অনন্য-ব্যতিক্রম সারাহ টেলর

সারাহ টেইলর, ইংল্যান্ড নারী দলের উইকেট রক্ষক ব্যাটার বনে গেছেন একটি ফ্রাঞ্চাইজি পুরুষ দলের কোচ। একটু অবিশ্বাসের মত ঠেকলেও ঘটনাটা বাস্তবিকেই ঘটেছে। ঘটনাটা অবিশ্বাস হবার কারণ ক্রিকেট ইতিহাসে পুরুষ দলের নারী কোচের নজিড় খুব একটা দেখা মেলে না। তবে ঘটনা যে এবারই প্রথম ঘটেছে বিষয়টা এমন না। তবে একটু ব্যতিক্রম তো বটেই।

সারাহ টেইলর বিরতি নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ঠিক যে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তা নয়। ২০১৯ এ খেলেছিলেন শেষ ক্রিকেট। মানসিক অবসাদ থেকে ক্রিকেট খেলা থেকে এমন বিরতি নিয়েছেন তিনি এমনটাই মত তাঁর। কিন্তু একজন ক্রিকেটার কি করে আর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারে। তা কি আর সম্ভব? তাই তিনি ফিরলেন ক্রিকেটের ময়দানে রীতিমত শোরগোল ফেলে।

আরব আমিরাতের অনুষ্ঠিতব্য আবুধাবি টি-টেন ফ্রাঞ্চাইজি লিগে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যাসিস্টন্ট কোচের। তিনি টিম আবুধাবির হয়ে এই দায়িত্ব পালন করতে চলেছেন সারাহ। ক্রিকেটে টি-টেন বিষয়টাই একটা নতুন ঘটনা। সেই টি-টেন ঘটিয়ে ফেললো যুগান্তকারী এক ঘটনা। খুলে দিলো সম্ভাবনার নতুন দাঁড়। সারাহ বিশ্বাস করতে চান তিনিই যেন না হন এমন সম্ভাবনার শেষ উদাহরণ।

তাছাড়া সারাহ তাঁর এই নতুন যাত্রা নিয়ে বেশ উৎফুল্ল এবং আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, ‘ আমি মনে করি এটা সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার নতুন পদক্ষেপ। নারীরাও এখন এমন চাকরি এবং দায়িত্ব পাবে এবং অচিরেই এটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হবে।’

তিনি তাঁর বক্তব্যের উপর জোড় দিয়ে বলেন, ‘মেয়েরাও এমন দায়িত্ব পেতে পারে এবং এমি মনে করি এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাকে একজন নারী কোচের পরিবর্তে একজন কোচ হিসেবেই বিবেচনা করা উচিৎ।’ সারাহ ছাড়াও এর আগে অস্ট্রেলিয়ান বিগ ব্যাশে নারী কোচ নিয়োগ দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান সাবেক নারী ক্রিকেটার জুলিয়া প্রাইস ব্রিসবেন হিটসের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নেওয়া নারী খেলোয়াড় হিসেবে কোচের দায়িত্ব পালন করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সারাহ টেইলর। তাঁর এই যাত্রা নিয়ে সারাহ বলেন, ‘ আমি বিস্মিত ছিলাম এমন এক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে। আমি আবুধাবির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার দিন গুনছিলাম। আমি একজন ভাল কোচ হিসেবে পরিচিতি পেতে চাই।’

টিম আবুধাবিতে সারাহ দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান কোচ পল ফারব্রেস ও সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুসেনারের সাথে। ইংলিশ কাউন্টি লিগের দল সাসেক্সের হয়ে এর আগেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সারাহ টেইলরের। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে সারাহ বলেন, ‘ সাসেক্সের হয়ে কাজ করা ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। সেটাই আমার কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম অভিজ্ঞতা। আমি অনেক কিছু শিখেছি সেই সময়ে। আমার বেশ ক’জন ভালো মেন্টর ছিলেন যারা আমাকে শিখিয়েছেন তাঁর পাশাপাশি আমার কৃতকর্মের দায়ভারও নিয়েছিলেন।’

সারাহ কিংবা জুলিয়া তারাও নারী ক্রিকেটারদের সামনে উন্মোচন করছেন সম্ভাবনার খোলা দুয়াড়। অনেক নারী ক্রিকেটার হয়ত ভাবেন এত এত পুরুষ ক্রিকেটারের ভীড়ে তাঁরা হয়ত কখনো পাবেন না বড় কোন দলের দায়িত্ব। কিন্তু সারাহ কিংবা জুলিয়া প্রমাণ করে দিচ্ছেন আপনার যোগ্যতাই আপনাকে নিয়ে যাবে অপার সম্ভাবনার দিকে।

সারাহ আরো বলেন, ‘আমি এবং জুলিয়া এরকম দায়িত্বে এসেছি এবং আমি মনে করি আরো নারী ক্রিকেটাররাও আসবেন কোচিং ক্যারিয়ারে। তাছাড়া কোচিং করানো আমার প্যাশন আমি এই পেশা দিয়েই ক্রিকেটের সাথে যুক্ত থাকতে চাই।’

সারাহ, জুলিয়া স্থাপন করে দিয়ে গিয়েছেন দৃষ্টান্ত। এখন নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থাকা নারী ক্রিকেটারদের। কাজী নজরুলের সাম্যের গান ছড়িয়ে পড়ুক ক্রিকেট অঙ্গনেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link