অস্ট্রেলিয়া নামক দেশটির ক্রিকেটের পরিস্থিতি মোটেও এখন স্বাভাবিক নয়। সেটা যতই দেশটি মাত্রই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে আসুক না কেন। ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজ সিরিজের আগে হুট করেই গণমাধ্যমের সামনে এসে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন অজি অধিনায়ক টিম পেইন।
দ্যা হেরাল্ড সানের রিপোর্ট অনুযায়ী তাসমানিয়া ক্রিকেট দলের সাবেক কর্মচারীকে ২০১৭-১৮ সালের অ্যাশেজ সিরিজের আগে নিজের পুরুষাঙ্গের ছবি এবং বেশ কিছু যৌন উস্কানিমূলক ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন পেইন। সেই নারীরর অভিযোগের ভিত্তিতেই পেইনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এবং তারপরেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন ৩৬ বছর বয়সী অজি উইকেটকিপার ব্যাটার।
পেইন অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ায় নতুন অধিনায়কের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন পেসার প্যাট কামিন্স। তবে অধিনায়কত্ব ছাড়া একাদশে জায়গা পাবেন কি পেইন? বেশ কিছুদিন ধরেই একাদশে থাকা নিয়ে বেশ সমালোচিত ছিলেন পেইন। ব্যাট হাতে আহামরি কিছু না করলেও স্রেফ অধিনায়কত্ব দিয়ে খেলে যাচ্ছিলেন গেল তিন বছর ধরে।
২০১৮ সালে স্যান্ডপেপার কাণ্ডে তখনকার অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর সাদা পোশাকে অস্ট্রেলিয়া দলের দায়িত্ব পান পেইন। দলে নিয়মিত মুখ না হলেও অভিজ্ঞতার বিচারে পেয়ে যান গুরুদায়িত্ব। অনেকের মতে স্রেফ অধিনায়ক হিসেবেই খেলছিলেন তিনি। দলে অনিয়মিত এক মুখকে গুরু দায়িত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড (সিএ) পেইনকে যেই সুযোগ করে দিয়েছে তাঁর বিনিময়ে পেইন ঠিক কতটা দিতে পেরেছেন!
একজন ভালো উইকেটরক্ষক কিংবা ভালো অধিনায়ক হয়তো বলতে পারেন। কিন্তু গেলো তিন বছরে ব্যাট হাতে পেইনের অবদান কতটুকু? অধিনায়কত্বের ভূমিকাটা বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে জায়গা করার মতো সেরা খেলোয়াড় কি তিনি? আজকাল কেবল অধিনায়কত্ব বা উইকেটরক্ষকের কোটায় খেলা যায় নাকি? মাইক ব্রিয়ারলির জমানা আদৌ আর আছে নাকি?
তবুও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের দু:সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়ে যেভাবে দলকে টেনে তুলেছেন তার জন্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পেইনকে কম সাপোর্টও দেননি। তুমুল সমালোচনার মাঝেও পেইনের পাশেই ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কিন্তু প্রতিদানস্বরূপ পেইনের কাছ থেকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কি পেয়েছে? পেইনের এমন কাণ্ডে বলতে হয় – পেইন কি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে ব্যর্থ, নাকি পেইনের যে ইমেজ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তৈরি করেছে সেটা তাদের ব্যর্থতা? আসলে কে এখানে কাকে হতাশ করল?
গণমাধ্যমে এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন পেইন। তবে ঠিক সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি! এসময় প্রেস কনফারেন্সেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পেইনের এমন ঘৃণিত ও লজ্জাজনক কাণ্ড অবশ্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য মানহানিকর। পেইনের ক্যারিয়ার, পরিসংখ্যান এবং পারফরম্যান্স সবকিছু বিবেচনায় নিলে প্রশ্ন উঠে – পেইন কি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে সেরাদের একজন? নিশ্চয়ই না। তাহলে তিনি একাদশে সুযোগ পাওয়াটাও নিশ্চয়ই ডিজার্ভ করেন না।
অবশ্য অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোটা যেনো ভালো হয়েছে ক্রিকেট ভক্তদের জন্য। অধিনায়কত্ব না থাকায় একাদশে পেইনের থাকাটা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। এমনকি অ্যাশেজের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটাও এখানেও থেমে যাবে পেইনের। তবে শূন্য থেকে শীর্ষে যাবার যে রাস্তা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পেইনকে বাতলে দিয়েছিলো পেইনের কাণ্ডে মনে হলো সেটাই যেন তাঁদের ব্যর্থতা।
– ক্রিকবাজের ছায়া অবলম্বনে