বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম। এমন না তামিম সেসময় রান পাচ্ছিলেন না। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একজন ওপেনারের কাছ থেকে যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আমরা আশা করি সেটা মেটাতে পারছিলেন না তিনি। ফ্লায়িং স্টার্ট এনে দিবেন এমন একজন ওপেনার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু আমরা এমন একজনকে পেলাম যার স্ট্রাইক রেট একশো পেরোতেও করতে হয় কঠিন সংগ্রাম।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের আসলে ঠিক পরিকল্পনাটা কী? সেটা বোঝা মুশকিল। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে শোনা যায় নানারকম খবর। যেমন দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর হঠাৎই শোনা গেল পারভেজ হোসেন ইমনকে শেষ ম্যাচের জন্য দলে ডেকেছেন নির্বাচকরা। আরেক ওপেনার সাইফ হাসানকে পাঠিয়ে দেয়া হলো চট্টগ্রামে টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে।
ফলে বোঝা যাচ্ছিল তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন পারভেজ ইমন। নাহলে হুট করে জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলতে থাকা একজন ব্যাটসম্যানকে কেনই বা ডাকা হবে। তবে মাঠে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। আজ ওপেন করলেন নাঈম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। গত ৬ ম্যাচে ৫১ রান করা নাঈমে জায়গা যেনো প্রশ্নাতীত হয়ে উঠেছে।
গত একবছরে নাঈম বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে নিয়মিত মুখ। নাঈম রান করেছেন সেটাও সত্য। তবে টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংটা ঠিক কখনোই করতে পারেননি তিনি। ৩২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তাঁর স্ট্রাইকরেট মাত্র ১০৫। আজও মিরপুরে দেখা গেল মন্থর এক ইনিংস। ৫০ টি বল খেলে করেছেন মাত্র ৪৭ রান। ইনিংসের প্রায় অর্ধেক বল খেলে ফেলেও স্ট্রাইকরেট ১০০ ছুতে পারেননি তিনি। তিনি একাই খেলেছেন ২১ টি ডট বল। ফলে প্রশ্ন তোলাই যে নাঈমের এই ইনিংসগুলো আদৌ দলের কোন উপকার করে কিনা।
ওদিকে সিরিজ শুরুর আগেও শোনা যাচ্ছিল ইমন দলে ডাক পাচ্ছেন। তবে শেষ মুহূর্তে সাইফ হাসান যোগ হলেন ডান হাতি বলে। স্বাভাবিক ভাবেই দুই ম্যাচেই সাইফ ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর আবার তাঁকে সিরিজের মাঝপথেই চিটাগাং পাঠিয়ে দেয়া হলো। এমন এলোমেলো সিদ্ধান্তে তরুণ ক্রিকেটারদের উপরও তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ।
ওদিকে দ্বিতীয় ম্যাচের পর ডাকা হয়েছিল পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিকেও। মুস্তাফিজুর ও শরিফুলের ইনজুরির কারণেই দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। বলা হচ্ছিল তিনিও খেলবেন শেষ ম্যাচে। তবে আজ একাদশে দেখা গেল শহিদুলকে। ওদিকে টানা ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তাসকিন আহমেদ। আজ কিছু না পাওয়ার ম্যাচে হয়তো চাইলেই তাঁকে বিশ্রাম দেয়া যেত। তাসকিনও যদি ইনজুরিতে পড়ে যায় তাহলে দুই টেস্ট ম্যাচে আবার পেসার খুঁজে পাওয়াটাই হবে আরেক সংগ্রাম।
এছাড়া রিয়াদের অধিনায়কত্বও এই সিরিজে ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকায় লেগ স্পিনার আনেননি বল। ব্যাট হাতে নিজের পারফর্মেন্সও খুব একটা সুখকর না রিয়াদের জন্য। সিরিজের তিন ম্যাচ মিলে করেছেন মোটে ৩১ রান। শেষ দিকে ব্যাটিং করেও স্ট্রাইকরেট ৮০ ছুঁই ছুঁই। ফলে তাঁর ব্যাটেও নেই পুরানো সেই ধাঁর।
ছয়-সাতে ব্যাট করার জন্য একজন স্লগার কিংবা একজন রিস্ট স্পিনারের আক্ষেপও মিটছে না। বিপ্লব দলে থাকলেও তাঁর উপর যেনো ভরসা করতে পারছেন না অধিনায়ক। এছাড়া ফিল্ডিং নিয়ে দুশ্চিন্তাও যাচ্ছেনা। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে সহজ ক্যাচ ফেলে দিচ্ছেন ক্রিকেটাররা। সবমিলিয়ে মাঠে একটা দল হিসেবে খেলতে দেখা যাচ্ছেনা।
টিম ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়ক সবাই যেনো বিচ্ছিন্ন ভাবে পরিকল্পনা করছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নেই। নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট তো দূরের কথা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে মিছিল সেখানে তাল মিলিয়ে হাটতেই পারছেন বাংলাদেশ দল। দ্রুত তাল মেলাতে না পারলে, হোঁচট খেলে পদদলিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।