ট পাকস্তানের বিপক্ষেও বিরাট দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আপনি যদি তাঁকে দলের বাইরে রেখে পুরোপুরি আক্রমনাত্মক ব্যাটার যেমন সুরিয়াকুমার যাদব, ঋষভ পান্ত এবং হার্দিক পান্ডিয়াকে দলের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাটার বিবেচনা করে দল গঠন করেন তাহলে এটা সবসময় কাজ করবে না। বিরাটের মতো ব্যাটিং এ স্থিতিশীলতা আনতে পারার মতো কেউ নেই।’

বিরাট সাধারণত তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করে থাকেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। দ্রুত উইকেট পতনের দলের ব্যাটিং-এ স্থিতিশীলতা এনে তিনি ম্যাচের মেজাজ অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারদর্শী। তাঁর টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইকরেট যথাক্রমে ৫২ এবং প্রায় ১৩৭। তিনি যেমন হাল ধরতে জানেন ঠিক তেমনি জানেন কি করে ব্যাট চালাতে হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

তাছাড়া ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে যাওয়া বিরাটের অভিজ্ঞতাও যে দলের জন্য খুব প্রয়োজন তাও মনে করিয়ে দেন আশিস নেহেরা। তিনি বলেন, ‘দলের প্রথম দুইজন ব্যাটার রোহিত এবং রাহুল এবং তারপর বিরাট। একটা দলে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মেলবন্ধন খুবই জরুরী।’

আশিস নেহেরা মনে করেন অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক ব্যাটার দিয়েও আসলে ভাল করা সম্ভব নয়। এমনকি ভারত যদি টি-টেন টুর্নামেন্টেও খেলে সে দলেও বিরাটের মত একজন দৃঢ়তা, অভিজ্ঞতা, স্কিল ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটারের খুবই প্রয়োজন। যদিও এখনই বিরাট ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের বিষয়ে কোন কিছুই বলেননি। তবুও নেহেরা তাঁর অভিমত জানিয়েছেন দর্শক সমর্থক থেকে শুরু করে নির্বাচকদের আস্বস্ত করতেই। বিরাট ফুরিয়ে যায়নি। বিরাট কোহলির যাবার পথ যে এখনো বাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link