দু:স্বপ্ন হয়ে স্বপ্নের পতন

তারকাদের ব্যর্থতা, ডিফেন্ডারদের বাজে পারফর্মেন্স কিংবা একান্তই সোলশায়ারের ট্যাকটিকাল সমস্যা। পেছনের প্রভাবক যাই হোক, সোলশায়ারের রেড ডেভিল অধ্যায়ের আপাতত পরিসমাপ্তি। হয়ত ভাগ্য তাঁকে হতে দিলো না সেরাদের সেরা কোচ কিংবা অন্যকোন কারণ। তবু ওল্ড ট্রাফোর্ড দ্য থিয়েটার অব ড্রিমের ডাগআউটে ফিরে আসার স্বপ্নকে হয়ত মলিন হতে দেবেন না সোলশায়ার। হয়ত ফিরবেন তিনি কিংবা কখনোই ফিরবেন না!

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হওয়া কি আপনার স্বপ্ন? ২০১৬ সালে এমন এক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন সদ্য সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গুনার সোলশায়ার। এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘ ইউনাটেডের হয়ে খেলা যত খেলোয়াড় কোচিং পেশায় এসেছেন তাঁদের সকলের এটা চূড়ান্ত স্বপ্ন।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পরাশক্তি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কতশত তারকা খেলোয়াড় যে উপহার দিয়েছে এই ইউনাইটেড। ফুটবলের নান্দনিকতায় মুগ্ধ করেছে সমর্থকদের কিংবা হতাশার অশ্রু গঙ্গায় ভাসিয়েছে। এ ক্লাবের প্রতিটা খেলোয়াড় স্বপ্ন দেখেন ক্লাবের হয়ে ভিন্নভাবে প্রতিনিধিত্ব করবার। হয়ত ম্যানেজার নয়ত কোচ বেশে।

এমনই স্বপ্ন ওলে গুনার দেখেছিলেন, অকপটে স্বীকারও করেছেন বহুবার। কিন্তু ঠিক সমীকরণের বাম পার্শ্ব মিলছিলো না ডান পার্শ্বের সাথে। ২০০৮ সাল থেকে কোচের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করা ওলে অধীর অপেক্ষায় বসে রইলেন একদিন হবেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ। নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্যে মোলডে, কার্ডিফ সিটির মতো দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

২০১৮ সালে ওলে গুনার সোলশায়ার পেয়ে যান নিজের স্বপ্ন পূরণের রাস্তা। তৎকালীন কোচ হোসে মরিনহোকে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ, এতে পরবর্তি কোচ হিসেবে সোলশায়ারের নাম শোনা যেতে থাকে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে। ঘটনাটা ঠিক ঘটেও। গুজব থেকে সত্য হয়, সোলশায়ার ইউনাইটেডের দায়িত্ব পায়।

সোলশায়ার ছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের একনিষ্ঠ শিষ্য। শুধু সোলশায়ার নন স্যার ফার্গুসনের ক্যারিসম্যাটিক কোচিং দক্ষতার ভক্ত নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর তাঁর অধীনে খেলা খেলোয়াড়েরা তাঁর দেওয়া দীক্ষাই যেন ছড়িয়ে দিতে চান পরবর্তি প্রজন্মে। সোলশায়ারও ছিল ঠিক তেমনই ইচ্ছে।

ওলে গুনার তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে একবার বলেছিলেন, ‘আমি চাই আমার দল ফুটবল খেলুক সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনের সাথে, যেমনটা আমি শিখেছিলাম স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কাছে।’ ২০১৮ সালে যখন সোলশায়ার মৌসুমের মধ্যভাগে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন তিনি স্যার ফার্গুসনের দীক্ষা হয়ত ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের মাঝে।

সেই থেকে ওলে গুনার আর ইউনাইটেড জুঁটি ভালই পার করছিলো দিন। ২০১৯/২০ ও ২০২০/২২১ মৌসুমে ইউনাটেড ছিল যথাক্রমে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের তৃতীয় ও দ্বিতীয় স্থানে। উর্ধ্বমুখি ফলাফল আসা জোগাচ্ছিল ভক্ত-সমর্থকদের ২০২১/২২ মৌসুমে শিরোপা জয়ের। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর রেড ডেভিল শিবিরে প্রত্যাবর্তন সেই আশার আগুনে কাজ করেছে ঘিঁ ঢালার মতো।

কিন্তু ঠিক কি যে হল সোলশায়ারের! দলকে হয়ত স্যার ফার্গুসনের দীক্ষা শিখিয়ে উঠতে পারছিলেন না। মৌসুমের শুরু থেকেই হোচট খাচ্ছে দল। অন্য পরাশক্তিদের পাশপাশি অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দল সবাই পয়েন্ট কেড়ে নিচ্ছিলো ইউনাইটেডের কাছ থেকে। ওলে গুনার সোলশায়ার হলেন বরখাস্ত। কারণ হিসেবে শেষ ছয় ম্যাচে মাত্র চার পয়েন্ট অর্জন করতে পারাটাই হতে পারে অন্যতম উদাহরণ।

সোলশায়ার যখন ইউনাইটেডের দায়িত্ব নেন তখন তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন নিজের সেরাটা নিঙড়ে দিয়ে ইউনাইটেডকে ফেরাবেন শিরোপা দৌড়ে। তিনি হয়ত পেরেছিলেন শেষ দুই মৌসুমে। তবে খেই হারিয়ে ফেললেন। রেড ডেভিলদের বর্তমান লিগ অবস্থান সপ্তম। অবনমন কারোই কাম্য নয়। অগ্যতা ওলে গুনার সোলশায়ারকে ছাড়তে হচ্ছে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ডাগআউট।

তাঁর বরখাস্তের পেছনে অনেকেই ধারণা করছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। বর্তমানে পারফর্মেন্সে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন রোনালদো। তাঁর আচরণে তা স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছে গত কয়েক ম্যাচই। তাছাড়া ফর্মের তুঙ্গে থাকা আরেক তারকা ব্রুনো ফার্নাদেজরও ঠিকঠাক জ্বলে উঠতে না পারাও কিছুটা বাধ্য করেছে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষকে তাঁদের কিংবদন্তি খেলোয়াড়কে কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে।

তারকাদের ব্যর্থতা, ডিফেন্ডারদের বাজে পারফর্মেন্স কিংবা একান্তই সোলশায়ারের ট্যাকটিকাল সমস্যা। পেছনের প্রভাবক যাই হোক, সোলশায়ারের রেড ডেভিল অধ্যায়ের আপাতত পরিসমাপ্তি। হয়ত ভাগ্য তাঁকে হতে দিলো না সেরাদের সেরা কোচ কিংবা অন্যকোন কারণ। তবু ওল্ড ট্রাফোর্ড দ্য থিয়েটার অব ড্রিমের ডাগআউটে ফিরে আসার স্বপ্নকে হয়ত মলিন হতে দেবেন না সোলশায়ার। হয়ত ফিরবেন তিনি কিংবা কখনোই ফিরবেন না!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...