ভোর বেলা কি এক লড়াই হলো! মোট মিলিয়ে ৪২ খানা ফাউলের ম্যাচে নিশ্চিত হয়েছে বিশ্বকাপে যাবার টিকিট। দা-কুমড়া, সাপে-নেউলে এমন সব শব্দের ব্যবহার সচারচরই হয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। এতে যা বোঝায় তা হলো চিরশত্রুতা।
ফুটবল মাঠের এমন দা-কুমড়া কিংবা সাপে-নেউলে সম্পর্কে জর্জরিত লাতিন আমেরিকার দুই দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে এই ৪২ খানা ফাউলের কাণ্ড ঘটিয়েছে সেই দুই দলই।
ঘরের মাঠে চিরশত্রুকে আতিথিয়তা দেওয়া বড়ই পীড়াদায়ক। আরো পীড়া দেয় যদি প্রতিদ্বন্দী আগেভাগেই নিশ্চিত করে ফেলে বিশ্বকাপে নিজেদের অবস্থান। সেই পীড়া ও নিজেদের বাছাইপর্ব পেড়োবার সমীকরণের দিনে আর্জেন্টিনা যেন মেতেছিল পেশিশক্তি প্রদর্শনে। প্রতিপক্ষ ব্রাজিলও কিন্তু কম যায়নি। দুই-দলই ছিল সমানে সমান। থাক সেসব কথা।
বিশ্বকাপে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে চলেই এলেন বোধহয় ফুটবলের এই কিংবদন্তি। শেষ সময়ে হয়ত শেষবারের মতো চেষ্টা চালাবেন জিতে নিতে বিশ্বসেরা হবার গৌরব। ২০১৪ সালে খুব কাছে গিয়েও যেন ছোয়া হয়নি সেই সোনালী ট্রফিটা।
ট্রফির দিকে তাকিয়ে থেকে হয়ত সেদিন মেসির মনের গহীন কোণে বেজে উঠেছিল করুণ সুর ও আমায় ভালবাসেনি। তাঁর সুদীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে মেসি জিতেছেন সম্ভাব্য সবকিছুই। ছয়টি ব্যালন ডি’অর দিয়ে সুসজ্জিত করছেন নিজের অর্জনের ক্যাবিনেট।
তাঁর পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু ম্যাচ সেরা হবার সম্মাননার পাশাপাশি ২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলও। তাছাড়া লা-লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি তো রয়েছেই। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে কোপা আমেরিকার ট্রফিও। তবে ক্যাবিনেটের একটা বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে আক্ষেপ, বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপ।
সেই আক্ষেপের অবসান ঘটাতে হয়ত মেসি ছুটবেন ২০২২ বিশ্বকাপের কাতারের মরুপ্রান্তে। দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কেটে ফেলেছেন মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা।
উপমহাদেশের সময় অনুযায়ী ১৭ তারিখ ভোর বেলায় নিশ্চয়তা এলো শেষমেশ। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচের আগেই ব্রাজিল নিশ্চিত করে ফেলেছিল বিশ্বকাপের যাত্রা কলম্বিয়াকে হারিয়ে। কিন্তু আর্জেন্টিনাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে নিজেদের বাছাইপর্বের ১৩তম ম্যাচ অবধি।
ব্রাজিলের সাথে জিততে পারলে হয়ত অন্য কোন সমীকরণের সম্মুখীন হতে হতো না আর্জেন্টিনার কিন্তু ড্র করে ফেলায় আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের অপেক্ষা থাকতে হয় চিলি-ইকুয়েডর ম্যাচের দিকে।
চিলির বিপক্ষে ইকুয়েডরের ২-০ গোলের জয়ে আর্জেন্টিনার অপেক্ষমান বিশ্বকাপের টিকিট হয়ে যায় নিশ্চিত। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে যাচ্ছে। কিন্তু অপরদিকে দীর্ঘ এক যুগে মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের এখনও নিশ্চিত হয়নি বিশ্বকাপের টিকিট। সার্বিয়ার সাথে হেরে ইউরোপ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাচাইপর্বের গ্রুপ রানার্স-আপ হওয়ায় পর্তুগালকে খেলতে হবে প্লে-অফ।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপ যে হতে চলেছে মেসি-রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ এ বিষয়ে মোটামুটি বিনা দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়। ফুটবল সমর্থকরা হয়ত অপেক্ষায় রয়েছেন এই দুই ফুটবলের কিংবদন্তির বিশ্বমঞ্চে সম্মুখ লড়াইয়ের। সেজন্যে অন্তত রোনালদোর পর্তুগালকে বিশ্বকাপ সুনিশ্চিত করতে হবে।
ফুটবলের দর্শক সমর্থকদের এখন একটাই প্রত্যাশা প্লে-অফের বাঁধা পেড়িয়ে আসুক পর্তুগাল বিশ্বকাপের ময়দানে। হোক দেখা দুই কিংবদন্তির। দীর্ঘ এক যুগ পেড়োনো ফুটবল শাসকদের ইতি ঘটুক বিশ্বকাপের মতো ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে। ইতি ঘটুক এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতার মহাদ্বৈরথের।